ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘সঙ্গে বাড়ি সঙ্গে ঘর, এদের নাম যাযাবর’

আজাহার ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৭, ১৪ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘সঙ্গে বাড়ি সঙ্গে ঘর, এদের নাম যাযাবর’

অনেকক্ষণ হয় হাঁটছি আর প্রকৃতির রূপ ও রস আস্বাদন করছি। হঠাৎ চোখ পড়লো একদল মানুষ তাবু টানছে। তাবুর পাশেই টিনের চুলার করে রান্নায় ব্যস্ত অনেকেই। ছোট ছোট বাচ্চারা ছুটোছুটি করছে। তাদের মধ্যেই কয়েকজন শূকরের পাল সামলাচ্ছে। বলছিলাম একদল যাযাবরের কথা।

তাদের দেখতে ভিড় করে আছে অনেক মানুষ। কেউ তাকিয়ে আছে, কেউ ছবি তুলছে, কেউবা আবার এক মনে তাদের বিচিত্র ভাষায় কথাবার্তা বলছে ও শুনছে।

জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয়। জীবনের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকা রণক্ষেত্রে টিকে থাকার চেয়েও কঠিন। তাইতো করোনা মহামারিকে উপেক্ষা করে জীবিকার তাগিদে যাযাবরেরা ছুটছে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। দুমুঠো আহার জোগাড় করতে বিভিন্ন ধরনের খেলা দেখায় তারা। এরা জীবনকে একঘরে রাখতে চায় না। প্রকৃতির ভালোবাসাকে স্বীকার করে। প্রকৃতির মধ্যেই জীবনের বৈচিত্র্যের সন্ধান করে।

যাযাবরদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের বহুকাল ধরেই প্রচণ্ড আগ্রহ। ছোটবেলায় শুনেছিলাম, ‘সঙ্গে বাড়ি সঙ্গে ঘর, এদের নাম যাযাবর।’ বলতে গেলে, যাযাবরদের কোনো ঘর নেই, বাড়ি নেই। অধিকাংশই সাথে তাঁবু নিয়ে ঘোরে। যেখানেই রাত, সেখানেই কাত হয়ে পড়ে তারা। তাঁবুতে, পাহাড়ের গর্তে, গাছের কোঠরে কোনোভাবে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেয়। বৃষ্টির পানি বা রোদ এড়ানোই মুখ্য। এসব বাড়িতে সৌন্দর্যের কোনো বালাই নেই। কোনোরকম রাত্রিযাপন করাই উদ্দেশ্য। আধুনিক সভ্যতার কোনো নিদর্শনই তাদের মধ্যে দেখা যায় না।

যাযাবর মানুষদের প্রথম পরিচয় তাদের নির্দিষ্ট কোনো ঠিকানা নেই। নেই জীবিকা অর্জনের জন্য সভ্য মানুষের রীতি। ধরাবাঁধা চাকরি নেই। ব্যবসা যারা করে সেটাও সাময়িক। নিরন্তর ছুটেচলা এক জীবনের পথিক। ইতিহাস বলে বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন দেশের ও সম্প্রদায়ের মানুষ বেছে নিয়েছে এমন ছন্নছাড়া জীবনযাপন। এর মধ্যে রয়েছে আকস্মিক যুদ্ধ, খরা বা নদীভাঙন।

উপায় না পেয়েই এই মানুষগুলো যাযাবর জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তবে দুর্গম অঞ্চলে যাযাবরদের বিচরণ বেশি দেখা মেলে। দুর্গম পাহাড়-পর্বত কিংবা গহিন অরণ্যে দলবেঁধে থাকে তারা। আবার জলের ওপর ভাসমান নৌকায়, তুষারাচ্ছন্ন পরিবেশ থেকে শুরু করে মরুভূমির মাঝেও থাকে এরা। বংশ পরম্পরায় এই যাযাবর জীবনই তাদের পরিচয় হয়ে ওঠে। তবে বর্তমানে তাদের সংখ্যা অনেকাংশেই কমে গেছে। যাযাবর বৃত্তি ছেড়ে শহুরে জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে অনেকেই।

যাযাবরদের জীবনযাপন সত্যিই রহস্যময়। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় দেখা যায় এদের। অঞ্চলভেদে একেক নাম, আর বেঁচে থাকার বিচিত্রসব পেশা। নর-নারী, শিশুর অদ্ভুত তাদের চেহারা, অদ্ভুত তাদের কথাবার্তা। যাযাবর বলেই এদের জীবন বৈচিত্র্যময়। বৈচিত্র্যময়তাই এদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষ স্বভাবতই সামাজিক জীব। কিন্তু এরা নির্দিষ্ট কোনো সমাজে আবদ্ধ নয়। ঘুরে বেড়ায় খেয়ালখুশিমতো। এতেই তারা আনন্দ পায়। তাদের মাঝে কখনোই অসন্তুষ্টির ছাপ চোখে পড়ে না।

লেখক: শিক্ষার্থী, আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

 

 

ইবি/মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়