ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

আত্মত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত জাতীয় চার নেতা

হাবিবুন নাহার মিমি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৬, ৩ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১১:৩১, ৩ নভেম্বর ২০২০
আত্মত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত জাতীয় চার নেতা

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর। রাত ৩টা ৪৫ মিনিট। জেলখানার পাশাপাশি তিনটি সেলের লোহার দরজা খুলে গেলো ঘটাং শব্দ করে। পুলিশের বদলে ভেতরে প্রবেশ করলো কয়েকজন আর্মি সদস্য। তিন সেল থেকে মোট চারজনকে বের করে নিয়ে গেলো তারা। সেই চারজন, জাতীয় চার নেতা; আর কোনো দিন ফিরে আসেননি তারা। 

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ, উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মন্ত্রীপরিষদ সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামান এই চারজনকে সেদিন হত্যা করা হয় নৃশংসভাবে। অথচ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর পর সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল তাদেরই। বাংলাদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আজীবন ব্রতী ছিলেন এই চার মহানায়ক। নিজেদের জীবনের সুখ, স্বাচ্ছন্দ আর আরাম বিসর্জন দিয়েছেন দেশের অনাহারী মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিতে। 

১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করার পর তখনকার ক্ষমতাসীনরা জাতীয় চার নেতাকে দলে টানতে চেষ্টা করে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহচর চার নেতা রাজী হননি দেশকে বিকিয়ে দেওয়ার হীন ষড়যন্ত্রে যুক্ত হতে, চাননি প্রিয় নেতা শেখ মুজিবের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে। 

ফলাফল হিসেবে ২৩ আগস্ট গ্রেপ্তার হন তাঁরা। জাতীয় চার নেতার জীবন হয়ে ওঠে চার দেয়ালে আবদ্ধ। তারা বুঝে নিয়েছিলেন তাদের হাতে সময় আর বেশি নেই। ফাঁসি বা ক্রসফায়ারেই হয়তো মৃত্যু লেখা আছে তাদের। 

একদিন সকালে তাজউদ্দীন আহমেদ জানালেন গতরাতে তিনি স্বপ্ন দেখেছেন বঙ্গবন্ধু তাকে কালো মার্সিডিজে করে করে তাঁর সঙ্গে টুঙ্গীপাড়ায় যেতে বলছেন, সেখানে নাকি এক জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ডাকের এই মানে তিনি বুঝে গেলেন। দিন কয়েক পর ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীও একই স্বপ্ন দেখলেন। তারা মনে মনে অন্তিম প্রস্তুতি নিয়ে নিলেন। 

অবশেষে ৩ নভেম্বর প্রতীক্ষার অবসান হয় তাদের। রাষ্ট্রের সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি হতে আসে তাদের মৃত্যুর শমন। যে বাংলাদেশের জন্য তারা আজীবন সংগ্রাম করলেন, সেই স্বাধীন বাংলাদেশের জেলখানাতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বাংলার চার বীর সন্তান। সেই রাতটি ছিল ১৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় কলঙ্কময় রাত। জাতীয় চার নেতার স্মৃতিকে অমলিন করে রাখতে প্রতিবছর ৩ নভেম্বর পালন করা হয় জেলহত্যা দিবস। গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে দেশবাসী তাদের স্মরণ করে। 

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

ঢাবি/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়