ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৪ ১৪৩১

আত্মগোপনে সিরাজগঞ্জের ৬ এমপিসহ আ. লীগ নেতারা

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৪৯, ১০ আগস্ট ২০২৪  
আত্মগোপনে সিরাজগঞ্জের ৬ এমপিসহ আ. লীগ নেতারা

ছবি: সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশত্যাগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। এ ঘটনায় কঠিন বিপদে পড়েছেন সিরাজগঞ্জের ছয়টি আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।  তারা বর্তমানে কে কোথায় আছেন কেউ জানে না।

প্রাণভয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন তারা। এতে অভিভাবকশূন্য সংকটময় এ দিনগুলোতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শীর্ষস্থানীয় নেতারা নিজের মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকও বন্ধ রেখেছেন। এমনকি সংসদ সদস্য ও নেতাদের বাড়িতে খোঁজ নিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে দলীয় নেতাদের বাড়িতে। এ হামলা ও অগ্নিসংযোগ থেকে বাদ যায়নি ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও।

আত্মগোপনে চলে যাওয়া সাবেক সংসদ সদস্যরা হলেন- সিরাজগঞ্জ-১ (কাজীপুর-সদরের একাংশ) প্রয়াত সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ছেলে তানভীর শাকিল জয়, সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) ড. জান্নাত আরা হেনরি, সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ) ডা. আব্দুল আজিজ, সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) শফিকুল ইসলাম শফি, সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আব্দুল মমিন মণ্ডল ও সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের চয়ন ইসলাম।

শনিবার (১০ আগস্ট) জেলার ছয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। এ কারণে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

চলমান এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের ছয় জন নেতাকর্মীকে হত্যা, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটছে। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরাও প্রাণভয়ে বাড়ি ছেড়ে গাঢাকা দিয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত (৪ আগস্ট) সিরাজগঞ্জ শহরে শিক্ষার্থীদের ওপর আওয়ামী লীগের হামলা ও গুলিবর্ষণের পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পুরো জেলা। এতে শহর যুবদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রঞ্জু খান (৩৮), পৌর শহরের গয়লা মহল্লার আসু মুন্সীর ছেলে যুবদলের সদস্য আব্দুল লতিফ (২৫) ও একই মহল্লার গঞ্জের আলীর ছেলে ছাত্রদলের সদস্য সুমন সেখ (১৮) নিহত হয়। এতে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা ড. জান্নাত আরা হেনরীর বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। একই সঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত মুন্নার বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিযোগ করে। পরে এদিন রাতে জান্নাত আরা হেনরীর বাড়ি থেকে ছাত্রলীগ কর্মী শাহীন শেখ (১৮) গজারিয়া গ্রামের অটোরিকশা চালক জাহাঙ্গীর আলম (৪৬) এর কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়।

একই দিনে জেলার রায়গঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাংবাদিকসহ ছয় জন এবং এনায়েতপুর থানায় ১৩ জন পুলিশ নিহত হয়। পরদিন আরও দুই পুলিশ সদস্য চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় মারা যান। এতে চলমান আন্দোলনে সিরাজগঞ্জে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সঙ্গে জেলার থানা, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে।

স্থানীয় সাধারণ মানুষেরা জানান, আওয়ামী লীগের কিছু সংসদ সদস্য ও অনেক নেতা সাধারণ মানুষকে কোনো সময় মানুষ মনে করেননি। তাদের ব্যবহারে সাধারণ মানুষ ক্ষুদ্ধ। তারা ১৫ বছর অতিবাহিত করে টাকার পাহাড় বানিয়ে এখন আত্মগোপনে গেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী জানান, এমপি বা জেলার শীর্ষ নেতারা কে কোথায় আছেন কেউ জানে না। কারো সঙ্গে যোগাযোগও নেই। সংসদ সদস্য ও জেলার নেতারাই নন, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারাও ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। তবে দেশের পরিস্থিতি ভালো হলে কেন্দ্রীয় নির্দেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম সচল রাখবেন বলে জানিয়েছেন তারা।

অদিত্য রাসেল/সনি


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়