ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

বন্ধুদের সঙ্গ পেতে চির উদগ্রীব মন

আল আমিন ইসলাম নাসিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৫, ২৫ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৫:৩২, ২৫ জানুয়ারি ২০২১
বন্ধুদের সঙ্গ পেতে চির উদগ্রীব মন

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের ফলে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে গোটাবিশ্বে। এ থেকে রেহাই মেলেনি প্রিয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েরও। এখন যেন শূন্যতায় ভরপুর পুরো ক্যাম্পাস। অনুষদ ভবনের নিচে চায়ের দোকানগুলোতে নেই শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। পক্ষান্তরে, ক্যাম্পাসের চিরচেনা দিনগুলো স্মরণ করতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে প্রিয় বন্ধুদের চেহারা থেকে শুরু করে তাদের সঙ্গে ক্লাস করা, আড্ডা ও ঘুরে বেড়ানো।

এছাড়া শিক্ষকদের স্নেহ, বড় ভাই-আপুদের অবিরাম ভালোবাসা, টঙ এর মামারা আর চায়ের আড্ডা, চিরচেনা মফিস লেকে বন্ধুদের জন্মদিন পালন, প্যারাডাইস রোডে ভাইভা দিনে ফটোশুট কিংবা শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে কাপলদের হেঁটে বেড়ানোর দৃশ্য, জিয়া মোড়ে দাঁড়িয়ে বড় ভাইদের সঙ্গে খোশগল্প, লালনশাহ হলে থাকা, অনুষদ ভবনের নিচে বন্ধুদের জন্য অপেক্ষা করা ও ফটোকপির দোকানে ভিড় জমানো, খেলার মাঠে নিজের বিভাগকে সাপোর্ট করতে যাওয়া, মেইন গেট, ডায়ানা চত্বরে বসে গোল আড্ডা, লালবাসে সিট না পেয়ে ঝুলে ঝুলে যাওয়া, পশ্চিমপাড়া, বঙ্গবন্ধু হল, খাদেমুল হারামাইন ফাহাদ বিন আব্দুল আজিজ কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, বন্ধুদের সঙ্গে সেমিনারে যাওয়া আরো কত কি? দীর্ঘ দিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় সবাই নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন এখন।

গুটিকয়েক যাদের বাড়ি ক্যাম্পাসের আশপাশে, তাদের কাছ থেকেই ক্যাম্পাসের খোঁজ-খবর পাওয়া যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে তারা ছবি তুলে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে আপলোড করে থাকেন। ক্যাম্পাসের ছবিগুলো দেখতেই যেন এক ভালো লাগা, ভালোবাসা আর প্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার তৃষ্ণা অনুভূত হয়। চিরচেনা ক্যাম্পাস এখন প্রাকৃতিক বর্ণিল সাজে সজ্জিত হলেও বিষন্নতায় মুখরিত। ক্যাম্পাসের লেকে এখন পাখিদের কুজন, চারদিকে সবুজের বনায়ন আরও বিস্তৃত সবুজরূপ লাভ করেছে। 

দেয়াল ফেটে গুল্ম উদ্ভিদের জন্ম সবকিছুই ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ধূসর চিত্র পাল্টে রঙিন করে দিয়েছে। ক্যাম্পাসের চারদিকে যেন এখন প্রকৃতি হাসছে, খেলছে দুলছে। কিন্তু বিষন্নতায় প্রহর গুণছে ক্যাম্পাসের লাইব্রেরির ধুলোমাখা বইগুলো থেকে শুরু করে শ্রেণিকক্ষের চেয়ার-বেঞ্চ, বাসগুলোর ছিট, হোটেলগুলোর টেবিল ও হলগুলোর ডাইনিং-বেড।

ক্যাম্পাসের সব কিছুই অপেক্ষায় চিরচেনা শিক্ষার্থীদের সেই স্পর্শগুলোর ছোঁয়া পেতে, যেখানে প্রকৃতির সঙ্গে তারা হাসবে, খেলবে ও দুলবে। ক্যাম্পাসকে সবসময় আলোকিত বা উজ্জ্বল, আনন্দ উল্লাসে মুখরিত করবে, রঙিন ক্যাম্পাসকে প্রাণবন্ত করবে, জরাজীর্ণতা দূর করে ক্যাম্পাসকে প্রাণোচ্ছল করবে। একই সঙ্গে মুখরিত করবে ক্যাম্পাসের প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ। প্রকৌশলী ভবনের চত্বর থেকে শুরু করে বটতলা, আমতলা চত্বরগুলো আজ প্রহর গুণছে শিক্ষার্থীদের চরণের সংস্পর্শ পেতে।

কেননা শিক্ষার্থীদের পদচারণায় শহীদ মিনার চত্বর, প্রকৌশলী ভবন চত্বর, বটতলা, আমতলা চত্বরগুলো এক নতুন প্রাণ যেন ফিরে পায়। ক্যাম্পাসে পড়াশোনার পাশাপাশি বন্ধুদের মধ্যে আনন্দ উল্লাস সর্বদা লেগে থাকত, পাশাপাশি যে কোনো দিবসেই অনুষ্ঠান কিংবা আলোচনা সভা চলত। কোনো না কোনো বিভাগ বা যে কোনো শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা নানা আয়োজন করতো ক্যাম্পাসে। হাসি, ঠাট্টা বা ট্রিট নামক বড় ভাই-আপুদের নিকট আবদার কত কি না হতো! কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সব কিছুই এখন নিস্তব্ধ। প্রিয় ক্যাম্পাসে আজ নেই কোনো বর্ণিল রূপসজ্জা কিংবা আয়োজন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখন যেন একাকিত্বের বসবাস। প্রিয় ক্যাম্পাসে এখন নেই কোনো বিখ্যাত শিল্পীদের আনাগোনা, মঞ্চ কাঁপানো বা জমকালো অনুষ্ঠান কিংবা কোনো শীর্ষক সেমিনার।

চৌষট্টি জেলার শিক্ষার্থীদের এখানে মিলন মেলা ঘটে থাকে। মোহনার ন্যায় এখানে সবাই এক হয়ে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। কিন্তু বিশ্বের এই প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য কারও সঙ্গেই দেখা-সাক্ষাৎ করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া ক্যাম্পাসের চারদিকে এত উৎসবমুখর পরিবেশ থাকে শিক্ষার্থীদের ঘিরে, যেন মনে হয় ১৭৫ একরের এই অঙ্গনে প্রতিটি দিনই ইদ, প্রতিটি দিনই পূজা। সেই উৎসবমুখর পরিবেশে আবারো ফিরে যেতে চির উদগ্রীব সবাই।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

কুষ্টিয়া/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়