ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৫ জুলাই ২০২৫ ||  আষাঢ় ৩১ ১৪৩২

একে-অপরকে ‘আ.লীগ ঘনিষ্ঠ’ বললেন দুই ভাই

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:০৮, ৫ জুলাই ২০২৫   আপডেট: ২১:১৬, ৫ জুলাই ২০২৫
একে-অপরকে ‘আ.লীগ ঘনিষ্ঠ’ বললেন দুই ভাই

শনিবার সকালে রাজশাহী নগরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করেন মেহেদী হাসান সিজার

রাজশাহীতে দুই ভাই একে-অপরের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তারা একে-অপরের বিরুদ্ধে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তুলেছেন। প্রমাণ হিসেবে বড় ভাই নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতার সঙ্গে ছোট ভাইয়ের ছবি দেখিয়েছেন। ছোট ভাই দেখিয়েছেন তার বড় ভাইকে দেওয়া জেলা আওয়ামী লীগের একটি প্রত্যয়নপত্র।

রাজশাহী নগরের শালবাগান এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসান সিজার ও তার ছোট ভাই মাহমুদ হাসান শিশিল শনিবার (৫ জুলাই) পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তাদের বাবা প্রয়াত মাহবুব আলম রাজশাহীতে একনামে ‘মাহবুব কন্ট্রাক্টর’ নামে পরিচিত। মাহবুব আলমের মৃত্যুর পর তার সম্পত্তির বণ্টন নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধ চলছে।

শিশিল রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি। গত বৃহস্পতিবার তার নেতৃত্বে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা নগরের পদ্মা পারিজাত এলাকার একটি বহুতল ভবন ঘেরাও করেন। প্রচার করা হয়, এই ভবনে নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি অবস্থান করছেন। পরে ষষ্ঠতলার একটি ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালানো হয়। এই ফ্ল্যাটে থাকেন সিজারের শ্বাশুড়ি হাবিবা আক্তার মুক্তা। 

আরো পড়ুন:

সেখানে তল্লাশি চলাকালেই যুবলীগ নেতা রনি জেলা যুবদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ফায়সাল সরকার ডিকোকে ফোন করেন। বলেন, “এত কষ্ট করে লাভ নেই। আছেন অনেক দূরে।” এরপরই রনিকে ধরার ওই অভিযান শেষ হয়। 

তারপর হাবিবা আক্তার মুক্তা অভিযোগ তোলেন, যুবলীগ নেতা রনিকে ধরতে এই তল্লাশি নয়। তার জামাতা সিজারের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে তাদের ভয় দেখাতে ‘মব’ সৃষ্টি করা হয়েছে। তল্লাশির নামে বাড়িতে চালানো হয়েছে লুটপাট। এ অভিযোগে গত শুক্রবার দুপুরে শিশিলসহ কয়েকজনের নামে তিনি থানায় মামলাও করেছেন। 

আজ শনিবার সকালে নগরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন হাবিবা আক্তার মুক্তা ও তার জামাতা সিজার। আর বিকেলে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন শিশিল।

রাজশাহী মহানগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন শিশিল 


সকালে সংবাদ সম্মেলনে সিজার দাবি করেন, তার ভাই বাবার রেখে যাওয়া প্রায় ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার সম্পদ একাই ভোগদখল করছেন। তাকে কিছুই দেওয়া হয়নি। এমনকি তার বাবার দুইটি আগ্নেয়াস্ত্রও নিয়েছেন ছোটভাই শিশিল। একজন দুইটি অস্ত্র না পেলেও আওয়ামী লীগ নেতা ও রাজশাহীর সাবেক সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ডিও লেটার দিয়েছিলেন শিশিলের পক্ষে। ফলে জেলা প্রশাসন দুইটি আগ্নেয়াস্ত্রই শিশিলকে দিয়েছে। 

এ সময় ভাইকে ‘আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ’ প্রমাণ করতে নিষিদ্ধ নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান রাজীবসহ কয়েকজন নেতার সঙ্গে শিশিলের ছবি দেখান সিজার।

বিকেলে মহানগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন শিশিল। সেখানে তিনি ভাইয়ের তোলা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি জানান, তার ভাই নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ করতেন। তার ভাই ২৮তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। তখন তার জন্য সুপারিশ করে প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক। এই প্রত্যয়ন পত্রে সিজারকে ছাত্রলীগ বলে উল্লেখ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে তিনি প্রত্যয়ন পত্রটি দেখান শিশিল।

তিনি দাবি করেন, ‘মব’ সৃষ্টি করে ভয় দেখাতে তারা তার ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ি যাননি। তারা খবর পান, ওই বাড়িতে যুবলীগ নেতা অবস্থান করছেন এবং কিছু মানুষ ভবনটি ঘেরাও করেছেন। ‘উত্তেজনা প্রশমিত’ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে তারা সেখানে যান। যাওয়ার পরে তারা জানতে পারেন এটি বড় ভাইয়ের শ্বশুরের ফ্ল্যাট। দায়ের করা মামলাটি মিথ্যা দাবি করে তিনি দ্রুত সেটি প্রত্যাহারেরও দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে শিশিলের সঙ্গে মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম রবি, জেলা যুবদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-আহ্বায়ক ফায়সাল সরকার ডিকো, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মীর তারেক, সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান জনি, নগর ছাত্রদলের সভাপতি আকবর আলী জ্যাকি, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাকসুদুর রহমান সৌরভ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/কেয়া/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়