ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

শিক্ষা ক্যাডারে ষষ্ঠ হাফেজ আবদুর রহমান

ইদুল হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৬, ৮ জানুয়ারি ২০২৪  
শিক্ষা ক্যাডারে ষষ্ঠ হাফেজ আবদুর রহমান

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবদুর রহমান। সম্প্রতি ৪৩তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছেন। তার শৈশব ও বেড়ে ওঠা ময়মনসিংহের ইশ্বরগঞ্জ উপজেলার চণ্ডিপুর গ্রামে। তার পিতা ড. মো. গিয়াস উদ্দিন ছিলেন সপ্তম বিসিএস ক্যাডার। আবদুর রহমান ২০১২ সালে ময়মনসিংহের আল আরাবিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল এবং ২০১৪ সালে টংগীর তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম সম্পন্ন করেন। এরপর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি সিএজি কার্যালয়ের অডিটর পদে কর্মরত আছেন।

তিনি বিসিএস ক্যাডারের পাশাপাশি পবিত্র কুরআনের হাফেজও বটে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তার গ্রামের হাফেজিয়া মাদ্রাসা থেকে পবিত্র কুরআন হেফ্জ করেন। বিসিএস নামক দুর্গম যাত্রায় তার সাফল্যের গল্প ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানিয়েছেন রাইজিংবিডিকে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন রাইজিংবিডির ইবি সংবাদদাতা ইদুল হাসান।

রাইজিংবিডি: ৪৩তম বিসিএসে ক্যাডার হয়ে আপনার অনুভূতি কেমন?

আবদুর রহমান: আলহামদুলিল্লাহ, খুবই ভালো লাগছে। কারণ বিসিএসের মতো দেশের সর্বোচ্চ সরকারি চাকরি করার জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। আবার একদিকে ভয়ও হচ্ছে! কারণ আমার উপর যে গুরু দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, তা যথাযথভাবে আদায় করতে পারবো কিনা! এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা আমার নৈতিক কর্তব্য।

রাইজিংবিডি: আপনার ছোটবেলা কেমন কেটেছে?

আবদুর রহমান: ছোটবেলা খুব আনন্দ-উচ্ছ্বাসের সঙ্গেই কেটেছে। বাল্যকাল গ্রামের হাফেজিয়া মাদ্রাসায় কেটেছে। সেখানে ১৩ বছর বয়সে পবিত্র কুরআনের হেফ্জও সম্পন্ন করি। বিসিএসের মতো তখনও পড়াশোনায় খুব আগ্রহী থাকতাম। চার ভাইবোনের মধ্যে আমি সবার কনিষ্ঠ। এজন্য পরিবারের আদর একটু বেশি পেয়ে বেড়ে ওঠেছি।

রাইজিংবিডি: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধতা ছিলো?

আবদুর রহমান: বাবা ছিলেন সপ্তম বিসিএস ক্যাডার। তাই পরিবারে কোনো আর্থিক জটিলতা ছিলো না। তাই বলা যায়, আলহামদুলিল্লাহ কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখামুখি হইনি।

রাইজিংবিডি: কখন ও কিভাবে বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করলেন?

আবদুর রহমান: অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ হওয়ার পর বিসিএস সিলেবাস অনুসরণ করে গণিত ও ইংরেজি অধ্যয়ন শুরু করি এবং চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত চলমান ছিলো। এরপর কুষ্টিয়াতে একটি কোচিং এ ভর্তি হই। তখন পুরোদমে সব বিষয়ে প্রস্তুতি শুরু করি। ক্যাম্পাসের বন্ধের দিনগুলোতে ৮-১০ ঘন্টা পর্যন্ত পড়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতাম। অন্য দিনগুলোর অবসর সময়টুকু পড়ায় লিপ্ত থাকতাম। বলা যায় টানা ৬ বছর এভাবে প্রস্তুতি নিতে থাকি।

রাইজিংবিডি: কি আপনাকে সফল হতে প্রেরণা দিয়েছে?

