ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অ্যাসাইনমেন্ট বা অটোপাস নয়, সশরীরে পরীক্ষা চান শিক্ষার্থীরা

মোহাম্মদ রায়হান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৭, ১৭ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৮:২৫, ১৭ জুলাই ২০২১
অ্যাসাইনমেন্ট বা অটোপাস নয়, সশরীরে পরীক্ষা চান শিক্ষার্থীরা

দফায় দফায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সময় নির্ধারণ, অস্বাভাবিক কোভিড পরিস্থিতি, ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনা, সব মিলিয়ে যেন এক নাজুক অবস্থা। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নানা নির্দেশনা প্রকাশ করেন। 

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম পুনরায় শুরু হবে। ‘শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে'- তার উপর ভিত্তি করে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা কমে আসলে স্বাস্থ্য বিধি মেনে, সংক্ষিপ্ত পরিসরে, সংক্ষিপ্ত সময়ে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসএসসি এবং ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এইএসসি পরীক্ষা হতে পারে। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে পূর্ববর্তী শ্রেণির সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে অথবা অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে।

এমন সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে দেশের নানা প্রান্তের শিক্ষার্থীদের মাঝে।  তাদের বেশিরভাগই চান সশরীরে পরীক্ষা।  তবে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে মূল্যায়নকে সমর্থন করছেন এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম। সারাবছর পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরাই দাবি করছেন তাদের প্রকৃত মূল্যায়ন হোক, আর এটা অ্যাসাইনমেন্ট বা অটোপাসের মাধ্যমে সম্ভব নয়। 

এ বিষয়ে কথা হয় রাজধানীর সরকারি বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী মিরাজ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরাও অনিশ্চিয়তায় পড়ে গেলাম। নির্দিষ্টভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পরীক্ষার কথা বলা হচ্ছে, যদি পরিস্থিতি ভালো থাকে তাহলে। যদি খারাপ হয়, তাহলে অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে অথবা অটোপাস দেওয়া হবে। অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে পাস কিংবা সাবজেক্ট ম্যাপিংকে আমি সমর্থন করি না। শুধু আমি না, যারা এখনো বাসায় পড়াশোনা করছে, তারাও এই অটোপাস বা অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে পাসে সমর্থন করছে না।  আমরা সশরীরে পরীক্ষা চাই, সেটা স্বল্প পরিসরে হোক।

একই রকম মন্তব্য করেন সিরাজগঞ্জের কল্যাণপুর রওশনিয়া দাখিল মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার্থী আসিফুর রহমান। আসিফ বলেন, আমার মনে হয় পরীক্ষা নেওয়াটাই ভালো হবে। কেন না, পরীক্ষা না নিয়ে যদি আগের ফলাফলের অনুযায়ী পাস দিয়ে থাকেন, তাহলে দেখা যাবে যারা আগের পরীক্ষাগুলোতে খারাপ করেছিল, আর এখন ভালো করতে চান, প্রচুর পড়াশোনা করেছেন, এতে তাদের ফলাফলটা খারাপ হবে। তাদের সব কষ্ট বৃথা যাবে। 

সাভারের এক বেসরকারি স্কুলের শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ অনিক বলেন, আমরা এতদিন প্রচুর মানসিক চাপে ছিলাম। পরীক্ষা হবে কি হবে না, কিংবা হলেও কিভাবে হবে। সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তে কিছুটা হলেও আমাদের মানসিক চাপ কমছে। তবে আমরা চাই, স্বাস্থ্যবিধি মেনে নম্বর কমিয়ে হলেও সব সাবজেক্টে অন্তত পরীক্ষা হোক।  এতে আমাদের জন্যই ভালো হতো।  

এদিকে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন চান সোনাগাজী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রনি। কেন অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যয়ন চান, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বতর্মানে দেশের যে ভয়ঙ্কর অবস্থা, আর তার প্রকোপ না কমলে আমার মনে হয় না যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে পরীক্ষা নেওয়া উচিত। আমরা অনেক স্টুডেন্ট আছি, যাদের মহামারিতে কলেজে আসতে অনেক দুর্ভোগ হবে। তাই, সব দিক বিবেচনা করে, ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হোক।

ফেনী ওসমানীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাফিন বিন হাই। তিনি বলেন, অটোপ্রমোশন আমাদের জন্য কল্যাণকর নয়। তার প্রধান কারণ এর মাধ্যমে আমাদের সঠিক মূল্যায়ন হবে না। আমরা যারা পড়ালেখা করেছি অন্তত তাদের মূল্যয়ন হবে না।  অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন যদিও কাম্য নয়, তবে অটোপাসের চেয়ে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়নকেই আমি গুরুত্ব দেবো।

ছাগলনাইয়া সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী আসিফ ইসলাম বলেন, আসলে কোভিড-১৯ এর কারণে আমাদের পড়ালেখায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। কলেজ বন্ধ থাকার কারণে আমরা ক্লাস করতে পারিনি। আমাদের প্রথম বর্ষের পরীক্ষাও অনলাইন নেওয়া হয়েছে। যার কারণে আমাদের শিক্ষার সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। আর এখন কোনো পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারের উচিত, পরীক্ষার্থীদের যাতে সঠিক মূল্যায়ন হয়, সেই ব্যবস্থা নেওয়া।

ঢাকা/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়