ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

জবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

দ্বিতীয় জানাজা শেষে অবন্তিকাকে নেওয়া হবে কবরস্থানে

কুমিল্লা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৬, ১৬ মার্চ ২০২৪   আপডেট: ১৬:৫৫, ১৬ মার্চ ২০২৪
দ্বিতীয় জানাজা শেষে অবন্তিকাকে নেওয়া হবে কবরস্থানে

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে আত্মহত্যা করেছেন। ময়নাতদন্ত শেষে আজ শনিবার (১৬ মার্চ) বেলা ৩টায় তার প্রথম নামাজে জানাজা কুমিল্লা সরকারি কলেজে অনুষ্ঠিত হয়।

জানাজায় নিহতের স্বজন, স্কুল ও কলেজের শিক্ষক, সহপাঠীসহ কুমিল্লার সর্বস্তরের জনগণ অংগ্রহণ করেন। 

এসময় তারা দোষী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও নিহতের সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীকে ফাঁসী দাবি করেন। এছাড়া আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেন অবন্তিকার সহপাঠী ও শিক্ষকরা।

পরে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সেখান থেকে শহরতলীর শাসনগাছা এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে বাবার কবরের পাশেই তাকে দাফন করা হবে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শাসনগাছা জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে নিহতের দ্বিতীয় জানাজা চলছিল।

অবান্তিকাকে এক নজর দেখতে কুমিল্লা নগরীসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ তার দ্বিতীয় জানাজায় উপস্থিত হন।

নিহতের বড়ভাই অপূর্ব জানান, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে অবন্তিকার মরদেহ দুপুর ২টার আগেই বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তাকে ধোয়ানো শেষে দুপুর ৩টার দিকে কুমিল্লা সরকারি কলেজে প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। শাসনগাছায় দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে তাকে বাবার কবরের পাশেই তাকে দাফন করা হবে।

এর আগে, শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকায় নিজ বাসায় গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন ফাইরুজ অবন্তিকা। তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যাপক মৃত জামাল উদ্দিন ও তাহমিনা শবনমের মেয়ে।

মারা যাওয়ার আগে ফেসবুকে দেওয়া অবন্তিকার স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো, আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী, আর তার সহকারী হিসেবে তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। আম্মান যে আমাকে অফলাইন ও অনলাইনে থ্রেটের (হুমকি) উপর রাখতো সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও আমার লাভ হয় নাই। দ্বীন ইসলাম আমাকে নানানভাবে ভয় দেখায়, আমাকে বহিষ্কার করা ওনার জন্য হাতের ময়লার মতো ব্যাপার।

আমি জানি এখানে কোনো জাস্টিস (বিচার) পাবো না। কারণ দ্বীন ইসলামের অনেক চামচা ওর পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। এই লোককে আমি চিনতামও না। আম্মান আমাকে সেক্সুয়ালি এবিউজিভ কমেন্ট করায় আমি তার প্রতিবাদ করলে আমাকে দেখে নেওয়ার জন্য দ্বীন ইসলামের শরণাপন্ন করায়। আর দ্বীন ইসলাম আমাকে তখন প্রক্টর অফিসে একা ডেকে নারীজাতীয় গালিগালাজ করে। সেটা অনেক আগের ঘটনা হলেও সে এখনো আমাকে নানাভাবে মানহানি করতেসে বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন কথা বলে।

আর এই লোক কুমিল্লার হয়ে কুমিল্লার ছাত্র কল্যাণের তার ছেলেমেয়ের বয়সী স্টুডেন্টদের মাঝে কী পরিমাণ প্যাঁচ ইচ্ছা করে লাগায় সেটা কুমিল্লার কারো সৎ সাহস থাকলে সে স্বীকার করবে। এই লোক আমাকে আম্মানের অভিযোগ এর প্রেক্ষিতে ৭ বার প্রক্টর অফিসে ডাকায় নিয়ে ".... (প্রকাশ অযোগ্য শব্দ) তুই এই ছেলেরে থাপড়াবি বলসস কেনো? তোরে যদি এখন আমার জুতা দিয়ে মারতে মারতে তোর ছাল তুলি তোরে এখন কে বাঁচাবে? 

আফসোস এই লোক নাকি ঢাবির খুব প্রমিনেন্ট ছাত্রনেতা ছিল। একবার জেল খেটেও সে এখন জগন্নাথের প্রক্টর। সো ওর পলিটিক্যাল আর নষ্টামির হাত অনেক লম্বা না হলেও এতো কুকীর্তির পরও এভাবে বহাল তবিয়তো থাকে না এমন পোস্টে। কোথায় এই লোকের কাজ ছিল গার্ডিয়ান হওয়া, আর সো কিনা আমার জীবনটারেই শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুক্তি দিলো না। আমি উপাচার্য সাদোকা হালিম ম্যামের কাছে এই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক হিসেবে বিচার চাইলাম।

আর আমি ফাঁসি দিয়ে মরতেসি। আমার উপর দিয়ে কী গেলে আমার মতো নিজেকে এতো ভালোবাসে যে মানুষ সে মানুষ এমন কাজ করতে পারে। আমি জানি এটা কোনো সলিউশন না কিন্তু আমাকে বাঁচতে দিতেসে না বিশ্বাস করেন। আমি ফাইটার মানুষ। আমি বাঁচতে চাইছিলাম! আর পোস্ট মর্টেম করে আমার পরিবারকে ঝামেলায় ফেলবেন না। এমনিতেই বাবা এক বছর হয় নাই মারা গেছেন, আমার মা একা। ওনাকে বিব্রত করবেন না। এটা সুইসাইড না এটা মার্ডার। টেকনিক্যালি মার্ডার। আর আম্মান নামক আমার ক্লাসমেট ইভটিজারটা আমাকে এটাই বলছিল যে আমার জীবনের এমন অবস্থা করবে যাতে আমি মরা ছাড়া কোনো গতি না পাই। তাও আমি ফাইট করার চেষ্টা করসি। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সহ্য ক্ষমতার।

/রুবেল/মেহেদী/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়