ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

খবরই যার ভালোবাসা 

সাজেদুর আবেদীন শান্ত  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০১, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১  
খবরই যার ভালোবাসা 

পেশাগত দায়িত্বে তরুণ সাংবাদিক সাদিক ইভান

নিয়মিত খবর পড়ার মতো দায়িত্বশীল কাজটি সাধারণত বড়রাই করে থাকেন। কিন্তু স্কুলে পড়ার সময়েই সেটা তার শখ আর ভালো লাগার কাজে পরিণত হয়ে যায়। বলছি তরুণ সাংবাদিক সাদিক ইভানের কথা। 

২০১৪ সালে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকাকালীন সংবাদপত্রে লিখতে শুরু করেন তিনি। এরপরের বছর শিশু সাংবাদিকতার মাধ্যমে মূল ধারার গণমাধ্যমে নিয়মিত কাজ শুরু করেন। সংবাদপত্র, রেডিও এবং টেলিভিশনেও তিনি কাজ করেছেন৷ পেয়েছেন জাতিসংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফের তিনটি অ্যাওয়ার্ড, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রজ্ঞার সাংবাদিকতা পুরস্কারও।

সাদিক ইভান রাজধানীর ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছেন। পাশাপাশি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে 'হ্যালো' বিভাগের কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কর্মরত।

গাজীপুরে বেড়ে ওঠা সাদিক ইভানের ছোটবেলা থেকেই ছিল পত্রিকা পড়ার অভ্যাস। তার বাবা চাইতেন ছেলে দেশ ও বিশ্ব  সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিয়ে বড় হবে। এজন্য তিনি নিয়মিত পত্রিকা এনে দিতেন। এক পর্যায়ে খবরের কাগজে লেখালেখির প্রতি আগ্রহ জাগে ইভানের। ২০১৪ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের কচিকাচার আসর তার সেই ইচ্ছা পূরণও করে দেয়। এরপর ২০১৫ সালে বিডিনিউজের হ্যালোতে শিশু সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি সহশিক্ষা হিসেবে শিশু সাংবাদিকতা করেন চার বছর। 

এ প্রসঙ্গে সাদিক ইভান বলেন, আমার জন্য উপযুক্ত এমন আরও কিছু প্ল্যাটফর্ম আমি খুঁজতে থাকি। একদিন চোখে পড়ে- শিশু সাংবাদিক হতে চাইলে আবেদন করো। আমি সেই ফরমে সব তথ্য দেই। এরপর আমাকে কল করে জানানো হলে আমি কাজ শুরু করি৷

কী ধরনের কাজ করতেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার আবেদন গ্রহণের কয়েকদিন পরই আমি একটি সরেজমিন প্রতিবেদন তৈরি করি। গাজীপুরের বেশ কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উপজেলা শিক্ষা অফিস ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরতে হয়েছিল আমাকে। যেখানে তুলে ধরি, গ্রামের সরকারি স্কুলের শৌচাগারের শোচনীয় অবস্থা। শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না, তালা দেওয়া থাকে৷ এগুলো ব্যবহার করেন শুধু শিক্ষকরা। চিকিৎসক বলেছেন, চার ঘণ্টার বেশি প্রস্রাব আটকে রাখলে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে শিশুদের। আমার প্রথম সরেজমিন প্রতিবেদনটি পড়ে অনেকেই প্রশংসা করেন। এতে আমি কাজ করার আরও উৎসাহ পাই।

শিশু সাংবাদিকতা যেহেতু কোনো পেশাদার সাংবাদিকতা নয়, তাই কাজের বাধ্যবাধকতা ছিল না। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে সপ্তাহে অন্তত তিনটি প্রতিবেদেন তৈরি করার চেষ্টা করতেন বলে জানান সাদিক ইভান। এর সঙ্গে অবসর সময়কে অপচয় না করে আরও বেশি কীভাবে কাজে লাগানো যায় সেই চেষ্টাও করতে থাকেন। নতুন নতুন অভিজ্ঞতা তৈরি তার একটি নেশা হয়ে যায়, অন্যান্য গণমাধ্যমেও কাজ করার উপায় খুঁজতে থাকেন। তার ইচ্ছাটি সত্যিও হয়ে যায়। কাজ করার সুযোগ পান বেসরকারি বেতার চ্যানেল এশিয়ান রেডিও ৯০.৮ এফএমে। কর্তৃপক্ষ তাকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেয়। অল্প কিছু দিনের মাথায় এই প্রতিষ্ঠানের হয়ে পুরস্কারও জিতে আনেন তিনি।

