ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দর

নাব্য সংকটে ভিড়ছে না বড় জাহাজ, লোকসানে ব্যবসায়ীরা

অদিত্য রাসেল, সিরাজগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫২, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ১৩:৩৬, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নাব্য সংকটে ভিড়ছে না বড় জাহাজ, লোকসানে ব্যবসায়ীরা

নদীর নাব্য সংকটে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী নৌবন্দরটিতে বড় জাহাজ ভিড়তে পারছে না

নাব্য সংকটের কারণে শুষ্ক মৌসুমে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি নৌ বন্দরে সরাসরি পণ্যবাহী বড় জাহাজ ভিড়তে পারছে না। উত্তরবঙ্গে কৃষি উপকরণ ও জ্বালানি সরবরাহের প্রাণকেন্দ্র এই নদীবন্দরটিতে দূর থেকে ছোট জাহাজে পণ্য আনতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় লোকসান গুণতে হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।

বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, আশির দশকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় নির্মিত হয় এই নদী বন্দরটি। প্রথম কয়েক দশক সার, তেল, কয়লাসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে কার্গো জাহাজ ভিড়ত বন্দরে। ফলে সরগরম থাকত নদী বন্দরটি। 

আরো পড়ুন:

উত্তরবঙ্গের বৃহৎ বাঘাবাড়ি নৌবন্দের মোংলা, খুলনা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন নৌবন্দর থেকে সার, কয়লা, পাথর, সিমেন্ট, জ্বালানি তেল ও বিভিন্ন পণ্য নিয়ে নৌযান আসে। তবে, শুষ্ক মৌসুমে চরম নাব্য সংকটে পড়ে বন্দরটি। এবারো দেখা দিয়েছে একই সমস্যা। এ কারণে বড় বড় জাহাজ সরাসরি বন্দরে ভিড়তে পারছে না। 

জাহাজের চালক ও ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে সার, সিমেন্টের কাঁচামাল, কয়লা, পাথর, তেলসহ বিভিন্ন পণ্য জাহাজে করে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে আসে। বড় জাহাজগুলো এ বন্দরে আসতে নদীতে ১০-১২ ফুট পানির গভীরতা প্রয়োজন। অথচ বর্তমানে এই বন্দরের চ্যানেলে রয়েছে ৫ থেকে ৭ ফুট পানি। ফলে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে ভিড়তে না পারা পণ্যবাহী বড় বড় জাহাজ যাচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা যশোরের নওয়াপাড়া, ফরিদপুরের দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটসহ অন্য কয়েকটি স্থানে। পরে সেখান থেকে লাইটার বা ছোট জাহাজে করে পণ্য আনতে হচ্ছে বাঘাবাড়ী বন্দরে। এতে বেড়েছে পরিবহন খরচ। 

তারা আরো জানান, এই নৌপথের বিভিন্ন স্থানে ডুবোচর জেগে উঠেছে। পলি জমে সরু হয়েছে নৌ চ্যানেল। জাহাজের চালক ও ব্যবসায়ীরা দ্রুত এই নৌ চ্যানেল খননের দাবি জানিয়েছেন।

বাঘাবাড়ী নদী বন্দরের শ্রমিক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “এক সময় এই বন্দরে ৫০০-৬০০ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করত। বর্তমানে কাজ না থাকায় অনেকেই অন্য পেশায় ঝুঁকেছেন। এখন ১০০-১৫০ জন শ্রমিক থাকলেও তাদের আয় যথেষ্ট নয়। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুম আসলেই চরম নাব্য সংকট দেখা দেয় বন্দরের নৌ চ্যানেলে। পণ্য নিয়ে বড় জাহাজগুলো বন্দরে ভিড়তে পারছে না। ফলে ছোট ছোট লাইটার জাহাজে করে পণ্য বন্দরে আনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।” 

