ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু ও আমাদের স্বাধীনতা   

তরিকুল ইসলাম মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৭, ১৫ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
বঙ্গবন্ধু ও আমাদের স্বাধীনতা   

স্বাধীনতার মহান স্থপতি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে পদার্পণ করেছি আমরা। স্বাধীনতার ৪৯ বছরে পদার্পণ করেছি একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে৷ ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিজয় অর্জন করেছিল বাঙালি জাতি। 

দেশ ও জাতির সামগ্রিক উন্নয়নের পথে বাধাসমূহ চিহ্নিত করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারলে বাঙালি জাতি তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে এক ধাপ এগিয়ে যাবে৷ বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে কবি অন্নদাশঙ্কর রায় ‘বঙ্গবন্ধু’ নামক কবিতায় লিখেছেন— 

 ‘যতোকাল রবে পদ্মা-মেঘনা/ গৌরী-যমুনা-বহমান/ ততোকাল র’বে কীর্তি তোমার/ শেখ মুজিবুর রহমান/ চারিদিকে আজ রক্তগঙ্গা/ অশ্রু গঙ্গা বহমান/ নেই-নেই ভয় হবে-হবে জয়/ জয় শেখ মুজিবুর রহমান।’

স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭০ সালের সাধারণ  নির্বাচনে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাক-সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে  তালবাহানা শুরু করলে বাঙালি জাতি বীরদর্পে স্বাধীনতার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল ৷ ১৯০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৪৭ সালে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ভারতবর্ষ বিভক্ত হলেও দুইটি আলাদা প্রদেশ নিয়ে পাকিস্তান গঠন করা যৌক্তিক  ছিল না৷ ফলে পাকিস্তান সরকারের অধীনে দীর্ঘ ২৪ বছর শাসন আর শোষণের  দুর্দশার মধ্যে কেটেছে বাঙালি জাতির৷  

অবশেষে  জাতিকে মুক্ত করতে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাঙালির অবিসংবাদিত  নেতা ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক ভাষণ দেন৷ বাঙালির মুক্তির সনদ খ্যাত এই ভাষণের পরই বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু  করে৷ আর ২৬ শে মার্চের  প্রথম প্রহরে পাক হানাদার বাহিনীর গণহত্যার মধ্য  দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়৷ সেই থেকে ২৬৬ দিনের দর্ঘ রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের  মধ্য দিয়ে বীর বাঙালির ঐক্য আর সাহসিকতায় ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন সার্বভৌম  এই পূণ্যভূমির সূচনা হয়৷

বাঙালির মুক্তিকামী মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারবর্গের  শাহাদাতবার্ষিকী ১৫ আগস্ট৷ প্রতিবছর তাই এই দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে অবিহিত করা হয় এবং শোকের মাস হিসাবে এই মাসটিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়৷ 

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির বাসভবনে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা হওয়ার পর বিশ্বের খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গ বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করেন তার মধ্যে অন্যতম কিছু মন্তব্য লিপিবদ্ধ করছি... 

১. মুজিব হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না, যারা মুজিবকে হত্যা করেছে তারা যেকোনো জঘন্য কাজ করতে পারে৷ - (নোবেল বিজয়ী উইলিবান্ট)

২. শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারালো তাদের একজন মহান নেতাকে, আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে। (ফিদেল কাস্ট্রো)

৩. আপোষহীন সংগ্রামী নেতৃত্ব আর কুসুম কোমল হৃদয় ছিল মুজিব চরিত্রের বৈশিষ্ঠ্য। (ইয়াসির আরাফাত)

৪. শেখ মুজিব নিহত হবার খবরে আমি মর্মাহত। তিনি একজন মহান নেতা ছিলেন। তার অনন্য সাধারণ সাহসিকতা এশিয়া ও আফ্রিকার জনগণের জন্য প্রেরণাদায়ক ছিল। (ইন্দিরা গান্ধী)

৫. আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মতো তেজী এবং গতিশীল নেতা আগামী বিশ বছরের মধ্যে এশিয়া মহাদেশে আর পাওয়া যাবে না। (হেনরি কিসিঞ্জার)

৬. শেখ মুজিব নিহত হলেন তার নিজেরই সেনাবাহিনীর হাতে, অথচ তাকে হত্যা করতে পাকিস্তানীরা সংকোচবোধ করেছে।  (বিবিসি-১৫ আগস্ট ১৯৭৫)

বঙ্গবন্ধু আজ নেই, আছে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত পিতৃভূমি, আছে স্বাধীন সোনার বাংলা আর বাঙালির হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ৷ যিনি ছিলেন কৈশরে দুরন্ত, যৌবনে বিপ্লবী, আর পৌঢ়ে বাঙালির মুক্তিকামী মহান নেতা৷

স্বাধীনতার ৪ দশক পেরিয়ে  সুবর্ণ  জয়ন্তী  উদযাপনের  দ্বারপ্রান্তে আমরা পৌঁছে গেছি৷ দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে উন্নীত হয়েছে৷ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার  দুর্বার নের্তৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নশীল থেকে উন্নতির সোপানে ধাবিত হচ্ছে৷  স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ২০২১ সালে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে, ২০৩০ সালে  টেকসই উন্নয়নের দেশে আর ১৯৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার  প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে৷ তারই  ধারাবাহিকতায় আজ অকল্পনীয় অনেক প্রকল্প  বাস্তবায়ন হচ্ছে৷ ইতোমধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন হলো, দৃশ্যমান হলো পদ্মা সেতুর মতো দীর্ঘতম সেতু, নির্মাণ কার্য চলছে রূপপুর  পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ অসংখ্য উল্লেখযোগ্য স্থাপনার৷ 

বিশ্বজুড়ে আজ বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অজস্র রোড, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, জাদুঘর, সেতু, ইকোপার্ক আরও কতো কি! কিন্তু বাঙালির হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুর মহান আদর্শ সুপ্রতিষ্ঠিত হয়নি আজও৷ বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা রেখে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে সোনার বাংলা গড়তে৷ তবেই বাংলাদেশ হবে সুখী সমৃদ্ধ সোনার দেশ, শান্তির পূণ্যভূমি৷

 

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া। 

ইবি/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়