ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

উত্তাল নদীতে চলছে স্টিলবডি ট্রলার, ঝুঁকিতে যাত্রীরা 

অমরেশ দত্ত জয়, চাঁদপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪৬, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫   আপডেট: ১৮:৪৭, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
উত্তাল নদীতে চলছে স্টিলবডি ট্রলার, ঝুঁকিতে যাত্রীরা 

ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন ও পর্যাপ্ত জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম না থাকায় এসব ট্রলার ঝুঁকিপূর্ণ

চাঁদপুরের পুরান বাজার থেকে শরিয়তপুরের চরাঞ্চলে যেতে পার হতে হয় উত্তাল পদ্মা ও মেঘনা নদী। যাতায়াত করতে হয় স্টিলবডি ট্রলারে করে। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন ও পর্যাপ্ত জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম না থাকায় এসব ট্রলার ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও দিনের পর দিন চলছে এসব ট্রলার। এছাড়া, অবৈধভাবে স্থাপন করা ঘাট থেকে টোল হিসেবে যেসব অর্থ আদায় করা হয়, তা থেকে রাজস্ব পায় না সরকার।

এসব বিষয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

সম্প্রতি সরজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই দিনের পর দিন চাঁদপুরে নদীতে চলছে লক্কর ঝক্কর স্টিলবডি ট্রলার। অনুমোদনহীন এসব ট্রলারের মালিক ও চালকরা অবৈধভাবে ঘাট তৈরি করে যাত্রী পারাপার করছেন। 

এমনই একটি ঘাট আছে চাঁদপুর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের পুরান বাজারের মদিনা মসজিদ এলাকায়। এখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত ট্রলার শরীয়তপুরসহ আশপাশের চরাঞ্চলে নিয়মিত যাত্রী পারাপার করে। 

ট্রলারচালকরা বলছেন, প্রতিবার ঘাট ব্যবহারের জন্য একটি মহলকে দিতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। তবে, এর বিনিময়ে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না তারা।

ট্রলারচালক বসু গাজী জানিয়েছেন, শরীয়তপুরের মাস্টার ঘাটে সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পারাপারে জনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৪০ টাকা। মোটরসাইকেল কিংবা অন্য ছোট যানবাহন সঙ্গে থাকলে তার পরিবহন খরচও নেওয়া হয়। ঘাট ব্যবহারে ট্রলারকে দিতে হয় ৮০ টাকা। তবে, এর বিপরীতে কোনো সেবা পাওয়া যায় না।

আরেক চালক নাদিম জানান, ট্রলার ঘাটে ভিড়লেই টাকা দিতে হয়। বস্তাভর্তি মালামাল ওঠালে তার জন্যও ১৫-২০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। মদিনা মসজিদ ঘাট থেকে চরাঞ্চলের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। ট্রলারের যাত্রীদের জন্য কিছু লাইফ জ্যাকেট রাখলেও তারা সেগুলো ব্যবহার করতে না চাওয়ায় কিছুটা ঝুঁকি থাকে। বৃষ্টির সময় চলন্ত ট্রলারে যাত্রীদের জন্য ত্রিপল টাঙানো হয়।

যাত্রীরা জানিয়েছেন, শরীয়তপুর ও চাঁদপুরের মধ্যে সেতু না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই স্টিলবডি ট্রলারে করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ৩০-৪০ জন নিলেই একটি ট্রলার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। অথচ, অনেক সময় ৮০ থেকে ১০০ জনও নেওয়া হয় একটি ট্রলারে। 

সুমাইয়া নামের এক নারী যাত্রী জানিয়েছেন, শরীয়তপুরের চরাঞ্চলের মানুষ মূলত কেনাকাটার জন্য চাঁদপুরে আসা-যাওয়া করেন। যোগাযোগের জন্য এখানে সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন। এখানে দৃশ্যমান ঘাট না থাকা, অবৈধ ঘাটে যাত্রী ছাউনি ও টয়লেট না থাকা, ট্রলারগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়াসহ নানা অনিয়ম যেন কর্তৃপক্ষের চোখে পড়ছে না। ট্রলারগুলোতে লাইফ জ্যাকেট অপর্যাপ্ত। যেগুলো আছে, সেগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় কেউই এগুলো গায়ে পরতে চায় না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত এসব বিষয়ে নজর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

মদিনা মসজিদ ঘাটে ট্রলার প্রতি ৭০-৮০ টাকা টোল নেওয়ার বিষয়ে স্থানীয় চেম্বার অব কমার্সের দায়িত্বশীল কেউ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

পুরান বাজার মদিনা মসজিদ ঘাটের দোকানদার মো. রুহুল আমিন খান বলেন, আমি ৭-৮ বছর ধরে স্থানীয় কমিউনিটি পুলিশের পক্ষে টোলের টাকা তুলছি। পুরো টাকা যাচ্ছে চেম্বার অব কমার্সের তহবিলে। এর মধ্যে মালের বাজারের জন্য চলাচল করা ১০টি ট্রলার থেকে ৮০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। স্টেশন ঘাট, মাস্টার ঘাট ও মোল্লা বাজার নামে আরো তিন ঘাটের ৩০টি ট্রলার থেকে ৭০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। বেপারী বাজারের একটি ট্রলার ও বাঁশগাড়ি চরের জন্য চলাচল করা ১০টি ট্রলার থেকে ৮০ টাকা করে নিচ্ছি। এটাকে অনেকে দেওয়ান ঘাট হিসেবেই বেশি চেনে। এই যে আমি টাকা তুলে দিচ্ছি, বিনিময়ে আমি কিছুই পাই না।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর চাঁদপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বছির আলী খান বলেছেন, এই মদিনা মসজিদ এলাকার দেওয়ান ঘাট ইজারাবিহীন এবং এখানকার যাতয়াতকারী স্টিলবডি ট্রলার সবই অবৈধ। বছর বছর এ ঘাট থেকে যে ১৩-১৪ লাখ টাকা টোলের নামে নেওয়া হচ্ছে, তা থেকে কোনো রাজস্বই আমাদের বিআইডব্লিউটিএর দপ্তার উত্তোলন করেনি। দ্রুত অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা/রফিক 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়