মোংলা থেকে বন্দরে আসা সিমেন্টবাহী জাহাজের সুকানি আব্দুল আলিম বলেন, “বাঘাবাড়ি বন্দরের যে নৌ চ্যানেল রয়েছে সেখানে পর্যাপ্ত গভীরতা নেই। যে কারণে বড় জাহাজগুলো সরাসরি বন্দরে আনা যায় না। দূর থেকে ছোট জাহাজে করে পণ্য আনতে হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।”

জাহাজের মাস্টার ইউসুফ মোল্লা বলেন, “নাব্য সংকটের জন্য বাঘাবাড়ী বন্দরে ভিড়তে পারছে না জাহাজ। নদীতে ড্রেজিং (খনন) করে গভীরতা বাড়ানো প্রয়োজন। যাতে বড় জাহাজ বাঘাবাড়ী বন্দরে ভিড়তে পারে। এতে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা উপকৃত হবেন।”

বাঘাবাড়ীতে সার গুদামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল আনসারী জানান, বর্তমানের সার আনা হচ্ছে নওয়াপাড়া বন্দর থেকে। তবে সেগুলো সময়মতো পৌঁছায় না বলে অভিযোগ করেছেন এই কর্মকর্তা। জেলায় ১০ হাজার ২৮১ টন সারের চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে মজুত রয়েছে ৭ হাজার ৭৩৪ টন সার। শুধু এই সার না, শুষ্ক মৌসুমে বাঘাবাড়ী বন্দরে তেল পরিবহনেও সংকট তৈরি হয়।

বাঘাবাড়ীতে অবস্থিত যমুনা তেল ডিপোর কর্মকর্তা আবুল ফজল বলেন, “স্বাভাবিক সময়ে তেলবাহী জাহাজগুলো অন্তত ১০-১২ লাখ লিটার তেল পরিবহন করে। শুষ্ক মৌসুমে নদীপথে ঝুঁঁকি থাকায় তাদের ৮ থেকে ৯ লাখ লিটার তেল পরিবহন করতে হচ্ছে। বড়াল নদীর চ্যানেলটি উন্নত করা হলে পূর্ণ ক্ষমতার জাহাজ বন্দরে এনে তেল খালাস করা সম্ভব হবে।”

নৌযান লেবার অ্যাসোসিয়েশন বাঘাবাড়ী ঘাট শাখার যুগ্ম-সম্পাদক আবদুল ওয়াহাব মাস্টার বলেন, “উত্তরাঞ্চলের চাহিদার ৯০ শতাংশ জ্বালানি তেল ও রাসায়নিক সার বাঘাবাড়ী বন্দর থেকে সরবরাহ করা হয়। আবার উত্তরাঞ্চল থেকে বাঘাবাড়ী বন্দরের মাধ্যমে চাল, গমসহ অন্যান্য পণ্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। এ নৌপথের বিভিন্ন স্থানে নাব্য সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। যে কারণে বড় জাহাজগুলো সরাসরি বাঘাবাড়ী বন্দরে ভিড়তে পারছে না।”

বাঘাবাড়ী ঘাটে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিআইডব্লিউটিএ-এর সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, “বাঘাবাড়ী-আরিচা নৌপথ দ্বিতীয় শ্রেণির। এই পথে ৭ ফুট পানি থাকলে জাহাজ চলাচল করতে পারে। বর্তমান এই পথে সাড়ে ৯ ফুট পানি রয়েছে। জাহাজ চলাচলে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু ব্যবসায়ীরা কখনো কখনো বড় জাহাজে অতিরিক্ত মালপত্র নিয়ে বাঘাবাড়ী বন্দরে আসতে চান। বড় জাহাজ চলাচল করে প্রথম শ্রেণির নৌপথে। দ্বিতীয় শ্রেণির নৌপথে প্রথম শ্রেণির জাহাজ আসতে পারে না।”

তিনি আরো বলেন, “প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাঘাবাড়ি বন্দরটি দ্বিতীয় শ্রেণি ছিল। এই বন্দরটিকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করতে একটি মেগা প্রকল্পের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যা ইতোমধ্যে জমা দেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে বড়া জাহাজ চলাচলের সমস্যা দূর হবে।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়