অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করা তুষার গ্রেপ্তার, পিস্তল উদ্ধার
পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
গ্রেপ্তার তুষার হোসেন।
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থকদের সংঘর্ষে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করা যুবক তুষার হোসেন (২১) গ্রেপ্তার হয়েছে। অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করার ভিডিও এবং ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
ঘটনার পর থেকে গ্রেপ্তার এড়াতে পলাতক ছিলেন তুষার। অবশেষে রেহাই পেলেন না তিনি। ঘটনার চার দিনের মাথায় ধরা পড়লেন পুলিশের হাতে।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাতে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ধানবান্ধি এলাকার জে সি রোডের মতিন সাহেবের ঘাট সংলগ্ন স্থান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পাবনা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী একটি পিস্তল ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
পাবনা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশিদুল ইসলাম মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে গ্রেপ্তারের তথ্য জানান। গ্রেপ্তার তুষার ঈশ্বরদী পৌর শহরের ভেলুপাড়া মহল্লার আবু তাহেরের ছেলে।
ডিবি পুলিশ জানান, আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি, স্থানীয় সোর্স ও দীর্ঘ ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তুষারের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর অভিযানে নামেন তারা। ডিবি পুলিশের ওসি মো. রাশিদুল ইসলামের নেতৃত্বে এসআই বেনু রায়, এসআই অসিত কুমার বসাকসহ একটি চৌকস টিম অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তুষার তার হেফাজতে থাকা একটি অবৈধ পিস্তল ও দুই রাউন্ড তাজা কার্তুজ লুকিয়ে রাখার কথা স্বীকার করেন। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে ভেলুপাড়া এলাকায় মাটি খুঁড়ে প্রায় ৬–৭ ইঞ্চি নিচ থেকে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় একটি লোডেড পিস্তল ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
ডিবি ওসি রাশিদুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় তুষারের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকালে ঈশ্বরদী থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং ০৬। তারিখ ০২/১২/২০২৫। বিকেলে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গত ২৭ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঈশ্বরদী উপজেলার চরগড়গড়ি গ্রামে জামায়াত প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচার কেন্দ্র করে জামায়াত-বিএনপি'র মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের কমপক্ষে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী সমর্থক আহত হয়। ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয় অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেলে।
সেই সংঘর্ষের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। যে ভিডিওতে দেখা যায়, তুষার নামের ওই যুবক পিস্তল উঁচিয়ে সামনে থাকা প্রতিপক্ষের দিকে গুলি ছুঁড়ছে। তুষার বিএনপি নাকি জামায়াতকর্মী তা নিয়ে দুই দলের পাল্টপাল্টি বক্তব্য পাওয়া যায়।
বিএনপি মনোনীত প্রার্থী পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব দাবি করেন, “দিবালোকে তুষার মণ্ডল আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালিয়েছে। তিনি জামায়াত নেতা তালেব মণ্ডলের ভাতিজা মামুন মন্ডলের ঘনিষ্ঠ সহচর।’’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা জামায়াতের আমির ও জামায়াত মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডল বলেন, “অস্ত্রধারী ওই যুবক আমাদের দলের কেউ না, তার সঙ্গে দলের ন্যুনতম সম্পর্ক নেই।”
তবে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত হয় পুলিশ। ঈশ্বরদী থানার ওসি আ স ম আব্দুর নূর গত ৩০ নভেম্বর সন্ধ্যায় জানান, গুলি ছোঁড়া তুষার জামায়াতের কর্মী। তিনি বিএনপির দায়ের করা মামলার তালিকাভুক্ত ৬ নম্বর আসামি।
সংঘর্ষের ঘটনার পর ২৯ নভেম্বর সাহাপুর ইউনিয়ন কৃষকদলের আহ্বায়ক মক্কেল মৃধার ছেলে ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক বাঁধন হাসান আলিম বাদী হয়ে ৩২ জন জামায়াত নেতার নাম উল্লেখ করে ঈশ্বরদী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়া ১৫০ থেকে ২০০ জন অজ্ঞাতনাম ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়। এই মামলায় প্রধান আসামি করা হয় পাবনা জেলা জামায়াতের আমির এবং পাবনা-৪ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী আবু তালেব মণ্ডলকে।
ঈশ্বরদী উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে একই দিন একই থানায় ৩৮ জন বিএনপির নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সাহাপুর ইউনিয়ন কৃষকদলের আহ্বায়ক মক্কেল মৃধাকে। এছাড়া ১০০ থেকে ১৫০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই পাবনা-৪ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিবের আত্মীয় এবং অনুসারী।
সংঘর্ষের সময় লুট হওয়া জামায়াত নেতাকর্মীদের দারি করা অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেলের মধ্যে গত শনিবার বিকেলে মক্কেল মৃধার বাড়ির পাশের বাঁশঝাড় থেকে ৯টি, সোমবার ৭টি, মঙ্গলবার ১টি এবং ঘটনাস্থল থেকে আগুনে পোড়াসহ মোট ২১টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে পুলিশ।
ঢাকা/শাহীন/বকুল