ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

যে কারণে বিবিসির প্রভাবশালী নারীর তালিকায় রিকতা আখতার

বাদশাহ্ সৈকত, কুড়িগ্রাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৩, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৫:১৪, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
যে কারণে বিবিসির প্রভাবশালী নারীর তালিকায় রিকতা আখতার

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির ২০২৪ সালের অনুপ্রেরণা জাগানো ও প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন কুড়িগ্রামের রিকতা আখতার বানু। নিজের প্রতিবন্ধী সন্তানসহ স্থানীয় প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য জমি বিক্রি ও স্বামীর দান করা জমিতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে এ তালিকায় উঠে আসেন তিনি।

রিকতা আখতার বানু কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়নের রমনা সরকারবাড়ি গ্রামের আবু তারিক আলমের স্ত্রী ও চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র নার্স।

আরো পড়ুন:

রিতা আখতার জানান, প্রায় ২০ বছর আগে এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি। পরে তার নাম রাখা হয় তানভীন দৃষ্টিমনি। শিশুটি একটু বড় হওয়ার পর রিকতা বুঝতে পারেন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন হিসেবে জন্ম নিয়েছে সে।

দৃষ্টিমনির বয়স যখন ৫ বছর, তখন তাকে স্কুলে ভর্তি করাতে যান রিকতা। কিন্তু, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে ভর্তি নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এরপরই প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় গড়ার জেদ যাগে রিকতার। স্বপ্ন দেখেন, যেখানে নিজের সন্তানসহ স্থানীয় প্রতিবন্ধী শিশুরা বিশেষ শিক্ষার মাধ্যমে বেড়ে উঠতে পারবে।

তিনি জানান, ২০০৯ সালে স্বামীর সঙ্গে আলোচনা করে তার দান করা জমিতে নিজের জমি বিক্রি করা টাকায় প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় গড়ে তোলেন রিকতা। এরপর অনেক ত্যাগ স্বীকার ও সংগ্রামের পর ধীরে ধীরে নিজের নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত করে তোলেন তিনি।

বিবিসির প্রভাবশালী নারীর তালিকায় উঠে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে রিকতা আখতার বলেন, ‘‘এ অর্জন আমার একার নয়। এটা আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবক ও সহকর্মী সবার। তালিকা প্রকাশের পর সারা দেশ থেকে ফোনে অভিনন্দন জানানো হচ্ছে। আমি মনে করি, এটা আমার ও দেশবাসীর জন্য বড় গর্বের।’’

রিক্তা আখতার বানু প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহিন শাহ বলেন, ‘‘দীর্ঘ সংগ্রাম ও ত্যাগের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি গড়ে তুলেছেন রিক্তা আখতার বানু। তার এই অর্জনে আমরা বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকরা উচ্ছ্বাসিত।’’

অভিভাবকরা জানান, প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় না হলে আমরা আমাদের সন্তানদের পড়াতে পারতাম না। রিক্তা আখতার বানু প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি আমাদের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সন্তানদের আশা ও ভরসার প্রতীক। রিক্তা আখতার বানু সম্মানিত হয়েছেন এজন্য আমরা সবাই খুশি।

চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক বলেন, ‘‘শুরু থেকেই রিক্তা আখতার বানু প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের পাশে ছিল জেলা প্রশাসন। আগামীতেও উপজেলা প্রশাসন তার পাশে থাকবে।’’

২০০৯ সালে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা এলাকায় রিক্তা আখতার বানু প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় ৬৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৯৪ জন। ২০২০ সালে এমপিওভুক্ত হওয়া বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকের সংখ্যা ২১ জন।

চলতি বছরের ৩ ডিসেম্বর বিবিসির ২০২৪ সালের অনুপ্রেরণা জাগানো ও প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় বাংলাদেশি একমাত্র নারী হিসেবে নাম উঠে আসে রিক্তা আখতার বানুর নাম।

ঢাকা/রাজীব

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়