ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বিরামপুর সেটেলমেন্ট অফিস যেন অনিয়ম-দুর্নীতির অভয়ারণ্য

দিনাজপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৭, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫  
বিরামপুর সেটেলমেন্ট অফিস যেন অনিয়ম-দুর্নীতির অভয়ারণ্য

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের কর্মচারী ও দালালদের অনিয়ম-দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ সেবাগ্রহীতারা। ১৮ একর সরকারি খাস জমি টাকার বিনিময়ে ব্যক্তি মালিকানায় দেওয়া, পর্চা ও নকশা সরকারি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি করা এবং মাঠ জরিপের নামে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই অফিসের কর্মচারী ও দালালদের বিরুদ্ধে। দালাল আফজাল, খাদেমুল, মোস্তফা, জাভেদ বিহারি, নাজমুল, আরিফ এবং নৈশপ্রহরী মুনসুর আলীর সহযোগিতায় অফিসের ড্রাফ্টসম্যান সাইদুল ইসলাম এসব অনিয়ম-দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন অনেক ব্যক্তি।

কসবা সাগরপুর মৌজায় তদন্ত করে জানা গেছে, নিয়ম–নীতির তোয়াক্কা না করে প্রায় ১৮ একর সরকারি খাস জমি লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে পর্চা করে দেওয়া হয়েছে। এ অনিয়মে মূল ভূমিকায় আছেন ড্রাফ্টসম্যান সাইদুল ইসলাম ও তার সহযোগী দালাল খাদেমুল।

উপজেলার বরগা, গংগাদাসপুর, শৈলান ও গংগাপুর মৌজায় গিয়ে দেখা গেছে, সরকার নির্ধারিত ১০০ টাকার পর্চা বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকায় এবং ৫০০ টাকার নকশা বিক্রি হয়েছে ৭০০ টাকায়। শুধু তাই নয়, মাঠ জরিপের সময় স্থানীয়দের কাছ থেকে ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছে সরকারি আসল পর্চার ফটোকপি, যেখানে সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসারের সই–সিল ব্যবহার করা হয়েছে। তবে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সেবাগ্রহীতারা অফিস থেকে পর্চা সংগ্রহ করার কথা। মৌজায় গিয়ে পর্চা বিক্রির নিয়ম নেই। এসব নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে দালালদের সহযোগিতায় মৌজাগুলোতে গিয়ে পর্চা বেশি দামে বিক্রি করেছেন ড্রাফ্টসম্যান সাইদুল ইসলাম। 

উপজেলার বিনাইল ইউনিয়নের বগরা মৌজার আমিরুল ইসলাম বলেছেন, “আমাদের গ্রামে এসে সাইদুল ইসলাম ও নৈশপ্রহরী মুনসুর আলী প্রতিটি পর্চা ৩০০ টাকায় বিক্রি করেছে। নকশার জন্য নিয়েছে ৭০০ টাকা। দুই মৌজায় প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার পর্চা বিক্রি করেছে তারা।”

উপজেলার বিনাইল ইউনিয়নের গংগাদাসপুর মৌজার উজ্জ্বল বলেছেন, “আমি পাঁচটি পর্চা নিয়েছি ১ হাজার ৫০০ টাকায়। নকশার জন্যও ৭০০ টাকা নিয়েছে। জরিপের সময় মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা আদায় করেছে।”

ওই মৌজার আব্দুল রাজ্জাক, রফিজ উদ্দিন ও আকবর আলীসহ অনেকে বলেন, আমরা বিরামপুর সেটেলমেন্ট অফিস থেকে প্রতারণার শিকার হয়েছি। তারা আমাদের গ্রামে এসে ১০০ টাকার পর্চা ৩০০ টাকা করে বিক্রি করে গেছে। তাহলে হাজার হাজার পর্চায় তারা কত টাকা বেশি নিয়ে গেছে। আমরা প্রশাসনের কাছে সঠিক বিচার চাই।

উপজেলার মকুন্দপুর ইউনিয়নের গংগাপুর মৌজার অভিযোগকারী আজমল হোসেন, আবুল হোসেন, রোহান, আনিছুর রহমান ও মংলু বলেন, বিরামপুর সেটেলমেন্ট অফিসে কাজ করে আমাদের এলাকার মোস্তফা নামের এক ব্যক্তি। আমরা তার মাধ্যমে আমাদের পর্চা পেয়েছি। মোস্তফা বলে, আপনাদের অফিসে যেতে হবে না। আমি এসে দিয়ে যাবো। প্রতিটি পর্চা সে ৩০০ টাকা করে নিয়ে গেছে। আমরা তো আর জানি না, পর্চার সরকারি মূল্য কত?

তবে, বিরামপুর সেটেলমেন্ট অফিসের দালাল মোস্তফা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, আমি সেটেলমেন্ট অফিসের লোক না। এভাবে পর্চা বিক্রি করিনি।

বিরামপুর সেটেলমেন্ট অফিসের ড্রাফ্টসম্যান সাইদুল ইসলামও পর্চা এবং নকশা বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। খাস জমি বিক্রির অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি।

বিরামপুর সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেছেন, খাস জমির কোনো মালিকানা হবে না। বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। পর্চা বেশি দামে বিক্রির বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।

বিরামপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুজহাত তাসনীম আওন বলেছেন, খাস জমি আমাদের এখতিয়ারভুক্ত বিষয়। তবে, আমরা বিষয়টি দেখছি। পর্চা বা অন্যান্য অনিয়মের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ব্যবস্থা নেবে।

দিনাজপুর জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মো. শাহিনুর ইসলাম বলেছেন, ড্রাফ্টসম্যান সাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিটি উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস দালালমুক্ত করা হচ্ছে। বিরামপুর সেটেলমেন্ট অফিসও দালাল মুক্ত করা হবে।

অতিরিক্ত টাকা আদায় ও সরকারি খাস জমি বেচাকেনার মতো গুরুতর অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

ঢাকা/মোসলেম/রফিক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়