ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

কুড়িগ্রামে চরাঞ্চলে বন্যা কবলিতদের চরম দুর্ভোগ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩১, ৩ জুলাই ২০২৪  
কুড়িগ্রামে চরাঞ্চলে বন্যা কবলিতদের চরম দুর্ভোগ

কুড়িগ্রামে বন্যা কবলিত চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগে দিন কাটছে। চরে বসতি গড়া পরিবারগুলোর বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নৌকা ও ঘরের মাচান উঁচু করে কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন তারা।

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চর বালাডোবা ও মুসার চর ঘুরে দেখা গেছে, সেখানকার প্রায় শতাধিক পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারের কেউ নৌকায় আবার কেউ ঘরের ভিতর উঁচু করা মাচানে বসবাস করছেন। তাদের পালিত গরুসহ অন্যান্য গবাদি পশুগুলো রাখা হয়েছে ঘরের ভিতর উঁচু করা জায়গায়। আবার অনেক পরিবার তাদের গবাদি পশু নৌকায় করে উঁচু জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন।

আরো পড়ুন:

বেগমগঞ্জের পূর্ববালাডোবার চরে ৫ দিন আগে ভূমিষ্ঠ হওয়া কন্যা সন্তান নিয়ে নৌকায় অবস্থান করছেন মনছুর আলীর স্ত্রী মাজেদা বেগম। সঙ্গে রয়েছে আরেক শিশু সন্তানসহ প্রতিবেশি এক নারী। মাজেদা বেগম জানান, সন্তান জন্ম দেওয়ার দুই দিন পর বাড়িঘরে পানি উঠেছে। সন্তানসহ উঁচু জায়গায় আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যাবেন।

উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বালাডোবা চরের মনসুর আলী জানান, পানি বাড়ছে। ঘরের ভিতর এক কোমর পানি। আর থাকা যাচ্ছে না। গরুসহ অন্যান্য জিনিসপত্র নৌকায় করে উঁচু জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি।

বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মতিয়ার রহমান জানান, খুব কষ্ট, যাওয়ার জায়গা নাই। পার্শ্ববর্তী চর ভেঙে এই চরে এসেছি। ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ায় ঘরে পানি উঠেছে। কোনো রকমে থাকলেও পানি আর একটু বাড়লে থাকার উপায় থাকবে না।

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হয়ে পড়েছে নদ-নদীর অববাহিকার চর ও নিম্নাঞ্চল। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ১৫ হাজারের বেশি পরিবার।

উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চরাঞ্চলের মতো তলিয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার মশালের চরসহ নতুন করে জেগে ওঠা চরাঞ্চলগুলো। এসব চরের মানুষজন পরিবার পরিজন নিয়ে অবস্থান করছেন নৌকায় কিংবা ঘরের উঁচু মাচানে।

বন্যা কবলিত এসব পরিবারের মানুষজন জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলেও গত তিন দিন ধরে তাদের ঘরে পানি প্রবেশ করায় খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জাীবন কাটাচ্ছেন তারা। পাশাপাশি গবাদি পশু নিয়েও চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। চরাঞ্চলের বন্যা কবলিত অনেক পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে অবস্থান নিয়েছেন পার্শ্ববর্তী উঁচু স্থানে।

অন্যদিকে নদ-নদীর অববাহিকার সড়ক তলিয়ে থাকায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। চরাঞ্চলের অনেক বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় দুর্ভোগে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রামের তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বন্যা কবলিতদের জন্য ১ শ’ ৭৬ মেট্রিক টন চাল ও ১০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।

সৈকত/ফয়সাল

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়