ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার 

সুমি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সরি টু মি’

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৯, ২৫ নভেম্বর ২০২৫   আপডেট: ১৩:০৩, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
সুমি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সরি টু মি’

মৃত্যুর আগে সুমি নিজের ফেসবুক আইডিতে সর্বশেষ স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘সরি টু মি’

কুষ্টিয়ার মিরপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক শিক্ষার্থী সুমি আক্তারের (২৬) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে সুমি নিজের ফেসবুক আইডিতে সর্বশেষ স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘সরি টু মি’। 

সোমবার (২৪ নভেম্বর) ভোরে মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামে নিজ ঘর থেকে সুমির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে রবিবার রাতে তিনি তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। 

দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকা সুমি শারীরিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি তার পরিবারের সদস্যদের। 

আমবাড়িয়া গ্রামের কৃষক গোলাপ রহমানের মেয়ে সুমি আক্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাস করে চাকরির চেষ্টা করছিলেন। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সুমি সবার বড়। 

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সুমি আক্তার জন্মগতভাবে ফাইব্রাস ডিসপ্লাসিয়া রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। সেখান থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন সুমি। 

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়ায় নিজ বাড়িতে থেকে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সুমি। রোগের কারণে তার হাড় দ্রুত ক্ষয় হচ্ছিল এবং একাধিক অস্ত্রোপচার সত্ত্বেও শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। তার শরীরে তীব্র ব্যথা, চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা ও ক্রমাগত দুর্বলতায় তিনি মানসিকভাবে চাপের মধ্যে ছিলেন। ফাইব্রাস ডিসপ্লাসিয়া রোগের কারণে শরীরে অনেক যন্ত্রণা হতো।

নিজের ঘরের বাঁশের আড়ার সঙ্গে বাঁধা দড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় সুমির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। 

সুমির ছোট চাচা হেলাল উদ্দিন বলেছেন, সুমি ফাইব্রাস ডিসপ্লাসিয়া নামের রোগে আক্রান্ত ছিল। সে রবিবার দিবাগত রাত প্রায় ৩টা পর্যন্ত নিজ ঘরে লেখাপড়া করেছে। এরপর রোগের যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে। ফজরের আজান দিলে সুমির বাবা গোলাম রহমান নামাজের জন্য বের হলে বাবার সঙ্গে দেখা করে আবার ঘরে চলে যায় সুমি। এরপর সব শেষ।

তিনি আরো বলেন, কিছুদির পরপর সুমিকে ইনজেকশন দিতে হতো। তাতে প্রায় ১৮-২০ হাজার টাকা খরচ হতো। এলাকার বিত্তবান মানুষ, সুমির স্যাররা অনেক হেল্প করতেন। এর আগে সুমির তিন বার সার্জারি করা হয়েছিল। তখন এলাকাবাসীসহ অনেকে তাকে সাহায্য করেছিল। ঢাকার পিজি হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছিল। সেখানকার ডাক্তারের সঙ্গে তার হোয়াটসঅ্যাপে নিয়মিত যোগাযোগ হতো। টেস্টের কাগজ হাসপাতাল থেকে চীনে পাঠানো হয়েছিল বলে সুমি আমাকে জানিয়েছিল। তবে, কোনো পজিটিভ কিছু আশা করা যাচ্ছিল না। সুমির অসুখটা বেড়ে গিয়েছিল। গলা, ঘাড় ও পায়ের হাড় ক্ষয়ে  যাচ্ছিল। সে যন্ত্রণায় ছটফট করত। আমরা আসলে অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। 

চাকরির বিষয়ে সুমির চাচা বলেন, সুমি অনেক ডিপ্রেশনে থাকত। করে সুমির অনেক আশা ছিল, পড়াশুনা শেষ করে সে বড় চাকরি করবে। সুমি বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে রিটেনে টিকত। তবে, ভাইভাতে গিয়ে তার শরীরের অবস্থা দেখে আর চাকরি হতো না। সে এ নিয়ে মানসিকভাবে আরো ভেঙে পড়েছিল। হয়ত সেসব কারণেই সুমি আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

সুমির মা চায়না বেগম বলেছেন, সুমিকে নামাজের জন্য ঘরে ডাকতে গেলে কোনো সাড়া-শব্দ পাই না। পরে আমার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে ঘরের দরজা ভাঙলে দেখি, সে বাঁশের আড়ার সঙ্গে ঝুলছে। আমার মেয়েটা খুব ভালো ছিল। ভালো লেখাপড়া করত। আমার মেয়ের স্বপ্ন ছিল, সে বড় চাকরি করবে। আজ তাকে মাটির ঘরে দিয়ে আসলাম।

আমবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইফুদ্দিন মুকুল বলেন, সুমি নামের একটি মেধাবী মেয়ে মারা গেছে। সে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিল। সে পড়াশুনার জন্য অনেকদিন থেকেই ঢাকাতে থাকত। একটি রোগে আক্রান্ত ছিল। পরিবারের পক্ষে সেই চিকিৎসা করার সামর্থ্য ছিল না। এলাকাবাসী ও বিত্তবানদের সহযোগিতায় তার চিকিৎসা চলত। আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা সহযোগিতার চেষ্টা করতাম। 

মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, মেয়েটি বিরল রোগে আক্রান্ত ছিল। সহপাঠী এবং গ্রামের বিভিন্ন মানুষের সহায়তায় তার চিকিৎসা চলছিল। ধারণা করা হচ্ছে, মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ঢাকা/কাঞ্চন/রফিক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়