সাদিক ইভান বলছিলেন, লেখালেখির সঙ্গে সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে শিখব এটাও আমার একটি লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। এশিয়ান রেডিও আমাকে সেই সুযোগ দিয়েছে। প্রমিত বাংলায় কথা বলা, কণ্ঠস্বরের প্রস্তুতি ও উপস্থাপনা নানা কৌশল আমি শিখতে পেরেছি এখানে। আমি সবার চেয়ে বয়সে ছোট ছিলাম, তাই তারা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে আমাকে শিখিয়েছে এবং ক্যারিয়ার সম্পর্কে নানা পরামর্শ দিয়েছে। এভাবে দিন দিন আমার আত্মবিশ্বাস শুধু বাড়ছিলই।

এদিকে দিন যতই যাচ্ছিল, এগিয়ে আসছিল তার এইচএসসি পরীক্ষা। প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আরেকটু বেশি পরিশ্রম করতে হত তাকে। এরমধ্যে নতুন আরেকটি কাজের সুযোগ পান তিনি। যুক্ত হন নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক সংস্থা ‘ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড’ কর্তৃক তৈরি শিশুকিশোরদের মতামত ও সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন অনুষ্ঠান কানেস্তারায়। অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হতো কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলে।

সাদিক ইভান বলেন, অনুষ্ঠানটি ছোটদের কথা তুলে ধরতো, কিন্তু নির্মাণ করতো বড়রা। তাই তারা আমার বয়সী ভয়েস ওভার আর্টিস্ট খুঁজছিল এবং সৌভাগ্যক্রমে সেই সুযোগটা পেয়ে যাই আমি। এরপর থেকে নিয়মিত ভয়েস দিতাম ওই প্রোগ্রামে। একটা পর্যায়ে আমি নিজে প্রতিবেদন তৈরি করতে চাইলে তারা সেই সুযোগটিও করে দেয় আমাকে। প্রতিষ্ঠানটি আমাকে মাসিক ভিত্তিতে সম্মানি দিতো। এটিই ছিল আমার প্রথম ইনকাম সোর্স।

সাদিক ইভান তার কাজের প্রতি ছিলেন কঠোর। সময়কে অপচয় করার তুলনায় বেশি পছন্দ করেন কাজের সঙ্গে সময় কাটাতে। কাজে ভালোবাসার স্বীকৃতিও পেয়েছেন তিনি। ২০১৬ সালে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ইউনিসেফের মিনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পান তিনি। রেডিও বিভাগে একটি এবং প্রিন্ট ও অনলাইন বিভাগে দুটি অ্যাওয়ার্ড জমা হয় তার ঝুলিতে। ২০১৭ সালে ইউনিসেফের আরেকটি অ্যাওয়ার্ড পান তিনি। শুধু তাই নয়, একই বছর ‘প্রজ্ঞা তামাক নিয়ন্ত্রণ সাংবাদিকতা পুরস্কার’ পান সাদিক ইভান।

পড়াশোনা ও পেশাগত দায়িত্ব দুটোই একসঙ্গে চালিয়ে যাওয়ায় তাকে বড় একটা সময় এখন ব্যস্তই থাকতে হয়। সমাজ উন্নয়নমূলক কাজেও তার ভূমিকা রয়েছে। সবকিছুর ভিড়ে দুটি সামাজিক সংগঠনের সঙ্গেও কাজ করছেন। তিনি মানুষ ও দেশের জন্য কিছু করতে চান।

লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী।

/মাহি/ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়