ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ধানের মৌসুমে অস্থির চাঁপাইনবাবগঞ্জের চালের বাজার

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪১, ৯ জুলাই ২০২৫   আপডেট: ১১:৫৮, ৯ জুলাই ২০২৫
ধানের মৌসুমে অস্থির চাঁপাইনবাবগঞ্জের চালের বাজার

চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাজারে চালের দামে অস্থিরতা বিরাজ করছে। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৬-৮টাকা পর্যন্ত। কৃষকের হাতে ধান না থাকা, মিলারদের বিপুল মজুতের কারণে চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে বলে দাবি খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতাদের। আকস্মিক দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রশাসনের কার্যকর নজরদারির অভাবকে দুষছেন তারা।

ধান মজুত করে চালের দাম বাড়ানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মিল মালিকরা। তাদের দাবি, সরকরি নির্দেশনা অনুযায়ী যতটুকু ধান মজুত রাখার কথা, সেই অনুযায়ী ধান রাখছেন তারা। খাদ্য অধিদপ্তরের যারা দায়িত্বে আছেন, তাদের দিয়ে মনিটরিং করালেই বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে বলে দাবি তাদের।

আরো পড়ুন:

বাজার ঘুরে জানা গেছে- বর্তমানে আমন ধানের মোটা চাল ৫৬-৫৮ টাকা কেজি, বোরো ধানের সরু চাল ৭৮-৮০ টাকা, বোরো ধানের মাঝারি চাল ৬৫-৭২ টাকা এবং ওই ধানের মোটা চাল ৫৬-৫৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সবমিলিয়ে বাজারে ৫৬ টাকার নিচে কোনো চালই বিক্রি হচ্ছে না। 

চাল ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সাম্প্রতিক সময়ে কৃষকরা ঘরে ধান তুলে মিলার ও বিভিন্ন মোকামে বিক্রি করেছেন। কাজেই বর্তমানে জেলায় চালের কোনো সঙ্কট থাকার কথা নয়। এরপরও এ ভোগ্যপণ্যটির দাম বাড়ছে। এখনই দামে লাগাম না টানলে মিলার চালের দাম বাড়াতেই থাকবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুরাতন বাজারের চাল ব্যবসায়ী কাউসার আহমেদ বলেন, “মিল মালিকদের অবৈধ মজুতের কারণে বাজারে ধানের দাম বাড়ছে। ধানের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে।”

অপর ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, কৃষকের কাছে কম দামে ধান সংগ্রহ করে এবারো মজুত করছেন মিলাররা। চালের কৃত্রিম সঙ্কট দেখিয়ে দাম বাড়াচ্ছেন তারা। তাদের উৎপাদিত চাল ইচ্ছে মতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।”

ক্রেতারা জানান, মূলত ঈদুল আজহার পরপরই চালের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়। খুচরা ও পাইকারি বাজারে সব ধরনের চালের দাম ৬-৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। 

শিবগঞ্জ পৌর এলাকার চালের ক্রেতা ওমর ফারুক বলেন, “বাজারে চালের দাম বেড়েছে। মোটা চালের ২৫ কেজির বস্তায় আগের থেকে ১৫০ টাকা বাড়তি যোগ করতে হচ্ছে। এখন ধানের ভরা মৌসুম। এ সময়ে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়াটা অযৌক্তিক।”

ধান মজুত করে চালের দাম বাড়ানোর অভিযোগের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মিল মালিক বলেন, “খাদ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা ছাড়া আমরা বাড়তি কোনো কাজ করি না। এখানে যারা দায়িত্বে আছেন, তাদের দিয়ে মনিটরিং করালেই আরো স্পষ্ট হওয়া যাবে, আমাদের কাছে কতটুক কি মজুত আছে।”

শিমুল অটোরাইস মিলের মালিক ওমর খৈয়ম শিমুল রাইজিংবিডিকে বলেন, “সরকরি নির্দেশনা অনুযায়ী যতটুকু ধান মজুত রাখার কথা, সেই অনুযায়ী ধান রাখি। আমাদের এখানে নির্ধারিত পরিমাণের চেয়েও কম ধান মজুত আছে। কারসাজির সঙ্গে আমরা জড়িত নই।” 

তিনি আরো বলেন, “ঈদুল আজহার পর ধানের দাম বৃদ্ধিসহ রাইস ব্র্যান পাউডারের দাম স্থির না থাকায় চালের দাম বেড়েছে।”

ভরা মৌসুমেও চালের দাম বেড়ে যাওয়াকে কারসাজি বলছে ভোক্তাদের সংগঠন ক্যাব। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কৃষি সংস্কার কমিশন গঠনসহ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম। 

তিনি বলেন, “শুধু চালকল মালিকরা নয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেকই বাড়ির মধ্যে চাল মজুত রেখেছেন। এসব অবৈধ গোডাউনে অভিযান চালানো হলে স্থানীয় বাজারে চালের দাম কমে আসবে।”

চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. ইয়াছিন হোসেন বলেন, ‍“চলতি মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও জেলায় বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যামাত্রা অর্জিত হয়েছে। এবার ৩ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৩ মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যামাত্রা ছিল। এর থেকে ধান উৎপাদন বেশি হয়েছে।”

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ফজলে এলাহী বলেন, “চালের দাম বাড়ার পরপরই রাইস মিলগুলোয় অভিযান পরিচালনা করছি। আমাদের দপ্তরে পর্যাপ্ত জনবল নেই; সে কারণে বাজার তদারকি কম হতে পারে। ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ চাল মজুত রাখলে আমরা সেখানে অভিযান চালাচ্ছি। অনিয়মের পেলেই জড়িতদের আইনের আওতায় আনছি।”

ঢাকা/মেহেদী/মাসুদ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়