ঢাকা     রোববার   ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২২ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

দেশপ্রেমিক সালেহ চৌধুরী বেঁচে থাকবেন ইতিহাসে 

পারভেজ হুসেন তালুকদার  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:১২, ২৮ অক্টোবর ২০২৩  
দেশপ্রেমিক সালেহ চৌধুরী বেঁচে থাকবেন ইতিহাসে 

সালেহ চৌধুরী এক স্মরণীয় ও বিনম্র শ্রদ্ধায় হৃদয়ে বরণীয় সুপুরুষের নাম। যিনি ১৯৩৬ সালের ১১ নভেম্বর জন্মেছিলেন সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার গচিয়া গ্রামে। সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে খ্যাতিমান সালেহ চৌধুরী ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, লেখক, চিত্রশিল্পী, কার্টুনিস্ট ও ভাস্কর। ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য এবং কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের নির্বাচিত সভাপতি।

হাওর অঞ্চলের বরেণ্য এই সিংহ পুরুষের লেখাপড়া শুরু হয়েছিল নিজ গ্রামে। পরবর্তীতে মৌলভীবাজার ও সিলেটে এবং সবশেষে লাহোরে শিক্ষা-জীবন অতিক্রম করেন তিনি। ভাষা আন্দোলনকালে তিনি ছিলেন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। সারা পূর্ব পাকিস্তান তখন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জোয়ারে। তখন থেকেই তার দেশপ্রেমের দৃঢ় সূচনা। 

কলেজে লেখাপড়াকালে জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে শিক্ষা-জীবন সমাপ্তের পরে যোগ দিয়েছিলেন সাংবাদিকতায়। 
সাংবাদিক সালেহ চৌধুরীই প্রথম সাংবাদিক, যিনি ছয় দফা আন্দোলনের খবর প্রকাশ করেছিলেন। সেদিন সালেহ চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন আবদুল গাফফার চৌধুরীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু সালেহ চৌধুরীর অফিসে এই খবরটি প্রকাশের জন্য বলেছিলেন।

১৯৬৯ সালে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গী হয়ে ঘুরেছিলেন সারা পূর্ব-বাংলা। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হলে তাৎক্ষণিক সুনামগঞ্জে দিরাইয়ে ফিরে অংশ নিয়েছিলেন মুক্তিবাহিনীতে। টেকেরঘাট সাব-সেক্টরে রেখেছিলেন বিশেষ অবদান। তিনি আঞ্চলিক সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বীরত্বের সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন দিরাই, শাল্লাসহ ভাটি অঞ্চলে সংঘটিত যুদ্ধসমূহে। 

বাংলাদেশ স্বাধীনের পর দৈনিক বাংলার সহকারী সম্পাদক হিসেবে তিনি আবারও যোগ দেন সাংবাদিকতায়। তিনিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন প্রাঙ্গণের অপরাজেয় বাংলা’র নামকরণ করেছিলেন। নামকরণ করেছিলেন সুনামগঞ্জের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাঠাগারেরও। সিলেটে অবস্থিত উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে বিশেষ অবদান রাখায় পেয়েছিলেন আজীবন সদস্য হবার সম্মান।

একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি কোনো রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগ করেননি। বরং প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা-ভাতা দিয়ে স্থাপন করা করেছিলেন স্মৃতিস্তম্ভ। জীবদ্দশায় তিনি তিনটি স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন করতে পেরেছিলেন। তাঁর উদ্যোগে কাজ শুরু হওয়া আরও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণাধীন রয়েছে। তাছাড়াও ব্যাক্তিগতভাবে নিজ গ্রামে কৃষি খাতে প্রথম সুধমুক্ত ঋণ প্রচলন করেছলেন তিনি। 

কবি শামসুর রাহমান ও কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ঘনিষ্ঠতম ব্যক্তি সালেহ চৌধুরী একজন সুলেখকও বটে। জীবিত অবস্থায় তিনি তাঁর অনেকগুলো বই প্রকাশ করেছিলেন। সম্পাদনা করেছিলেন  হুমায়ূন আহমেদের বেশ কয়েকটি গ্রন্থ এবং বঙ্গবন্ধুর একটি স্মারকগ্রন্থ।

সালেহ চৌধুরী পারিবারিক জীবনে দিরাইয়ের ৩নং রাজানগর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার রাজা চৌধুরীর ছোটভাই। ব্যক্তিগত জীবনে তিন পুত্র-সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম শাহেরা চৌধুরী। তিনি বেসরকারি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণফোনের প্রথম বাংলাদেশি সিইও ইয়াসির আজমান চৌধুরীর পিতা।

দেশপ্রেমের আদর্শ বুকে ধারণ করা এই বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর ৮১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় চিরনিদ্রায় সমাহিত হন নিজ গ্রাম গচিয়া'য়। ভাটি বাংলার এই সাহসী সন্তান বেঁচে আছেন বাংলার আকাশে বাতাসে, বেঁচে আছেন ইতিহাসে। তিনি বেঁচে থাকবেন ততদিন, বাংলাদেশ বাঁচবে যতদিন।

লেখক: শিশু সাহিত্যিক ও শিক্ষার্থী, সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ।

পারভেজ/মেহেদী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়