ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

দৌলতপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস যেন দালাল-দুর্নীতিবাজদের অভয়ারণ্য!

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৩, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫   আপডেট: ১৪:৪৫, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
দৌলতপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস যেন দালাল-দুর্নীতিবাজদের অভয়ারণ্য!

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিস

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও দালাল সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে সাধারণ সেবাগ্রহীতাদের নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে। সরকারি এ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরটি বর্তমানে যেন দালাল ও দুর্নীতিবাজদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগও উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে, সাব-রেজিস্ট্রার বোরহান উদ্দিন দলিল লেখকদের সহযোগিতায় সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে লাখ লাখ টাকা অতিরিক্ত নিয়ে থাকেন। সরকারি নীতিমালায় হেবা দলিলে ৭৮০ টাকা এবং কবলা দলিলে ৩৮০ টাকা ফিস সরকার নির্ধারিত থাকলেও দৌলতপুর অফিসে নির্ধারিত ফিস বাদেও হেবা দলিলের জন্য ৩ হাজার ২২০ টাকা এবং কবলা দলিলের জন্য ৩ হাজার ১২০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।

এছাড়াও সরকারিভাবে মৌজা মূল্যের বেশি মূল্যে ২ পার্সেন্ট, জমির শ্রেণি না থাকলে ২ পার্সেন্ট, বণ্টক নামা দলিলে ১ পার্সেন্টসহ শ্রেণি বাড়ি হলে ১০ হাজার টাকা, এক দলিলে দুটি মৌজা হলে ২০ হাজার টাকা, ওয়ারিশ সূত্রে ২০ হাজার টাকা, জাতীয় পরিচয়পত্রে নামে সমস্যা থাকলে ৭ হাজার টাকা নির্ধারণ করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন সাব-রেজিস্ট্রার বোরহান উদ্দিন সরকার। 

তাছাড়াও সাব-রেজিস্ট্রারের ব্যক্তিগত কক্ষে (খাসকামরা) দলিল করলে সর্বনিম্ন দলিল প্রতি দেওয়া লাগে অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা। যা মোট দলিলের ৮০ শতাংশ দলিল লেখকদের জিম্মি করে রেজিস্ট্রি করানো হয় খাস কামরায়। এছাড়াও পে-অর্ডারের নামে চলছে আরেক দফা হরিলুট। এ যেন রামরাজত্বে পরিণত হয়েছে সরকারি এ দপ্তরটি। 

এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই সিদ্দিকী ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি বরং আরো বেপরোয়াভাবে নির্দ্বিধায় চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, “হোগলবাড়ীয়া মৌজায় আমার একটি পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের দলিলে সাব-রেজিস্ট্রার ১৫ লাখ টাকা অতিরিক্ত নিয়ে রেজিস্ট্রির কাজ সম্পন্ন করেছেন।”

আরেক ভুক্তভোগী বলেন, “আমার ৩৮ হাজার টাকা মূল্যের একটি দলিল রেজিস্ট্রি করতে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।” 

এ নিয়ে দৌলতপুর থানা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “রেজিস্ট্রি অফিসে সীমাহীন দুর্নীতি চলছে। যা বন্ধ হওয়া দরকার।” 

থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মন্টি সরকার, সাবেক থানা বিএনপির সদস্য সচিব শহিদ সরকার মঙ্গল ও সাবেক ছাত্রদল নেতা মুকুল শাহসহ একাধিক ভুক্তভোগী রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতি নিরসন চান। 

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সকাল ১০টায় রেজিস্ট্রি কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও সাব-রেজিস্ট্রার নিয়মিত দুপুর ১টার পর অফিসে যান এবং ২টার পর রেজিস্ট্রির কাজ শুরু করেন। অনেক সময় বিকেল ৪টাও বেজে যায় রেজিস্ট্রি কার্যক্রম শুরু করতে। আবার ৫টার পর সেবাগ্রহীতাদের লেট ফি বাবদ আরও দুই হাজার টাকা গুনতে হয়।

এ বিষয়ে দৌলতপুর সাব-রেজিস্ট্রার বোরহান উদ্দিন সরকার তার বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি কোনো ধরনের দুর্নীতি বা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নই। বরং যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে, তারাই প্রকৃতপক্ষে এসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।”

কারা জড়িত জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দলিল লেখক ও স্থানীয় কিছু দালালের যোগসাজশে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়ে থাকে, আমি কোনো দুর্নীতি করিনি।”

এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, “সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতির অভিযোগ এত বেশি শুনতে হচ্ছে যে, আমি সত্যিই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। আগামী দিনে আমি নিজেই সরাসরি উপস্থিত থেকে সব ধরনের দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেব।”

এদিকে স্থানীয় সচেতন মহল দৌলতপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতির বিরুদ্ধে উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন।

ঢাকা/কাঞ্চন/এস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়