ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

নতুন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রত্যাশা

ক্যাম্পাস ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১৩, ১১ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ২২:০২, ১১ জানুয়ারি ২০২৪
নতুন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রত্যাশা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হয়েছে গত ৭ জানুয়ারি। এরই মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও ২৫ জন পূর্ণ মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রীর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন এ মন্ত্রিসভা বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে শপথ নেন। তবে এখনো কে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তা জানা যায়নি।

এর আগের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছিলেন ডা. দীপু মনি। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের পর গত ৬ জানুয়ারি ২০১৯ থেকে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গতকাল বুধবার প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী তার মন্ত্রী হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় স্থান পাচ্ছেন তিনি।

তবে, তার দায়িত্বকালে শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাপক রদবদল হয়, যা আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি করে। এবারের নতুন শিক্ষামন্ত্রী কে হতে পারেন এবং তার কাছে কী প্রত্যাশা- এসব জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথিতযশা শিক্ষকগণ।

বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সদ্য সাবেক অধ্যাপক ও বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব মলয় কুমার ভৌমিক বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বেসিক যে সমস্যাগুলো আছে, যেমন- কোচিং বাণিজ্য, প্রশ্নফাঁস, গবেষণায় বাজেট কম, নিয়োগে দুর্নীতিসহ বিভিন্নরকম অব্যবস্থা যে শক্ত হাতে দূর করতে পারবে এমন কোনো ব্যক্তিই আসা উচিৎ। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ পরপর দু'বার এই দায়িত্বে ছিলেন। তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রহিম বলেন, আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবার আগে স্মার্ট সিটিজেন প্রয়োজন। সেজন্য আমাদের প্রত্যাশা আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর এবং গবেষণাধর্মী শিক্ষা। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয় বরং শিক্ষার রুট লেভেল থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে হবে। নতুন শিক্ষা মন্ত্রীর কাছে এটাই প্রত্যাশা যে, তিনি যে পাঁচ বছর দায়িত্বে থাকবেন, এই বিষয়গুলোর দিকে নজর রেখে শিক্ষার একটা রূপরেখা প্রণয়ন করে সামনের দিকে আগাবেন। আর শুধু শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরি করলেই হবে না, একই সঙ্গে তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী করে গড়ে তুলতে হবে।

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিললাল হোসেন বলেন, আমি চাই যিনিই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিক, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে টেকনিক্যাল এবং ভোকেশনালমুখী করা দরকার। কেননা দেশে যে পরিমাণ জনসংখ্যা, তাতে সবাইকে টারশিয়ারি অ্যাডুকেশন ব্যবস্থায় আনার কোনো প্রয়োজন নেই। কেননা, এতে করে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা বেশি। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে এমনভাবে ডেভেলপ করতে হবে, যাতে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ টেকনিকাল অ্যাডুকেশনের দিকে যাবে এবং আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জায়গাটা নিশ্চিত হবে।

মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. হাসান ফারুক বলেন, শিক্ষার সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য যুগোপযোগী শিক্ষা, শিক্ষার প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তি নির্ভর এবং গবেষণাধর্মী শিক্ষার বিকল্প নেই। অন্যথায়, গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে তারা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলায় দক্ষ হবে না। একটা দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬% জিডিপি শিক্ষা ক্ষেত্রে বরাদ্দ হওয়া প্রয়োজন। আমাদের উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে গবেষণার সংখ্যা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে গবেষণার মানোন্নয়ন বৃদ্ধিও জরুরি।

তিনি আরও বলেন, নতুন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে প্রত্যাশা উনি যেন জাতীয় বাজেটে শিক্ষাক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বরাদ্দ অর্জনে এবং প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষার প্রতিটি স্তরের শিক্ষকদের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও স্বাধীনতা শিক্ষক সমাজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, যিনি শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে আসবেন শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। পাঠ্য পুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা,অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিশ্বাসী হয়ে শিক্ষার্থী প্রভাবিত হতে পারে তেমনটি করা উচিত। শিক্ষার্থীরা যাতে কুসংস্কার মুক্ত একটি রাষ্ট্র গঠন করতে সাহায্য করতে পারে, তেমনটি করতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

এছাড়াও জবির বেশ কয়েকজন শিক্ষক বলেন, সরকারের শিক্ষা কাঠামো অনেক পরিবর্তন হওয়া উচিত। যিনি দায়িত্বে আসবেন শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক, বাস্তববাদী হতে পারে তেমনটি জন্য কাজ করা উচিত। শিক্ষার্থীরা যেন বৈশ্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত এবং সবদিক দিয়ে আত্মমর্যাদাবান হতে পারেন সেদিকে নজর দেওয়া দরকার।

নতুন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে নানা প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্য়ালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আমাদের সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির প্রতি জোর দেওয়া, যত্নবান হওয়া দরকার। এ খাতে বাজেট কম। ভবিষ্যতে যেন বাজেট আরও বৃদ্ধি করা হয়। বঙ্গবন্ধু যেভাবে শিক্ষাকে চেয়েছেন সেভাবে হওয়া উচিত। শিক্ষা ব্যবস্থার উপর সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। দেশের উন্নয়নে শিক্ষার বিকল্প কিছু নেই। এছাড়া শিক্ষানীতি, পলিসি কিংবা কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব স্টোকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করার আহ্বান জানান উপাচার্য।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রাশিদ আশকারী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বাস্তবায়ন করার স্বপ্ন রয়েছে। এই স্মার্ট বাংলাদেশকে শতভাগ সফল করতে সব চেয়ে বড় অবদান রাখবে উচ্চশিক্ষা তথা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়। সুতরাং এ ক্ষেত্রে যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পর্যায়ের অন্তত বড় মাপের শিক্ষাবিদ, তাকে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়ে আসলে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধিত হবে। এর মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে সক্রিয় সহযোগিতা সেটা অধিকতর সফল করার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. জেবউননেছা বলেন, কে শিক্ষামন্ত্রী হচ্ছেন সেটা জানা যায়নি। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী যদি আবারো থাকেন বা নতুন কেউ আসেন, আমরা সব সময় পরিবর্তনটাই চাই। একটা একটা ভালো শিক্ষাব্যবস্থা চাই, যেখানে কোন প্রাথমিক, মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক- কোনো পর্যায়ে কোনো ধরনের বৈষম্য থাকবে না। প্রত্যেকটা জায়গায় একটা সু-সমন্বয় থাকবে। বিশেষ করে প্রাথমিকের ওপর নতুন মন্ত্রী জোর দেবেন আমি সেটাই আশা করব। কারণ একটা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নির্ভর করে প্রাথমিক শিক্ষার উপর। যদিও গত এক দশকে প্রাথমিক শিক্ষার অনেক উন্নতি হয়েছে। তারপরেও নতুন শিক্ষা‌ব্যবস্থার মাধ্যমে আমরা মানসিক, সামাজিক দিক দিয়ে আরও উন্নতি আশা করি। সব সময়ই চাই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশ্বের মধ্যে অন্যতম একটি শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে থাকুক‌। তবে এখানে জবাবদিহিতার ঘাটতি রয়েছে, সেটা বাড়াতে হবে। মনিটরিং বাড়াতে হবে।

/শাকিবুল/সৈকত/লিমন/নূর/ইদুল/আহসান/মেহেদী/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়