শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিএনপির সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম, শিক্ষা ব্যাহত
গাইবান্ধা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
স্কুলে বিএনপির সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম চালানো হয়।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের বিঘ্ন ঘটিয়ে বিএনপির সদস্য নবায়ন, নতুন সদস্য সংগ্রহ ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (২৭ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত উপজেলার ৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই কর্মসূচি চলে। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই কার্যক্রম চলেছে, সেগুলো হলো, সোনারায় ইউনিয়নের শিবরামে আলহাজ্ব মো. হোসেন স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের ধুবনী কঞ্চিবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়, চন্ডিপুর ইউনিয়নের হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও চন্ডিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, সর্বানন্দ ইউনিয়নের রামভদ্র স্কুল (কেজি), ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের বজরা হাতিয়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং শান্তিরাম ইউনিয়নের খুদিরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এর মধ্যে আলহাজ্ব মো. হোসেন স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে দেখা গেলেও অন্য সবকটি স্কুলে পাঠদান বন্ধ ছিল। মাইকের শব্দ, স্কুলমাঠে বিভিন্ন যানবাহনে আসা নেতাকর্মীদের ভিড়ের কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করতে না পেরে ফিরে যান।
পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী এর আগে মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দিনভর উপজেলার ৩ ইউনিয়নের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই ধরনের কর্মসূচি চলে। বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) বাকি ৫ ইউনিয়নের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এই কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে। ফলে ওই প্রতিষ্ঠানে পাঠদানে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
গত ২৫ আগস্ট জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ১৫ ইউনিয়নে এই কার্যক্রম পরিচালনার সিডিউল প্রকাশ করা হয়। সিডিউলে বিভিন্ন স্থানের পাশাপাশি অধিকাংশই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম এবং সময় সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ অভিভাবক ও তৃণমূল বিএনপির নেতারা বলছেন, শত শত নেতাকর্মী স্কুলে ঢুকে পড়ায় ঠিকমতো পাঠদান হয়নি। অনেক শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যেতে না পেরে ফিরে গেছে। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলের কর্মসূচি আয়োজনে জেলা নেতাদের দুষছেন তারা।
আলহাজ্ব মো. হোসেন স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফরিদা পারভিন চৌধুরী রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ব্যাহত হয়েছে। এখানকার অনেক স্কুলে তারা কর্মসূচি পালন করছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিষেধ করেছেন, যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।’’
ধুবনী কঞ্চিবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুদুর রহমান বলেন, ‘‘আমার বিদ্যালয়ে পাঠদান চলাকালীন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে দেইনি। ভবিষ্যতেও হবে না।’’
হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হৃদয় কুমার দাস রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘বিএনপির কাউন্সিল করার জন্য ৪টি ক্লাস শেষ করে ছুটি দিয়েছি।’’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের অনুমতি দিতে পারেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘না, এটা ঠিক হয়নি।’’
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজকুমার বিশ্বাস বলেন, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে দলীয় কর্মসূচি করার সুযোগ নেই। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব) এইচ এম. মাহাবুবুল ইসলাম জানান, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক কর্মসূচির সুযোগ নেই। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি কর্মসূচির আয়োজনে থাকা ইউনিয়ন বিএনপি নেতাদের কেউই।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাহমুদুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, ‘‘বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে কাউকে রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে বলা হয়নি। বিদ্যালয় ছুটির পর কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে কার্যক্রম পরিচালনা করা যেত।’’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ করে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি মইনুল হাসান সাদিক বলেন, ‘‘বিদ্যালয়ে কোনো কার্যক্রম করতে বলা হয়নি। উপজেলার নেতাদের স্কুলের বাহিরে ফাঁকা কোনো স্থানে এই কর্মসূচি পালন করতে বলা হয়েছে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে এ ঘটনায় দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।’’
ঢাকা/মাসুম/বকুল