‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত রাখতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে’
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম || রাইজিংবিডি.কম
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন সিএইচটি সম্প্রীতি জোটের সমন্বয়ক থোয়াই চিং মং চাক।
পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত রাখার জন্য দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম (সিএইচটি) সম্প্রীতি জোটের সমন্বয়ক থোয়াই চিং মং চাক।
আজ রবিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
‘পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাত থেকে রক্ষা করা এবং ভারতীয় ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান’ শিরোনামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে থোয়াই চিং মং চাক বলেন, ‘‘শেখ হাসিনার চেয়ে বড় ফ্যাসিস্ট সন্তু লারমা (জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা)। দেশে ৫০টা জাতি আছে, শুধু মুসলিম ছাড়া সবাই মিলে জোট হয় কেন? আমরা সবাই বাংলাদেশি। সবাই মিলে একজাতি। কেউ আদিবাসী নয়, আমরা সবাই বাংলাদেশি। একজন ভিনদেশি সন্তু লারমার সঙ্গে কীভাবে চুক্তি করেন শেখ হাসিনা?’’
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘‘খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলা বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। অথচ দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত রাখার জন্য দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে। কখনো বাঙালি ও অ-বাঙালির মধ্যে দাঙ্গা, কখনো বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোর আধিপত্য বিস্তারের লড়াই, কখনো আবার আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ও সাধারণ জনগণের ওপর বর্বরোচিত হামলা ঘটছে।’’
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিত্তিক আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করা রাজনৈতিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন থোয়াই চিং মং চাক।
সিএইচটি সম্প্রীতি জোটের সমন্বয়ক থোয়াই চিং মং চাক বলেন, ‘‘সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, ভারতের সহযোগিতায় চাকমা জাতি পরিচালিত ইউপিডিএফ ও জেএসএস পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। তারা সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি, লোভ ও প্রলোভন দেখিয়ে ভারত থেকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণে উৎসাহিত করছে। প্রতি বছর এ সব সংগঠন কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করতে ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, এমনকি সাধারণ কৃষক পর্যন্ত জিম্মি করছে। সেই অর্থ দিয়ে ভারত থেকে অস্ত্র আনা হয়।’’
তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, ‘‘আবার অনেক নেতা পালিয়ে ভারতে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন এবং সেখান থেকে ‘জুম্মল্যান্ড’ প্রতিষ্ঠার নীলনকশা আঁকছেন। প্রতিনিয়ত পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, নির্যাতন, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে এ সব সংগঠন। ইউটিউব, ফেসবুক ও অন্যান্য মাধ্যমে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে সেনাবাহিনী ও বাঙালিদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে চেষ্টা করছে। মূল লক্ষ্য হলো-বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করা এবং সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা-সিএইচটি সম্প্রীতি জোট দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করছি, বাংলাদেশ আমাদের সবার। পাহাড়-সমতলের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।’’
সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি কিছু দাবি ও করণীয় তুলে ধরেন। সেগুলো হলো: জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা; বাঙালি ও অ-বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি রুখে দিয়ে সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় করতে হবে। ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা; বিদেশি অর্থায়ন ও প্রভাবিত সংগঠনগুলোর কার্যক্রম দৃঢ়ভাবে দমন করতে হবে। রাষ্ট্রীয় নজরদারি বৃদ্ধি; সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি শক্তিশালী করতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন; স্থায়ী শান্তির জন্য শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ বাড়াতে হবে। সেনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি; পার্বত্য এলাকায় স্থায়ী সেনা ক্যাম্প বৃদ্ধি ও পুলিশ বাহিনীর দক্ষতা বাড়াতে হবে। সংস্কার কমিশনের ভূমিকা; আদিবাসী, উপজাতি, জুম্ম, সেটেলার বাঙালি ইত্যাদি বিভাজনমূলক শব্দ বাতিল করে জাতীয় পরিচয়ে ঐক্যবদ্ধ করা জরুরি। ভারতপন্থি ইউপিডিএফ ও জেএসএস পরিচালিত সব ধরনের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, হত্যা, গুম ও বিদেশি ষড়যন্ত্র অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং পাহাড়ে শান্তি ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠায় সরকার ও দেশপ্রেমিক জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সংগঠনের মুখ্য সমন্বয়ক পাইশিখই মারমা, সিএইচটি সদস্য অ্যাডভোকেট পারভেজ তালুকদার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সমন্বয়ক ইখতিয়ার ইমন, সমন্বয়ক জাফরুল হাসান, সমন্বয়ক রাকিব হোছাইন নওশাদ, সমন্বয়ক তন্ময় হোসেন (নাসির) প্রমুখ।
ঢাকা/রেজাউল/বকুল