আবদুর রহমান: আমাদের পরিবারে সরকারি চাকরিজীবী অনেক। তাদের দেখে দেখে বড় হয়েছি। এদিক থেকে বলা যায়, তারাই আমার অনুপ্রেরণা। এছাড়াও বিভাগের সাইফুল ও ইলিয়াস স্যার ধর্মতত্ত্ব থেকেও যে সরকারি চাকরি তথা বিসিএস ক্যাডার হওয়া যে সম্ভব, এ বিষয়ে আমাদের সবসময় দিকনির্দেশনা দিতেন। তাদের পরামর্শও সফল হতে আমার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। বিশেষভাবে স্মরণ করতে চাই বিভাগের হিজবুল্লাহ স্যারকে। তিনি আমাকে নৈতিকভাবে ঠিক থাকতে সবসময় অনুপ্রেরণা ও পরামর্শ দিয়ে গেছেন। আমার স্ত্রীও আমার জন্য বড় অনুপ্রেরণা ছিলো। বিভিন্নভাবে আমাকে সমর্থন দিয়ে গেছেন।

রাইজিংবিডি: বিসিএস ক্যাডার প্রত্যাশীদের জন্য কিছু বলুন।

আবদুর রহমান: বিসিএস অনেক লং জার্নি। এই পথে সফল হতে হলে ধৈর্যের সঙ্গে বন্ধুত্ব আবশ্যক। তবে সবার আগে চাই নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়া। আমি কি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসেই ক্যারিয়ার গড়তে চাই কিনা? যদি তাই হয়, তাহলে অন্য সব বিকল্প চিন্তা বাদ দিয়ে পুরোপুরিভাবে বিসিএসের দিকে মনোযোগী হতে হবে। অন্তত একটা বিসিএস পর্যন্ত ধৈর্য্য টিকিয়ে রাখতে হবে এবং সবসময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে।

রাইজিংবিডি: প্রিলি, রিটেন ও ভাইভা নিয়ে আপনার কি পরামর্শ?

আবদুর রহমান: বিসিএস সাধারণ পরীক্ষা নয়। এজন্য প্রতিটি বিষয়ে মৌলিক গভীর জ্ঞান থাকা দরকার। এজন্য নিয়মিত পত্রিকা ও বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। অনার্স চতুর্থ বর্ষ থেকেই পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু করা যেতে পারে। বিসিএসের প্রিলি সিলেবাস আগে ভালোভাবে বুঝে তারপর সে অনুযায়ি পড়াশোনা করতে হবে। সবকিছু পড়ে সম্পন্ন করার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। তবে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, যতটুকু পড়েছি ততটুকু যেন ভালোভাবে রিভিশন দেওয়া যায়। পিএসসির বিগত বছরের সব প্রশ্ন খুব ভালোভাবে অধ্যয়ন করতে হবে। রিটেনের জন্য ইংরেজিতে ফ্রি-হ্যান্ড রাইটিং এর অভ্যাস করতে হবে। নিয়মিত পত্রিকা পড়লে এবং বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের উপর বই পড়া থাকলে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে ভালো নম্বর পাওয়ার সুযোগ থাকে। আর গণিতের ক্ষেত্রে উচ্চতর গণিত বেশিবেশি প্র‍্যাক্টিস করার বিকল্প নেই। ভাইভার জন্য মানসিক প্রস্তুতি সবচেয়ে বেশি জরুরি। কয়েকটা মক ভাইভা দেওয়া যেতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি জরুরি আত্মবিশ্বাস।

রাইজিংবিডি: চাকরিপ্রার্থীদের বিসিএস ক্যাডার হওয়া একমাত্র লক্ষ্য থাকা উচিত কিনা?

আবদুর রহমান: বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস সরকারি চাকরিগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম সম্মানজনক সেক্টর। যারা সরকারি চাকরিতেই নিজেদেরকে ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাদের জন্য এই সেক্টর অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। কিন্তু অনেকের অন্যান্য সেক্টরেও আগ্রহ থাকতে পারে। আমি মনে করি, যার যে পেশায় আগ্রহ রয়েছে, সেই পেশাতেই ভালো ক্যারিয়ার তৈরি করার চেষ্টা করা উচিত। এতে নিজের ইচ্ছার প্রতিফলন ও জনগণের সেবা উভয়টাই করা সম্ভব।

রাইজিংবিডি: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

আবদুর রহমান: চাকরিতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা আছে। কারণ, জীবনের প্রথম থেকে শিক্ষকতার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। উচ্চশিক্ষা অর্জনের চেষ্টা চালিযে যাবো। এ সেক্টরে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ায় চেষ্টা করবো।

/মেহেদী/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়