ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

কীভাবে থানায় এফ আই আর করবেন?

জিএম-আদল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩৫, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কীভাবে থানায় এফ আই আর করবেন?

প্রতীকী ছবি

জিএম-আদল: অজ্ঞতা অন্ধকারের শামিল। কোনো বিষয়ে অজ্ঞ থাকা যতটা লজ্জার, তার চেয়ে বেশি লজ্জার বিষয় হচ্ছে অজ্ঞ বিষয়ে শিখতে বা জানতে না চাওয়া। আইন শাস্ত্রে ল্যাটিন ভাষায় ‘Ignorantia juris non excusat’ বলে একটি প্রবাদ আছে। ইংরেজিতে যাকে ‘Ignorance of law is no excuse’ বলা হয়।

বাংলায় এই বাক্যটির অর্থ দাঁড়ায় আইনের অজ্ঞতা ক্ষমার অযোগ্য কিংবা, আইনের অজ্ঞতা ক্ষমার কোনো কারণ হতে পারে না। রাষ্ট্র যখন কোনো আইন তৈরি করে, তখন সে এটাই ধরে নেয় যে, রাষ্ট্রের সকল নাগরিকই সেই আইনটি  সম্পর্কে জানে। তাই যদি বাস্তবে আপনি সংশ্লিষ্ট আইন সম্পর্কে না জেনে উক্ত আইনটির কোনো বিধি-বিধান লঙ্ঘন করেন, আর পরে যদি আপনি সংশ্লিষ্ট আইনটি সম্পর্কে জানেন না বলে কোনো অজুহাত দেখান, তা রাষ্ট্রের কাছে কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না। আপনাকে আইন ভঙ্গ করার কারণে শাস্তি পেতে হবে। আইন না জানার অজুহাত কোনো ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ নয়।

আইনের অজ্ঞতার কারণে সাধারণ মানুষ বেশি বিপদ্গ্রস্থ, প্রতারিত ও নির্যাতিত হচ্ছে। আর প্রতিদিন যেভাবে গুম, জনসম্মুখে খুন, ধর্ষণ, সাইবার ক্রাইমসহ নানা নতুন নতুন অপরাধ বাড়ছে, তাতে অন্যান্য বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান না রাখলেও আপনাকে দৈনন্দিন সাধারণ আইন এবং সাধারণ কিছু আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান রাখা আবশ্যক।

এমনই একটি বিষয় হচ্ছে এজাহার বা এফ.আই.আর ।

এফ আই আর বা এজাহার কী?

কোনো অপরাধ বা অপরাধমূলক কিছু ঘটার পর সে বিষয়ে থানায় প্রতিকার পাওয়ার জন্য যে সংবাদ দেয়া হয়, তাকে এজাহার বা এফআইআর (ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট) বলে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি নিজে বা তাঁর পরিবারের কেউ কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তি, যিনি ঘটনা ঘটতে দেখেছেন কিংবা ঘটনা সম্পর্কে অবগত আছেন, তিনি থানায় এজাহার করতে পারেন। মূলত এফ আই আর বা এজাহার করার মাধ্যমে থানায় মামলা করা হয়।

এফ আই আর দায়ের করবেন কে?

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি নিজে, তাঁর পরিবারের কেউ, কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তি, যিনি ঘটনা ঘটতে দেখেছেন কিংবা ঘটনা সম্পর্কে অবগত আছেন।

কার নিকট অভিযোগ করতে হবে?

