ঢাকা     সোমবার   ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

গবিতে ধর্ষণ-র‍্যাগিংকাণ্ডের উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই শিক্ষার্থীকে মারধর

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১৯, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫   আপডেট: ২০:২০, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
গবিতে ধর্ষণ-র‍্যাগিংকাণ্ডের উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই শিক্ষার্থীকে মারধর

ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিং ও ধর্ষণকাণ্ডকে কেন্দ্র করে চলমান উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে মো. নাসিম (২২) নামে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। গুরুতর আহত ওই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

রবিবার (৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার নলাম এলাকায় গণ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

নাসিম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং গকসু নির্বাচনে ভিপি প্রার্থী ছিলেন।

মূলত ‘সন্ত্রাসী’ মন্তব্য ও ধর্ষণকাণ্ডে অবহেলার অভিযোগে শিক্ষকের পদত্যাগ চাওয়াকে কেন্দ্র করে আজকের এই মারধরের ঘটনাটি ঘটেছে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।

নাসিম বলেন, ‘‘ধর্ষণের ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর ভুক্তভোগীর অভিযোগ দেওয়া সত্ত্বেও প্রক্টরিয়াল বডির সভাপতিসহ যেসব শিক্ষক বিষয়টিকে আমলে নেননি, তাদের পদত্যাগ দাবি করে গত কয়েকদিন  বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন চলছিল, যার সাথে আমরাও যুক্ত ছিলাম। আজও আমাদের কর্মসূচি ছিল।’’

তিনি বলেন, ‘‘আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পর রাজিবসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী আমাকে ডাক দিয়ে আন্দোলন চলাকালে ‘সন্ত্রাসী’ বলে আমার একটি মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চায়।  তারা জিজ্ঞাসা করে, আমি সন্ত্রাসী কেন বলেছি? আমি জানাই- আমি তাদের সন্ত্রাসী বলিনি। যারা রেপিস্ট, যারা এ ধরনের কাজ করেছে আমি তাদের সন্ত্রাসী বলেছি। কথা বলার এক পর্যায়ে তারা আমার উপর হামলা চালায়। এ সময় কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিলুফার সুলতানার ছাত্র আবিরও আমাকে মারধর করে।’’

এ ছাড়াও গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানকার জরুরি বিভাগ থেকে বাইরে ডেকে নিয়ে অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জান নাসিমের উপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন নাসিম। 

এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে করা এক মন্তব্যের বিষয়ে রাজিব হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী নাসিমকে প্রশ্ন করছেন। কথা বলার এক পর্যায়ে নাসিমকে মারধর শুরু করেন তিনি। এ সময় তার সাথে সেখানে উপস্থিত অন্যারাও নাসিমকে মারধর শুরু করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, সম্প্রতি ধর্ষণকাণ্ডে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তিন শিক্ষকের পদত্যাগ চাওয়া হয়।  তাদের একজন হলেন কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিলুফার সুলতানা। আজ নিলুফার সুলতানার পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করেন কিছু শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীদের এই মিছিলের ব্যাপারে কিছু জানেন না দাবি করে নিলুফার সুলতানা বলেন, ‘‘কে বা কারা মিছিল করেছে এসবের কিছুই আমি জানি না। আমরা সেসময় মিটিংয়ে ছিলাম। এ সময় বাইরে কিছু শিক্ষার্থী স্লোগান দিচ্ছিল। পরে আমি বেরিয়ে তাদের এসব করতে বারণ করি।’’

তিনি বলেন, ‘‘আমি তাদের বলি যে, লোকে ভাববে আমি তোমাদের দিয়ে এটা করাচ্ছি। আমার পদত্যাগ তো কেউ চায়নি। এখানে আমরা মিটিং করছি। মানে যে সমস্ত অন্যায় ঘটেছে এই কদিন ধরে সেটা নিয়ে আমরা মিটিং করছি। এর মধ্যে আমার পদত্যাগের প্রশ্ন আসলো কেন? এসব বলো না তোমরা। পরে ওরা শান্ত হয়ে চলে গেছে।’’

নাসিমকে মারধরের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এ ঘটনায় অনুতপ্ত দাবি করে ফলিত গণিত বিভাগের অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রাজিব হোসেন বলেন, ‘‘আমরা একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন করেছি। শিক্ষার্থীদের সব যৌক্তিক আন্দোলনের পক্ষে আমি ছিলাম একেবারে শুরু থেকেই। ম্যামের পদত্যাগ চাওয়ার জন্য আজকের ঘটনা না, আজকের ঘটনা মূলত সে (নাসিম) বিভিন্ন সময় আমাকে নিয়ে ট্যাগিং করে। উল্টাপাল্টা কথা বলে, সন্ত্রাসী ট্যাগ দেয়। মূলত এটা নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সে আমাকে ধাক্কা দিলে এর পরিপ্রেক্ষিতে হাতাহাতি হয়।’’

রাজিব নিজেও নিলুফার সুলতানার পদত্যাগ চান বলে দাবি করেন।

অন্যদিকে অভিযুক্ত সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অপর শিক্ষার্থী আবির হোসেন বলেন, ‘‘মূলত আমরা আমাদের ম্যামকে নিয়ে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার প্রতিবাদ করছিলাম। মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে আসার পর পোলাপান নিয়া তারা আমাদের উপর হামলা করছে। মিছিলের পিছনে মেয়েরা ছিল, তাদের রক্ষায় আমরাও পাল্টা প্রতিরোধ করি।’’

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘‘শিক্ষার্থীরা নিচে আন্দোলনের সময় তালা দিয়ে রাখে ফলে নিচে যাওয়ার উপায় ছিল না। নিচে ঘটে যাওয়া পরিস্থিতি নিন্দনীয়। প্রশাসনিকভাবে অভিযোগ প্রদান করলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’

গেল কয়েক সপ্তাহ ধরেই উত্তপ্ত গণ বিশ্ববিদ্যালয়। গত ২৪ নভেম্বর শের আলী নামে এক শিক্ষার্থীকে র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারসহ ১৭ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ছাড়া এক শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের ঘটনায় মামলার জেরে গ্রেপ্তারের পর চারজনকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। 

গত ৩০ নভেম্বর মেহেদী হাসান নামে এক শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে মারধরের ঘটনা ঘটে। সবশেষ আজ নাসিম নামে আরেক শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে মারধরের ঘটনা ঘটলো। এসব বিভিন্ন ঘটনায় প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের।

ঢাকা/সাব্বির//

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়