ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বাকৃবির খামার থেকে উন্নত জাতের ১৪ ভেড়া চুরি

বাকৃবি প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৩২, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫  
বাকৃবির খামার থেকে উন্নত জাতের ১৪ ভেড়া চুরি

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) গবেষণা প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত ১৪টি ভেড়া চুরি হয়েছে। চুরি হওয়া ভেড়াগুলো ‘দরপার’ ও ‘গাড়ল’ নামে উন্নত দুটি জাতের।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত থেকে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৬টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ফটক সংলগ্ন খামার থেকে এ চুরির ঘটনা ঘটে। তবে সেখানে রাতে কোনো প্রহরী দায়িত্বে না থাকায় সুনির্দিষ্টভাবে কোন সময়ে চুরি হয়েছে তা জানা যায়নি।

আরো পড়ুন:

বাকৃবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম জানান, ডিউটিরত দুইজন কর্মী গতকাল বুধবার বিকেল ৫টার পর দায়িত্বস্থল ছেড়ে চলে যান। রাতে খামারটি সম্পূর্ণ ফাঁকা ছিল। সকালে নিরাপত্তাকর্মী গিয়ে দেখে দরজার তালা ভাঙা এবং ভেড়াগুলো নেই। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। ঘটনাটি নিয়ে থানায় জিডি করা হবে।

গবেষণায় যুক্ত সার্জারি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদা ইয়াসমিন বারি বলেন, “খুবই দুঃখজনক ঘটনা, আমি ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। অনেক সাধনা করে এই ‘নিউক্লিয়ার স্লট’ তৈরি করেছি। এর জন্যই আমি গোল্ড মেডেল পেয়েছি। চর ও হাওর অঞ্চলে এই জাতের ভেড়ার পরিচিতি রয়েছে।”

তিনি বলেন, “বর্তমানে তিনটি প্রজনন প্রকল্প ও দুটি গবেষণা প্রকল্প চলমান ছিল। দরপার ও গাড়ল প্রজাতির উন্নত ভেড়া—একেকটির ওজন ৩০-৪০ কেজি। তালা ভেঙে ১৪টি ভেড়া নিয়ে গেছে, এখন মাত্র ২-৩টি অবশিষ্ট আছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যেমন বড় ক্ষতি, ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্যও অত্যন্ত কষ্টের।”

তিনি আরও বলেন, “২০১১ সাল থেকে এসব ভেড়া নিয়ে গবেষণা চলছে। এ ভেড়াগুলো থেকে সিমেন কালেকশন করে শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ নিতেন। চুরির কারণে শুধু আমার ব্যক্তিগত গবেষণা নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষ থেকে শুরু করে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণারও মারাত্মক ক্ষতি হলো।”

এর আগে এক ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রায় ২২টি ভেড়া মারা গিয়েছিল বলেও জানান তিনি।

নিরাপত্তা কাউন্সিলের পরিচালক অধ্যাপক ড মো আরিফুল ইসলাম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তদন্ত করি এবং দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিই। ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অধ্যাপক ফরিদা বারিকে থানায় জিডি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং পুলিশি সহায়তায় দ্রুত ভেড়াগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।”

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সার্জারি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদা ইয়াসমিন বারি ভেড়ার উপর গবেষণার জন্য বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেস (বিএএস) স্বর্ণ পদক অর্জন করেছিলেন। মাল্টিপল ওভুলেশন অ্যান্ড এমব্রায়ো ট্রান্সফার বিষয়ে তার এ গবেষণাকর্ম বিশেষভাবে স্বীকৃতি পায়।

অধ্যাপক ড. ফরিদা ইয়াসমিন বারি ২০১১ সাল থেকে ভেড়ার ভ্রূণ ও ভ্রূণ স্থানান্তর নিয়ে গবেষণা চালিয়ে আসছেন। দেশে প্রথমবারের মতো তিনি ভ্রূণ স্থানান্তরের মাধ্যমে ভেড়ার বাচ্চা উৎপাদন করেন। সুপার ওভুলেশনের মাধ্যমে বছরে ২৫-৩০টি উন্নত প্রজাতির কাঙ্ক্ষিত ভ্রূণ উৎপাদনে সক্ষম হন তিনি। এসব গবেষণা আমিষের চাহিদা পূরণ এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখছে।

ঢাকা/লিখন/মেহেদী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়