ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জাহাঙ্গীরনগর যেন এক আনন্দ নগর

ইমন ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২২, ২৪ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৬:২৭, ২৪ জুলাই ২০২১
জাহাঙ্গীরনগর যেন এক আনন্দ নগর

ছবি: মোহাম্মদ আল আমিন, জাবি

মুঘল আমলে গড়ে ওঠা জাহাঙ্গীরনগরের নতুন রূপ আজকের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সম্রাট জাহাঙ্গীর তার রাজ্যের রাজধানী করেছিলেন তৎকালীন জাহাঙ্গীরনগরকে। যা ইতিহাসে ঢাকার পূর্ব নাম হিসেবে পরিচিত। কালের বিবর্তনে অতীতের গৌরব উজ্জল সেই জাহাঙ্গীরনগরের সমাপ্তি ঘটেছে অনেক আগেই। তবে সৃষ্টির এই লীলাখেলায় প্রকৃতির বুক চিরে আবির্ভাব ঘটেছে নতুন এক জাহাঙ্গীরনগরের, নাম তার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। 

আজকের এই জাহাঙ্গীরনগর অতীতের চেয়ে বেশ আলাদা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন তার সমস্ত ঐশ্বর্য নিয়ে ঘাঁটি গেড়েছে। বিচিত্র ধরনের গাছপালা থেকে শুরু করে পাখপাখালি, সরীসৃপ, বাহারি সব উদ্ভিদের অবস্থান এই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। 

জাহাঙ্গীরনগর নামটি শুনলেই মনের মধ্যে এক প্রকার অদ্ভূত আলোড়নের সৃষ্টি হয়। কবিতায় পড়েছি ঐ দেখা যায় তালগাছ ঐ আমাদের গাঁ, ঠিক এরকমই ওই দেখা যায় জাহাঙ্গীরনগর ওই আমাদের গাঁ। দেখে মনে হবে ইট পাথরের কর্কশ নগরীর মধ্যে এক টুকরো গ্রামীণ পরিবেশ। গ্রামীণ পরিবেশের সব উপাদান নিয়ে গড়ে উঠেছে স্বপ্নের জাহাঙ্গীরনগর। বাংলাদেশের সৌন্দর্যমন্ডিত জায়গা গুলোর মধ্যে একটি। ঘন গাছপালা আর পাখপাখালির মিশ্রণে একাকার এখানকার পরিবেশ।
    
আধুনিক সভ্যতার আদলে তৈরি হয়েছে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন প্রযুক্তির একই ধাঁচে নির্মিত। শহরের ভারি আবহাওয়ায় মলিন সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মসৃণ দেয়াল। ক্যাম্পাসে নেই কোনো প্রাণের সঞ্চার। আধুনিকতার কৃত্রিম সৌন্দর্য শিক্ষার্থীদের প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করেছে। শিক্ষার পরিবেশ প্রাকৃতিক হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। অথচ আধুনিক কৃত্রিম শিক্ষা আর কৃত্রিম ক্যাম্পাস জীবন শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাচ্ছে জটিল ও কঠিন পৃথিবীতে।

উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংযোজন করা যেন নতুনত্বের সৃষ্টিরই বহিঃপ্রকাশ। উচ্চ শিক্ষা শুধু প্রযুক্তিনির্ভর হলেই হয় না, এর সাথে দরকার প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য, যা উচ্চ শিক্ষা প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের জ্ঞানকে করে আরও বৈচিত্র্যময়। 

প্রকৃতি ও জীবনের এক অপার মেলবন্ধনের নাম জাবি ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসজুড়ে রয়েছে প্রকৃতির এক অপরূপ সমাহার। প্রকৃতির এই অপার লীলাখেলা বিস্তৃত ক্যাম্পাসজুড়ে। শুধু প্রকৃতি নয় বরং প্রকৃতি প্রদত্ত প্রাণীরাও যেন মেতেছে সেই খেলায়। 

আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ পুরো দেশ নির্লিপ্ত। চারদিকে শুধু কৃত্রিমতার ছড়াছড়ি। কোথাও যেন সামান্যতম প্রাকৃতিক নির্যাস নেই। মানুষ যেন কৃত্রিমতার দীর্ঘ ক্লান্তিময়তাকে দূর করতে খুঁজে চলেছে প্রাকৃতিক কোমলতা। আর এই কোমলতাকে বিলিয়ে দিতে প্রকৃতির বুক চিরে আবির্ভাব ঘটেছে এক বিচিত্র নগরের।

জাহাঙ্গীরনগর নামটি শুনলেই মানুষের মনে শান্তির সঞ্চার ঘটে। কারণ এই নগর অতীতে যেমন রাজধানী হিসেবে সমৃদ্ধ অর্জন করেছিল, ঠিক তেমনি সভ্যতার বিবর্তনে বর্তমানে শহরের অক্সিজেন হিসেবেও সমধিক প্রসিদ্ধ। সারি সারি গাছপালার সম্মিলিত হাওয়া মানুষের দীর্ঘ ক্লান্তিময়তাকে দূর করে মনের মধ্যে একপ্রকার সজীবতা দান করে। ছোট বড় লেকগুলোর মধ্যে ফুটে উঠেছে কল্পনার লালপদ্ম। পাখিদের কিচিরমিচির ডাকে ভড়ে উঠেছে চারপাশ। শিল্পীরা রঙ তুলি হাতে নিয়ে বসে পড়েছে মনের মাধুরী মিশিয়ে স্বপ্নের জাহাঙ্গীরনগরকে আঁকবে বলে। পিচঢালা পথে আলপনার ছড়াছড়ি মুগ্ধ করেছে পথের পথিককে। 

ইট-কাঠের এই রঙিন দুনিয়া যেন মানুষের মনকে বিষিয়ে তুলেছে। প্রকৃতি বরাবরই মানুষকে মানবিকতার শিক্ষা দেয়। মানুষ প্রকৃতির কাছে না গেলে বুঝতে পারে না প্রকৃত জীবনের রোমাঞ্চকর মুহূর্ত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশ আলাদা। আর এর পেছনে রয়েছে এর রূপ বৈচিত্র্যর সমাহার। জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসে রয়েছে অগাধ প্রাকৃতিক সম্পদ। যে সম্পদ বিশ্ববিদ্যালয়কে করেছে বেশ সমৃদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে রয়েছে অগাধ প্রজাতির গাছপালা। যে গাছপালাগুলো ক্যাম্পাস জুড়ে অক্সিজেন সরবরাহ করছে। প্রাকৃতিক হাওয়ায় শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বসিত হচ্ছে। 

ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য শিক্ষাকে করেছে আরও সমৃদ্ধ। ক্লাসের একঘেয়েমি পড়াশোনায় প্রকৃতি এনেছে নতুনত্ব। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, জাহাঙ্গীরনগর যেন এক আনন্দ নগর।

লেখক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

জাবি/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়