ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

নরসুন্দায় সেতুর নামে বাঁধ নির্মাণের অভিযোগ!

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫   আপডেট: ০৯:৫৪, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নরসুন্দায় সেতুর নামে বাঁধ নির্মাণের অভিযোগ!

নরসুন্দা নদীতে নির্মিতব্য সেতু

কিশোরগঞ্জে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর নরসুন্দা নদীতে সেতুর নামে স্থায়ীভাবে পাকা বাঁধ নির্মাণ করছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদীরা। সদর উপজেলার রঘুখালী এলাকায় ৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি এখন এলাকাবাসীর মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছে।

তারা বলছেন, এই সেতুর কারণে পরিপূর্ণভাবে বাধাগ্রস্ত হবে ৫৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই নদীর পানি প্রবাহ। এমনিতেই দখল দূষণে মরণাপন্ন এই নদী, তার উপরে এই সেতু নামের বাঁধটি নদীর মৃত্যু ত্বরান্বিত করবে। 

পানি প্রবাহ বন্ধ করে পরিকল্পনাবিহীন এমন সেতু নির্মাণে হতবাক স্থানীয়রা। নদীকে হত্যা করে এমন সেতু নির্মাণ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরাও।

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্বাঞ্চলের পাঁচটি উপজেলার মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে শহর বাইপাস সড়কে নরসুন্দা নদীর উপর ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর সেতু নির্মাণ শুরু করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার মেয়াদ ধরা হয় চলতি বছরের ৭ অক্টোবর। 

৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতুটির কাজ ৪০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। সেতুটি দেখে প্রথমেই মনে হবে এটি যেন সেতু নয়, বরং নদীর গতিপথ স্থায়ীভাবে বন্ধ করে তৈরি হচ্ছে পাকা বাঁধ। তাছাড়া যেখানে ১১ মাসে মাত্র ৪০ শতাংশ কাজ হয়েছে, মাত্র এক মাসে কীভাবে বাকি ৬০% কাজ সম্পন্ন করবে? এটা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় কলেজের প্রভাষক রাসেল মুন্সী বলেন, “এটাতো ব্রিজ হচ্ছে না, এটা হচ্ছে বাঁধ। এতে আমাদের ক্ষতি হবে, নদীর ক্ষতি হবে। ব্রিজের মধ্যে পিলার হয়, সেটি অনেক উঁচু হয়। এটাতে কোনো পিলার নেই। এটা এত নিচু যে নৌকা চলাচল তো দূরের কথা, পানিও ঠিক মতো চলাচল করতে পারবে না। ব্রিজটি উঁচু করার দরকার। ইঞ্জিনিয়ার যে কীভাবে এত নিচু করে প্লানটি পাশ করলো, সেটাই এক বিষ্ময়!”

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, “নরসুন্দা নদী খনন করাসহ এর সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ১৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে সরকার। এর আগেই এলজিইডি নদীটিতে সেতুর নামে বাঁধ দিয়ে নদীকে হত্যা করছে। যদি ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় তাহলে এ ধরনের সেতুগুলো কোন কাজেই আসবে না। বরং অযথা সরকারি কোষাগারের টাকা নষ্ট ছাড়া আর কিছুই নয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর যদি যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে নদী বাঁচাতে কঠোর আন্দোলনে যাব আমরা।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা বিহীন এ সেতু নির্মাণের সকল দায় এড়িয়ে যান জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ এনায়েত কবীর। 

তিনি বলেন, “এই সেতুটির নির্মাণ প্রক্রিয়ায় আমি কর্মরত ছিলাম না। আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। এটার ডিটেইলসটা আমার জানা নেই। তবে এটার ডিজাইনটা সদর দপ্তর থেকে হয়। এখান থেকে সার্ভে করে গেছে, সার্ভে রিপোর্টের ভিত্তিতে এই সেতুটি করা হচ্ছে।”

দুই কোটি চৌত্রিশ লক্ষ টাকা নির্মাণ ব্যায় ধরে এ সেতুটির কাজ ১১ মাসে শেষ হয়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ। আগামী এক মাসে শেষ করতে হবে বাকি ৬০ শতাংশ কাজ। কিন্তু এমন ভুল ডিজাইনের সেতু চান না এলাকাবাসী। সেতুর নিচ দিয়ে অবাধে পানি প্রবাহ নিশ্চিতসহ নৌযান চলাচলের সুবিধা চান এলাকাবাসী।

ঢাকা/রুমন/এস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়