ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

খুলনা বিভাগে এক সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি ১১৭ ডেঙ্গু রোগী

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৯, ৩ জুলাই ২০২৫   আপডেট: ১৭:১৩, ৩ জুলাই ২০২৫
খুলনা বিভাগে এক সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি ১১৭ ডেঙ্গু রোগী

প্রতি বছর আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু সংক্রমণের মৌসুম ধরা হলেও এ বছর খুলনা বিভাগে জুন-জুলাই মাসেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বাড়ছে

খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এক সপ্তাহে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১১৭ জন। এখনো চিকিৎসাধীন আছেন ৫৭ জন। অনেক রোগীর শরীরে দেখা দিচ্ছে নতুন উপসর্গ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ১০ হাজারের বেশি। ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন ৩৫ জন।

আরো পড়ুন:

প্রতি বছর আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু সংক্রমণের মৌসুম ধরা হলেও এ বছর জুন-জুলাই মাসেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন নতুন নতুন রোগী। 

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগী তানজিলা আক্তার বলেছেন, “জ্বর হওয়ার পর শরীর কাঁপতে থাকে, তারপর বমি শুরু হয়। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, এটা ডেঙ্গু জ্বর। আগে কখনো এমন হয়নি।”

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে তিন দিন আগে বাগেরহাটের শরণখোলা থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়েছেন সোলাইমান মিয়া। তার বোন বলেন, “বড় ভাই ক্ষেত-খামারে কাজ করেন। সেখানে মশার কামড়ে ডেঙ্গু হতে পারে। প্রথমে তাকে শরণখোলা উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। জ্বর না কমায় পরীক্ষা করা হয়। এতে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। পরে খুলনায় নিয়ে আসি।”

আরেক রোগীর স্বজন রফিকুল ইসলাম বলেন, “হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই। আলাদা ব্যবস্থা না থাকলে সবার জন্যই রিস্ক।”

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এবার ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে জ্বরের সঙ্গে ঝাঁকুনি, বমি ও অতিরিক্ত দুর্বলতার উপসর্গ বেশি দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি বরগুনাতে ভয়াবহ আকারে ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এ জেলায় সংরক্ষিত বৃষ্টির পানি থেকে ভয়াবহভাবে ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। একইভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের সাত উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ বৃষ্টির পানি ড্রাম, ডেকচি, ট্যাংক বা অন্যান্য পাত্রে সংরক্ষণ করেন। এসব জায়গা সহজেই এডিস মশার প্রজননস্থলে পরিণত হচ্ছে। ফলে, একই রকম ঝুঁকিতে আছেন এসব উপজেলার মানুষ।

খুলনা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার শঙ্কা থাকলেও সিটি করপোরেশনের কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। আগের তুলনায় মশকনিধন কার্যক্রম জোরদার করার প্রয়োজন হলেও তারা তা আরো কমিয়ে ফেলেছেন। হাসপাতালগুলোর প্রস্তুতিও সন্তোষজনক নয়।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. কাজী দিদারুল ইসলাম বলেছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর আগেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। এ বছর ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে নতুন লক্ষণও দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটা ডেঙ্গু ওয়ান সেরোটাইপ। প্রতিটি সেরোটাইপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আলাদা আলাদা ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু লার্ভিসাইড স্প্রে করে পরিবর্তিত সেরোটাইপ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। এরকম পরিস্থিতিতে আমরা বলছি যে, সমন্বিত ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম প্রয়োজন।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ডা. মো. মজিবুর রহমান বলেছেন, প্রতি জেলায় মশকনিধন কার্যক্রম জোরদার করতে এবং হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা/নূরুজ্জামান/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়