ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

চেতনার প্রতীক ইবির স্মৃতিসৌধ

তারিক সাইমুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ২০ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চেতনার প্রতীক ইবির স্মৃতিসৌধ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্মৃতিসৌধ

স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম এ সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠা লগ্নে তৎকালীন যে গোষ্ঠীর হাতে যাত্রা শুরু হয়েছিলো, বরাবরই তাদের হাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার পটভূমি বিকৃত হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে এখানকার মানুষের জীবন ধারা এবং মানসিকতারও পরিবর্তন ঘটেছে। ফলে, সংস্কৃতি চর্চার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

সবুজে ঘেরা এ ক্যাম্পাস নানা প্রতিকূল অবস্থা পাড়ি দিয়ে দিন দিন একাডেমিক, অবকাঠামো ও পরিবেশগতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিকীকরণের দিকে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ব্যক্তিবর্গদের চেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটোক সংলগ্নে স্থান করে নিয়েছে ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারী সেই বীর শহীদের স্মরণে দক্ষিণ বঙ্গের সর্ববৃহৎ স্মৃতিসৌধ। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বাধীনতা বিরোধী ও মৌলবাদী চিন্তা চেতনাকে ভূলন্ঠিত করে মুক্ত সংস্কৃতি চর্চার লক্ষ্য নিয়ে এ শহীদ স্মৃতিসৌধ স্থাপিত হয়।

এর শৈল্পিক কারুকার্য ও চমৎকার ডিজাইন সহজেই সকলকে মুগ্ধ করে। ইতিহাসখ্যাত মুনতাসীর মামুন এবং খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী হাশেম খান ও স্থপতি রবিউল ইসলাম কর্তৃক নকশা ও স্থাপত্য কর্মের ভিত্তিতে প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে এটি নির্মিত হয়। ১৯৯৯ সালের ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন সময়ের ও বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ শহীদ স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তী সময়ে ২০০১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী এ এস এইচ কে সাদেক স্মৃতিসৌধের শুভ উদ্বোধন করেন।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের স্মরণে ৫২ ফুট উঁচু স্মৃতিস্তম্ভ এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে ৭১ ফুট উঁচু স্তম্ভগুলো স্থাপিত হয়েছে। এর প্রত্যেকটি নকশা স্মৃতিচারণমূলক। দুই পাশে ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতাবিষয়ক দুটি দেয়ালচিত্র সন্নিবেশিত হয়েছে। এ দেশের সংস্কৃতির প্রতিফলন স্বরূপ শাপলা, মাছ, পাখি, একতারাসহ বিভিন্ন ফুল ও পাতার নকশা দেয়ালচিত্রে অঙ্কিত হয়েছে।

এছাড়া দেয়ালচিত্রে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মরমী কবি লালন শাহ, পাগলা কানাই ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাণী সংযোজন স্মৃতিসৌধটির গুরুত্ব আরও অর্থবহ করে তুলেছে।

দেয়ালচিত্র সংবলিত বিখ্যাত বাণীগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘বাংলার মানুষ বিশ্বের কাছে প্রমাণ করেছে, তারা বীরের জাতি। তারা নিজেদের অধিকার অর্জন করে মানুষের মতো বাঁচতে জানে’, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘তোমরা ভয় দেখিয়ে করছ শাসন, জয় দেখিয়ে নয়। সেই জয়ের টুটিই ধরব টিপে, করব তারে লয়’, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’, শহীদ স্মৃতিসৌধের সৌন্দর্যকে শতগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। পাগলা কানাইয়ের ‘শত রঙ্গের দেখিরে গাভী, এবা রঙ্গের দুধ গো দেখি। তবে কেন ত্রিজগতে মানবিচ করত্যাচি’, লালন ফকিরের ‘সব লোকে কয়-লালন কি জাত সংসারে, লালন বলে জাতের কি রূপ দেখলাম না এ নজরে’, মীর মশাররফ হোসেনের ‘বাংলা ভাষায় যাহার ভক্তি নাই, সে মানুষ নহে’।

স্মৃতিসৌধে আরও রয়েছে গোলাকার জ্যামিতিক বৃত্ত, ব্যাসার্ধ ও বিভিন্ন স্তম্ভ। এসব স্থাপত্য দেশের বিভিন্ন ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে মনে করিয়ে দেয়। স্মৃতিসৌধের ঠিক বাম পাশেই রয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। স্মৃতিসৌধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলিত হয়ে স্বাধীনতা দিবস, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসসহ, জাতীয় দিবসগুলোতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। অবসর সময় শিক্ষার্থীরা শহীদ স্মৃতিসৌধের প্রাণকেন্দ্রে এসে নানাবিধ ঐতিহাসিক ঘটনা প্রবাহ স্মরণ এবং সাংস্কৃতিক চর্চা করে থাকেন।

দেশের তরে যারা দিলো প্রাণ, তাদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ বেঁচে থাক আগামীর নবদিগন্তে। এগিয়ে যাওয়ার সাহস-শক্তি আর প্রেরণারবাতি ঘর হয়ে জ্বলুক সবার হৃদয়ে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

 

ইবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়