ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

হৃদয়ে বন্ধুত্ব, মননে বিশ্বাস 

কে এম নেছার উদ্দিন  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৪, ৪ আগস্ট ২০২১  
হৃদয়ে বন্ধুত্ব, মননে বিশ্বাস 

নেছার, অবনী, ফাইয়াজ, সজীব, নেয়ামত ও মাইশা, তারা ৬ বন্ধু। নেছার আর অবনী খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু, তাদের মধ্যে অন্তরঙ্গতা একটু বেশি, একসঙ্গে চলেন, হাঁটেন, রেস্টুরেন্টে একইসঙ্গে খান। কোথাও ঘুরতে গেলে একইসঙ্গে যান, আবার তাদের মধ্যে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়া, খুনসুটিও হয়। বন্ধুত্বের মাঝে এমন একটু হয়েই থাকে, এভাবে আবার মিলে যান তারা।

যাই হোক, একবার তাদের মাঝে দারুণ ঝগড়া লেগে গেলো। প্রত্যেকবার বন্ধুত্ব জোড়া লাগলেও এবার ঘটনা ভিন্ন। নেছার কোথাও যাচ্ছিলেন, হঠাৎ তার ফোন বেজে উঠল। ওপাশ থেকে ফাইয়াজ জানালেন, তার ছোট ভাই সজীব এক্সিডেন্ট করছে, দ্রুত আসতে হবে, নেছার দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখলেন ফাইয়াজের ভাইয়ের পা ভেঙ্গে গেছে। লোকজন শুধু পাশে জড়ো হয়ে আছেন, কিন্তু কেউ তাকে সাহায্য করছেন না।  

বন্ধু অবনীকে ফোন দিলেন, ফোন বাজছে কিন্তু ধরছেন না। নেছার আবার ফোন দিলেন। একই অবস্থা, ফোন তুলছেন না। এদিকে ফাইয়াজের ভাই সজীবের করুণ অবস্থা, তাকে দ্রুত হসপিটালে নিতে হবে। নেছার ভেবেছিলেন অবনী পৌঁছালে দু’জন মিলে সজীবকে হসপিটালে নিয়ে যাবেন কিন্তু একটা কথা আছে ‘বিপদে বন্ধুর পরিচয়’ সবাই দুধের মাছি। বিপদের সময় কাউকে পাওয়া যায় না। এটাই বাস্তবতা। এদিকে অবনী একটা অনুষ্ঠানে ছিলেন, ফোনটা একবার ধরেও দেখলেন না। 

শুধু স্ক্রিনে নেছারের নামটা দেখে সাইলেন্ট করে ফোন রেখে দিলেন। নেছার অবনীকে ২০টি কল দিয়ে না পেয়ে ম্যাসেজ দিলেন৷ বন্ধু কোথায় তুই? তাড়াতাড়ি আয়, সজীব এক্সিডেন করছে কিন্তু অবনীর ফোন সাইলেন্ট থাকায় টের পাননি ম্যাসেজের আওয়াজ। 

ভেবেছিলেন ও নেছার তো! কী জন্য আর কল দেবে, আমি তো জানি। হয়তো বলবে দোস্ত চল, একটা ট্রিট দেওয়া যাক অথবা বলবে চল অমুকখানে ঘুরে আসি। এইসব ভেবে অবনী কল ধরেননি।

ওদিকে নেছার ও দুই ভদ্রলোক নেয়ামত ও মাইশার সাহায্য নিয়ে সজীবকে হসপিটালে নিয়ে গেলেন। নেছারের বাবা জীবিত নেই, পরিবারের সব খরচ তাকেই চালাতে হয়, অবনীরা অনেক ধনী, এই মুহূর্তে নেছারের হাতে তেমন টাকা নেই, তাই ভেবেছিলেন অবনীকে কিছু টাকা নিয়ে আসতে বলবেন। কিন্তু অবনীকে আর বিপদের সময় পাওয়া গেলো না।

অবনী ভাবলেন যদি এখন নেছারকে কল দেই তাহলে ও রেগে যাবে। আর হসপিটালেই বা যাবো কীভাবে? কোন হসপিটালে ওরা আছে সেটাও তো জানি না। 

যাই হোক, সাত-পাঁচ না ভেবে অবনী নেছারের আম্মুকে কল দিলেন। রিসিভের পর অবনীর কান্নার আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই শুনতে পেলো না। তবুও জিজ্ঞেস করলো-আন্টি ওরা কোন হসপিটালে আছে? জবাবে এলো ‌‌'ইবনে সিনা' এরপর অবনী তার বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে হসপিটালে চলে আসলো, এতে সে জানতে পারলো সজীবের দু'টো পা-ই ভেঙ্গে গেছে। ব্যান্ডেজ করাও হয়ে গেলো কিন্তু হসপিটালের টাকা পরিশোধ করা হয়নি, অবনী নেছারের সাথে দেখা না করে ডাক্তারের সাথে কথা বলে এবং হসপিটালের পুরো টাকা পরিশোধ করে চলে আসলো।

ওদিকে নেছার কিভাবে এত টাকা পরিশোধ করবে, সে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় কিন্তু একটা নার্স এসে বললেন, আপনাদের কোন চিন্তা করতে হবে না এক ভদ্র মেয়ে এসে সব টাকা পরিশোধ করে চলে গেছেন।

নেছারের এবং বাকীদের মনে প্রশ্ন জাগলো কে সে? নার্স একটা রিসিভ দেখালো যেটাতে অবনীর নাম লেখা। নেছার ও পাশের বন্ধুরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না চোখ থেকে কয়েক ফোটা অশ্রু চলে এলো। অবশ্যই এ অশ্রু দুঃখের নয় কৃতজ্ঞতা প্রাপ্তির। নেছার হসপিটালে ওর মাকে রেখে গেলো সজীবের পরিচর্যার জন্য কারণ হসপিটালে সজীবকে কয়েকদিন রাখতে হবে।

আর নিজে চলে এলো অবনীর বাসায়। অবনী দরজা খুলে নেছারকে দেখতে পেয়ে দু'জনে কুশল বিনিময় করলো। নেছার বললো তুই এতো ভালো কেন বন্ধু? আমি তো ভাবছিলাম তোর সাথে আর বন্ধুত্ব রাখবো না। অবনী বললো, আরে পাগলা বন্ধু আমি তো ভেবেছিলাম তুই আড্ডা দেওয়ার জন্য কল করছিস। আর সেখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান চলছিল, তাই তোর কলের চেয়ে অনুষ্ঠানের গুরুত্ব বেশি দিয়েছিলাম।

নেছার বললো, তাহলে এখন চল আড্ডা দেব। নেছার, মাইশা, নেয়ামত, অবনী, সজীব সবার মুখে আবার হাসি ফুটেছে। সত্যিকারের বন্ধুত্ব কখনোই ভাঙে না। অদৃশ্য এক আঠা অনেকটা অজানা ভাবেই জোড়া দিয়ে রাখে বন্ধুত্ব৷ হয়তো মাঝে সাঝে হয় মনমালিন্য বা সম্পর্কের অবনতি। কিন্তু, শেষ হাসিটাই বন্ধুত্বের প্রশ্নে সব মিলিমিশে একাকার।  চির অটুট থাকুক সবার বন্ধুত্ব। জয় হোক বন্ধুত্বের। 

লেখক: শিক্ষার্থী, বিএএফ শাহিন কলেজ, তেজগাঁও, ঢাকা।

অন্যয়/মাহি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়