ঢাকা     শনিবার   ১৭ মে ২০২৫ ||  জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩২

যে জীবন বহন করাই দায়

সাইমুম সাব্বির শোভন, জামালপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:২৭, ২৫ এপ্রিল ২০২৫   আপডেট: ২২:৪০, ২৫ এপ্রিল ২০২৫
যে জীবন বহন করাই দায়

ফাতেমা বেগম

জীবনের ভার আর যেন সইতে পারছেন না ৭০ বছর বয়সী ফাতেমা বেগম। পা দুটি নিষ্ক্রিয়, একটি হাত ভাঙা। অপর হাতে টানিয়ে রাখা দড়ি ধরে রাখতে হয় শারীরিক ভারসাম্য। দীর্ঘ দুই বছর ধরে জীর্ণ ঘরে এভাবেই রয়েছেন শেষ যাত্রার অপেক্ষায়। মনে হচ্ছে জীবন এখন তার কাছে শুধুই একটি বোঝা। 

পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ নেই তার। স্বামী মহির সকল মায়া ত্যাগ করে ওপারে চলে গেছেন কুড়ি বছর আগে। সন্তানহীন ফাতেমা এখন ঠাঁই নিয়েছেন জামালপুর পৌরসভার ছনকান্দা হরিপুর ঈদগাহ মাঠে পাশেই কড়ই গাছের নিচে একটি ঝুপড়ি ঘরে। পরের জমিতে, নিরাশ্রয় জীবনের নিঃশব্দ সাক্ষী হয়ে।

স্থানীয়রা জানান- ফাতেমা বেগমের স্বামী-সন্তান নেই। আগে লোকজনের কাছে টাকা-পয়সা চেয়ে কোনো রকমে জীবন চলছিল। দুই বছর ধরে পায়ে ও এক হাতে শক্তি পায় না। এখন ছোট একটি ঝুপড়ি ঘরে থাকেন। বিছানা নেই, তাই মাটিতেই থাকতে হয়। যেখানে থাকেন সেখান থেকে নড়াচড়াও করতে পারেন না। আশপাশের কেউ যদি খাবার দিয়ে যায়, তাহলে খেতে পারেন। না দিলে উপোস থাকেন। তাকে এখান থেকে উদ্ধার করে কোন বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এলে হয়তো শেষ জীবনটা একটু ভালো থাকতে পারবেন।

ফাতেমা বেগমের প্রতিবেশী মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘‘আমরা তাকে মাসে দুয়েকবার গোসল করাই। প্রতিদিন গোসল করানো সম্ভব না। তিনি ঘরের ভেতরেই পায়খানা-প্রস্রাব করেন। মাসে একবার এসব পরিষ্কার করানো হয়। এতে তিনি দিন দিন আরো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন।”

ফাতেমা বেগমের আরেক প্রতিবেশী কল্পনা বেগম বলেন, “উনার কষ্ট আমাদের সহ্য হয় না। আমরা তাকে যতটা পারি সাহায্য করি। কিন্তু আমরাও তো গরিব। আমাদের তো বেশি সাধ্য নাই।”

প্রতিবেশীর দয়ার থালাতেই ক্ষুধা মেটে ফাতেমার, কিন্তু তার চিকিৎসার ভার নেওয়া তাদের সাধ্যের বাইরে। তাই এখন ভরসা সমাজের হৃদয়বান মানুষ ও সরকারের সহানুভূতি।

মো. শফিকুল ইসলাম নামে ফাতেমা বেগমের একজন প্রতিবেশী বলেন, “এই সমাজের এত ধনী লোক। তাদের নজরে ফাতেমা বেগম আসে না। ধনীদের উচিত ফাতেমা বেগমের পাশে দাঁড়ানো। এছাড়া সরকারের সুদৃষ্টিও প্রয়োজন।”

বিষয়টি নজরে আনার সাথে সাথে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা নিয়ে ফাতেমা বেগমের দোরগোড়ায় ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিন্নাত শহীদ পিংকি। এছাড়াও তার চিকিৎসা ও দেখভালের দায়িত্ব নেন নিজের কাঁধে।

জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিন্নাত শহীদ পিংকি বলেন, “আপনার মাধ্যমে খবরটি পাওয়ার সাথে সাথে আমি এখানে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা নিয়ে এসেছি। তবে এটি তার জন্য পর্যাপ্ত নয়। আমি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের সাথে কথা বলে ফাতেমা বেগমের চিকিৎসা ও দেখভালের স্থায়ী একটি ব্যবস্থা করব। তাকে যদি ভালো একটি বৃদ্ধাশ্রমে দেওয়া যায়, তাহলে মনে হয় সবচেয়ে ভালো হবে। এই বিষয়ে আমি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করব।”

ঢাকা/এস


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়