ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বয়স ৪৫, গেছেন স্ত্রীও, তাতে কী! জাবির ভর্তি পরীক্ষায় লড়ছেন তকু

আহসান হাবীব, জাবি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০০:৪২, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ০০:৪৩, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
বয়স ৪৫, গেছেন স্ত্রীও, তাতে কী! জাবির ভর্তি পরীক্ষায় লড়ছেন তকু

তৌহিদুর রহমান তকু বৃহস্পতিবার জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছেন। ছবি: রাইজিংবিডি

অসুস্থতা ও নানা প্রতিকূলতাকে জয় করা অদম্য একজন মানুষ তৌহিদুর রহমান তকু। বয়স পঁয়তাল্লিশ। এই বয়স থেকে জীবনে নতুন পাতা খুলতে চান তিনি। দাঁড়াতে চান গবির শিক্ষার্থীদের পাশে।

একবুক স্বপ্ন নিয়ে তিনি এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে। তাকে দেখা গেল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ভর্তি পরীক্ষার বেঞ্চে।

২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ৪৫ বছর বয়সি লড়াকু শিক্ষার্থী তকু। 

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) কলা ও মানবিক অনুষদের অধীনে ‘সি’ ইউনিটের তৃতীয় শিফটের পরীক্ষায় বসেছিলেন তিনি।

মাঝ বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা তৌহিদুর রহমান তকুর সঙ্গে কথা হলে তিনি তার জীবনের গল্প শোনান। 

তকুর বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলায়। বাবা মৃত বজলুর রশিদ পেশায় ছিলেন একজন স্টেশন মাস্টার। কিশোর বয়সে নিম্ন মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার আগেই মস্তিষ্কের জটিল রোগে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন । ২৬-২৭ বছর অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করেন তিনি। বিয়ে করেছিলেন, সেই স্ত্রীও তাকে ছেড়ে চলে যান। সুস্থ হওয়ার পরে নওগাঁ সরকারি কে. ডি. স্কুলে ভর্তি হন। এরপর তিনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জেডিসি, দাখিল ও আলিম পাস করেন।  ্এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় লড়াই করছেন।

তৌহিদুর রহমান তকু বলেন, “অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় মস্তিষ্কের এক জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে আমি দীর্ঘদিন মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলাম। এরপর ২০১৭-২০১৮ সালের দিকে সুস্থ হয়ে আমি নতুন করে পড়াশোনা শুরু করি। ২০১৯ সালে জেডিসি, ২০২১ সালে এসএসসি/দাখিল এবং ২০২৪ সালে আলিম পাস করি। এরপর আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছি। সুস্থ হওয়ার পরে আমার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। নিজেকে আরো সুসংগঠিত ও সুনিয়ন্ত্রিত করে প্রতিষ্ঠিত নাগিরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।”

 

ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছেন তৌহিদুর রহমান তকু।


পড়া শেষে কী হতে চান- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এই বছর আমার প্রস্তুতি তেমন ভালো না। ইংরেজিতে খানিকটা দুর্বল আমি। এ বছর হয়তো চান্স পাব না। তবে যদি পাই আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে একজন শিক্ষক হতে চাই। আমি গরিব শিক্ষার্থীদের সাহায্য করতে চাই এবং তাদের স্বল্প খরচে পড়াতে চাই। দেশের পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থী যেন কম খরচে ভালো শিক্ষা পায়, সেই প্রচেষ্টা করব সারা জীবন।”

স্ত্রী চলে যাওয়ার পর মা ও বড় বোন তকুর দেখাশোনা করেন। যোগ্যতা অনুসারে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেবেন তিনি। সুযোগ পেলে বাংলা অথবা ইংরেজিতে পড়তে চান বছর পঁয়তাল্লিশের এই শিক্ষার্থী।

ঢাকা/রাসেল 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়