গৃহপরিচারিকার কাজ করছেন জুলাই আন্দোলনে শহীদ জাকিরের স্ত্রী
পটুয়াখালী (উপকূল) প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
জিদনী ও সালমা বেগম
জুলাই আন্দোলনে শহীদ জাকির হোসেনের স্ত্রী সালমা বেগম জীবনের তাগিদে গৃহপরিচারিকার কাজ করছেন। সামান্য আয়ে কোনোমতে চলছে মা-মেয়ের সংসার। জীবন সংগ্রামে বেঁচে থাকার জন্য সালমা বেগমের স্থায়ী কর্মসংস্থানের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জাকির হোসেনের বাড়ি পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামে। বাবা মৃত মান্নান খান। তিনি ঢাকায় পোশাক তৈরির প্রতিষ্ঠানে সেলাই মেশিন অপারেটরের কাজ করতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই রায়েরবাগে বোনের বাসায় দুপুরের খাবার শেষে কর্মস্থল কামরাঙ্গীর চরে ফেরার পথে শনির আখরায় গুলিবিদ্ধ হন। ৫ দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৪ জুলাই মারা যান। পরে তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি বড় গোপালদীতে দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় পরিবারের একমাত্র উপর্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন জাকিরের স্ত্রী সালমা ও তার অষ্টম শ্রেণীপড়ুয়া কন্যা জিদনী।
জাকিরের মৃত্যুর পর জুলাই ফাউন্ডেশন এবং জামায়াত ও বিএনপি থেকে তাদের অর্থ সহায়তা করা হয়েছে। কিন্তু ধার দেনা মেটাতেই সিংহভাগ খরচ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে পরিবার।
এরপর থেকেই সংসারের খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সালমা বেগম। বিশেষ করে একমাত্র মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি শঙ্কিত। অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে বাধ্য হয়ে তিনি গৃহপরিচারিকার কাজ বেছে নিয়েছেন। স্থানীয় একটি মহিলা মাদ্রাসায় ২ হাজার টাকা বেতনে কাজ করছেন তিনি।
সালমা বেগম বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘‘স্বামী মারা যাওয়ার পর আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। কিছু টাকা পেয়েছিলাম। ধার দেনা শোধ করার পর অনেকটাই খরচ হয়ে গেছে। মেয়ের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে মাদ্রাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ নিয়েছি। তিন বেলা রান্না করে দেওয়ার বিনিময়ে যা পাই এ দিয়ে সংসার চলে না। সরকার যদি আমাকে একটি স্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে মেয়েকে নিয়ে অন্তত খেয়েপরে বেঁচে থাকতে পারতাম।’’
পৈত্রিক ভিটা ছাড়া অর্থসম্পদ রেখে যাননি জাকির হোসেন। তার আরো দুই ভাই রয়েছে। ফলে বসতঘর ভাগ হলে যে জায়গাটুকু থাকবে তাতে শুধু মাথাগোজার ঠাঁই হবে বলে জানান সালমা বেগম।
‘‘আমি আমার বাবার হত্যাকারীদের বিচার চাই,’’ উল্লেখ করে জিদনী (১৪) বলেন, ‘‘আমি দমশিনা সরকারী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি। মা ২ হাজার টাকা বেতনে কাজ করে সংসার আর আমার পড়াশোরার খরচ চালাচ্ছে। আরেকটু বড় হলে কীভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যাবো জানি না। অথচ আজ বাবা বেঁচে থাকলে আমাকে এ নিয়ে ভাবতে হতো না।’’
বড় গোপালদী গ্রামের ষাটোর্ধ্ব হাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘জাকির ভালো ছেলে ছিল। পৈত্রিক ভিটা ছাড়া সে কিছুই রেখে যেতে পারেনি। এখন পরিবারটি একেবারে অসহায়। পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে সরকারের উচিত তার স্ত্রীকে একটি স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া।’’
একই এলাকার ইসরাত হোসেন বলেন, ‘‘মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে হলেও জাকিরের স্ত্রীকে একটি স্থায়ী কাজ দেয়ার অনুরোধ করছি।’’
দশমিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরতিজা হাসান বলেন, ‘‘জাকিরের স্ত্রীর স্থায়ী কর্মসংস্থানের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এ ছাড়া সরকারী যে কোনো অনুদান আসলে শহীদ পরিবার হিসেবে তারাই অগ্রাধিকার পাবেন।’’
ইমরান//