ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বাসা থেকে ডেকে নিয়ে রাতভর গবি শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৩, ২৫ নভেম্বর ২০২৫   আপডেট: ১৫:১০, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
বাসা থেকে ডেকে নিয়ে রাতভর গবি শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ

আহত শের আলী। অভিযুক্ত অন্তু দেওয়ান

সাভারের আশুলিয়ায় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শের আলীকে (২০) মেসে ডেকে নিয়ে রাতভর মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন তার সহপাঠীরা। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাতে উপজেলার পাথালিয়া ইউনিয়নের নলাম এলাকায় ওই শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়। রাতেই তাকে আশুলিয়ার গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন সহপাঠীরা।

আরো পড়ুন:

অভিযুক্তরা হলেন- অন্তু দেওয়ান (২২), মেহেদী হাসান (২১) ও আশরাফুল (২২)। তারা গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। 

শের আলী একই বিভাগের প্রথম সেমিস্টারের ছাত্র। তিনি রংপুরের পীরগঞ্জের মাহমুদপুর এলাকার বাসিন্দা। আশুলিয়ায় একটি মেসে থেকে পড়ালেখা করছেন। 

সরেজমিনে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে গিয়ে শের আলীকে চিকিৎসাধীন দেখা যায়। হাসপাতালের চিকিৎসক জানান, শারীরিক নির্যাতন ও মারধরের কারণে তার গায়ে জখমের চিহ্ন দেখা গেছে। পুরোপুরি সেরে উঠতে কয়েক দিন সময় লাগবে।

ভুক্তভোগী শের আলী বলেন, “আমরা যারা মেসে থাকি সবাইকে দাওয়াতের কথা বলে ডাকা হয়। প্রথমে আমরা মাজারে আসি, এরপর আমরা আশরাফুল ভাইয়ের মেস বাসায় যাই। সেখানে যাওয়ার পর আমাকে এবং আমার সহপাঠী মাহিমকে পেঁয়াজ ছিলতে বলা হয়। আমি বলি, পেঁয়াজ ছিলতে পারি না, আমি রসুন ছিলব। রসুন ছিলছিলাম, তখন আশরাফুল ভাই আমাকে ডেকে বলেন, মুখে মুখে তর্ক করিস কেন? আমি বলি, বড় ভাইদের অসম্মান হয় এমন কিছু তো বলিনি।”

“তারপরে আশরাফুল ভাই বললেন, তোকে মারতে কী লাগবে? তোকে মারলে কী হবে? আমি তখন বলি, আমাকে মারলে কিছুই হবে না। এরপর আমি সেখান থেকে বাসায় চলে আসি”, যোগ করেন তিনি। 

এই শিক্ষার্থী বলেন, “রাত ৯টার দিকে সহপাঠীদের দিয়ে আমাকে আবার ওই বাসায় ডাকিয়ে নেন, আমি যাই। ভুল হয়েছে বলে আমি সবার কাছে ক্ষমা চাই। এরপর সেখানে রান্না করা খিচুড়ি খাই।”

শের আলী অভিযোগ করে বলেন, “খাবার খাওয়ার পর সবাইকে যেতে বলেন তারা। আমাকে একা আটকায়, এরপর এক পায়ে দাঁড়াতে বলে। আমি দাঁড়াই। অন্তু ভাই ডেকে বলেন, কখনো হস্তমৈথুন করছিস? আমি বললাম, যৌবনে সবাই করে। তখন অন্তু ভাই আমাকে টানা ৫-৬টা চড় মারেন। এরপর বলেন, প্যান্ট খোল, যখন অস্বীকৃতি জানাই, তখন তরিকুল ভাই আমাকে মারেন। এরপর আমাকে প্যান্ট খুলে অন্তু ভাই পেটে লাথি মারেন। ৩২ ব্যাচের মেহেদি ভাই, আশরাফুল ভাই দুইজন আমাকে চড় মারতে থাকেন। এরপর আমি তাদের পায়ে ধরি, মাফ চাই। সেখানে ১৫-২০ জন ছিল ৩২ ব্যাচের, তাদের পায়ে ধরি, আমার ভুল হয়ে গেছে বলি। এরপর আমাকে ছাড়ে।” 

“সেখান থেকে বের হয়ে আমি একটা মসজিদে যাই, তারপর বাইরে এলে বন্ধু মাহিম দেখে আমাকে নিয়ে যায়। পরে তারাই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে নিয়ে আসে।”

তিনি বলেন, “সকালে ৩২ ব্যাচের লাবিব ভাই হাসপাতালে এসে এটা আর বাড়াতে চাও, নাকি শেষ করবা বলে হুমকি দেয়। আমি এই ঘটনার যথাযথ বিচার চাই। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দেব।” 

আহত শের আলীকে হাসপাতালে নেওয়া মাহিম খান বলেন, “সিনিয়রদের কাছে ডাকা হয়, আমরা সবাই যাই, শের আলীও যায়। তখন পেঁয়াজ ছিলি। শের আলীকেও পেঁয়াজ ছিলতে বলা হয়, সে বলে পারে না ওর চোখে সমস্যা। শের আলী রসুন ছিলে। তখন আশরাফুল ভাই ডেকে নেয়, শুনি চেচামেচির আওয়াজ। পরে ও বাসায় চলে যায়। আমাকে আর এক বন্ধুকে দিয়ে শের আলীকে রাত ৯টার দিকে ডাকিয়ে আনায়। সে এসে বড় ভাইদের কাছে মাফ চায়।” 

তিনি বলেন, “রাতে খাওয়ার পর সবাই চলে যায়, কিন্তু শের আলীকে তারা রাখে। বড় ভাইদের রুমে নেয়। কিছুক্ষণ পর দেখি কাঁদতে কাঁদতে বের হয়েছে। তখন বন্ধুদের ডেকে আনি, জানতে পারি মারধর হয়েছে। এরপর তাকে প্রথমে রুমে নেই, পরে হাসপাতালে নিয়ে যাই।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত অন্তু দেওয়ান (২৭ ব্যাচ) বলেন, “শের আলী আমাদের জুনিয়র। তাকে শাসন করতেই পারি, গায়ে হাত তোলার কিছু হয়নি। এ ধরণের কথা ভিত্তিহীন। এখানে আমার নাম জড়ানো হচ্ছে, আমি নিজেও বিব্রত বোধ করছি।” 

তিনি আরো বলেন, “খিচুড়ির দাওয়াতে আমি গিয়েছিলাম। সে বেয়াদবি করায় তাকে শাসানো, বকাবকি করা হয়, তবে ফিজিক্যালি এসল্ট করা হয়নি। এ ধরণের কিছুই হয়নি। আর এটা বাইরের ঘটনা। আমরা যারা সিনিয়র আছি, আমরা সমাধানের চেষ্টা করব। জুনিয়ররা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে, প্রশাসন সমাধান করবে এখন।”

অন্তু দেওয়ান সম্প্রতি অনুষ্ঠিত গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন। তার বিরুদ্ধে এর আগেও আবিদ হোসেন নামে রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের আরেক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে।

গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. নকিব জাহাঙ্গীর বলেন, “রাতে ওই শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে আনা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, ভর্তি করা হয়েছে। শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী পরবর্তী চিকিৎসা দেওয়া হবে।”

গণবিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য সচিব কনক চন্দ্র রায় বলেন, “হাসপাতালে ভর্তি শিক্ষার্থীকে দেখে এসেছি। ভিসিসহ বিষয়টি নিয়ে বসা হয়েছে। এই বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হান্নান বলেন, “ঘটনাটি জানা নেই। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ দিলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/সাব্বির/মাসুদ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়