আবেদনটি দাখিল করতে হবে নিকটস্থ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অথবা ওসির নিকট।

অভিযোগ দেওয়ার পদ্ধতি : এফ আই আর লিখিত ও মৌখিক দুইভাবে দেয়া যায়। তবে, লিখিত দেয়াটাই ভালো । ঘটনার পূর্ণ বিবরণ, ঘটনার স্থান, সময় , কীভাবে ঘটনা ঘটল, কেনো ঘটল, দায়ী ব্যক্তি তথা আসামির নাম ,ঠিকানা জানা থাকলে তার পূর্ণ বিবরণ স্পষ্টভাবে লিখতে হবে। যদি এফ আই আর লিখিত বা কম্পোজ আকারে দেয়া হয় তবে এফ আই আর কারীর পূর্ণ ঠিকানা ও সই থাকতে হবে। যদি মৌখিকভাবে থানায় এজাহার দেয়া হয়, তাহলে এজাহারকারীর বক্তব্য থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সঠিকভাবে লিখবেন। লিখিত আকারে নিয়ে এজাহারকারীকে তা পড়ে শোনাবেন। তারপর অভিযোগকারীর স্বাক্ষর নিবেন। একটা বিষয় খেয়াল রাখা উচিত যে, কখনো এজাহার করতে যেন দেরি না হয়। অনেক সময় মামলার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। কারণ দেরিতে এজাহার করলে মামলার গুণাগুণ নষ্ট করতে পারে। ফলে অভিযোগকারী ন্যায়বিচার না পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। যদি কোনো কারণে এজাহার করতে দেরি হয়েই যায়, তাহলে তার সুনির্দিষ্ট কারণসহ আবেদনে উল্লেখ করতে হবে।

ক্ষেত্রে পুলিশ এর দায়িত্ব : এফ আই আর করার পর যদি উল্লিখিত অপরাধ আমলযোগ্য কিংবা এমন কোনো ঘটনাসংক্রান্ত হয়, যা তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিলে আসামিদের ধরা যাবে বা শনাক্ত করা যাবে, বা করা উচিত, সে ক্ষেত্রে পুলিশ তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেবে বা ঘটনার তদন্ত করবে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ছাড়াই (ধারা : ১৫৬) আর যদি, এজাহারে বর্ণিত অপরাধ বা বিষয়টি আমলযোগ্য না হয়, তবে পুলিশ এ- সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দাখিল করবে। সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বা তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে অনুমতি নেবে । (ধারা: ১৫৫) উভয় ক্ষেত্রে মামলার তদন্ত অফিসার বা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক নিয়োজিত কোনো ব্যক্তি নিম্নোক্ত ধাপগুলো সাধারণত পালন করে থাকেন; (ক) ঘটনাস্থলে যাওয়া। (খ) মামলার ঘটনা এবং অবস্থা। ascertain করা বা অবগত হওয়া। (গ) সন্দেহভাজন অপরাধী বা অপরাধীদের বের করা এবং গ্রেপ্তার করা। (ঘ) অভিযুক্ত অপরাধ সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রমাণাদি সংগ্রহ করা। যেমন: সংশ্লিস্ট ব্যক্তিসহ অন্য ব্যক্তিবর্গের বিবৃতি নেয়া ও জিজ্ঞাসাবাদ করা; জব্দ তালিকা তৈরি করা; case ডায়েরি তৈরি করা ; ১৭৩ ধারা অনুযায়ী চার্জশিট তৈরির ব্যবস্থা করা।

ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৪, ১৯০, ২০০ ধারায় এজাহার সম্পর্কে বলা হয়েছে।

যে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ : এজাহারকারীর সাক্ষ্যের ওপর মামলার বিচার ও পরিণতি অনেকাংশ নির্ভর করে। কর্মকর্তাকে এজাহারকারী থেকে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করে নিতে হবে, যাতে কোনো গরমিল না হয় সাক্ষ্যের সময়। নিয়মানুযায়ী, কোনো এজাহারকারী যদি মৌখিক কোনো বিবৃতি দেন, তাহলে তা লিখিত আকারে নিয়ে এজাহারকারীকে পড়ে শোনাতে হবে এবং তার স্বাক্ষর নিতে হবে। যে কর্মকর্তা এজাহার লিখবেন, তিনি অবশ্যই সিল ও সই দেবেন।

লেখক: শিক্ষানবিশ আইনজীবী, ঢাকা জজ কোর্ট ও শিক্ষার্থী, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯/জিএম আদল/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়