ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্ব দিচ্ছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১০, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১৯:১৮, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্ব দিচ্ছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপনের জন্য শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অনেকের মধ্যেই অসচেতনতা রয়েছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরাও তার ব্যতিক্রম নয়। শিক্ষাজীবন নিয়ে হতাশা, ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকে শুরু করে অধুনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার নিয়ে নানা ধরনের মানসিক সংকটে থাকা শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম নয়।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ দপ্তরের আওতায় ‘মানসিক স্বাস্থ্যসেবা’ বিভাগের পরিসংখ্যানও তাই বলছে। পরিসংখ্যান অনুসারে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী মানসিক সংকটে ভুগছেন। যাদের বেশিরভাগেরই একাডেমিক রেজাল্ট ফল, পারিবারিক কলহ, প্রেমঘটিত সম্পর্কের মতো সমস্যা।

মানসিক স্বাস্থ্য সংকটে ভোগা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিতেই জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তর ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে এই সেবা দেওয়া শুরু করে। জানা গেছে, শুরুর দিকে এখানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম ছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংকোচ কাটিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের আন্তরিকতা, স্বচ্ছন্দ সেবাদান পদ্ধতি এবং বিনামূল্যের সেবার কারণেই তারা দ্বিধা কাটিয়ে মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় সহপাঠীদের মধ্যে যারা মানসিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তারা এই সেবার মাধ্যমে সংকট কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে।

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে পাওয়া তথ্য বলছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এই কেন্দ্র থেকে ২১১ জন শিক্ষার্থীর পাশাপাশি দলগত কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে অনেকেই সেবা দেওয়া হয়েছে। সেবা গ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় নব্বই শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী সেবা নেওয়ার পর মানসিক স্বাস্থ্য সংকট কাটিয়ে উঠতে পেরেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজিস্ট আদিবা আক্তার জানান, এখন পর্যন্ত তাদের কাছ শিক্ষার্থীরা যে সমস্যাগুলোর জন্য এসেছে তার মধ্যে হতাশা, পারিবারিক কলহ, পরিবেশের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা, ধর্মীয় সমস্যা, অতিরিক্ত চিন্তা, ক্যারিয়ার, যৌন হয়রানি, মুড সুইং, আত্মবিশ্বাসের অভাব, মৌলিক চাহিদার অপূর্ণতা, মানসিক চাপ, প্যানিক ডিজঅর্ডার, ফোবিয়া ডিজঅর্ডার, প্রেমঘটিত সম্পর্ক, শারীরিক সমস্যা, হতাশা, পর্যাপ্ত ঘুমের ঘাটতি, আর্থিক অসচ্ছলতা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার উল্লেখযোগ্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানান, শিক্ষার্থীদের সমস্যা শোনার পর তাদের সমস্যার ধরন অনুসারে কাউন্সেলিং করে থাকি। প্রতিটি ব্যক্তিগত সেশনে সর্বনিম্ন ৪৫ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত সময় নেওয়া হয়। প্রয়োজন হলে গ্রুপ সেশন নেওয়া হয়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একাধিক সেশনে চিকিৎসা নেয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, বাইরে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। শিক্ষার্থীদের সবার আর্থিক অবস্থা এক নয়। অনেকে বিষয়টি ততটা গুরুত্বের সঙ্গেও নেয় না। ফলে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কাছে যেতে অনীহা তৈরি হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়। পাশাপাশি চিকিৎসকরাও অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সমস্যার কথা শোনেন এবং চিকিৎসা দেন। এ কারণেই মানসিক সমস্যাতেও সেবা নিতে আগ্রহ বাড়ছে শিক্ষার্থীদের। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের প্রধান অধ্যাপক ড. তপন কুমার বলেন, আমরা শুরুর দিকে যখন এই সেবা দেওয়া শুরু করি অনেকের মধ্যে অনীহা ছিল। তাদের ব্যক্তিগত সমস্যা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করত না। কিন্তু এখন এ সেবা নেওয়ার চাহিদা বহুলাংশে বেড়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগে জনশক্তি বাড়াতে না পারায় চাপ বাড়ছে বর্তমানে কর্তব্যরতদের উপর। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে আরও বরাদ্দ প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।

তৈয়ব শাহনূর/ফিরোজ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়