তুমি ছাড়া আমি আর আমি নই, মা
মো. আল আমিন মিয়া || রাইজিংবিডি.কম
আমার জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে যিনি ছায়ার মতো পাশে থেকেছেন, তিনি আমার মা। মায়ের কথা ভাবলেই হৃদয়টা কেমন করে ওঠে। মমতা, ভালোবাসা আর নিরন্তর ত্যাগের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি আমার মা।
ছোটবেলায় যখন রাতের অন্ধকারে ভয়ে কাঁপতাম, মায়ের আঁচলেই খুঁজে পেতাম নিরাপত্তার আশ্রয়। তিনি কখনো রূপকথার রাজকন্যা হয়ে গল্প শুনিয়েছেন, আবার কখনো কঠোর শিক্ষক হয়ে শেখাতে চেয়েছেন সঠিক পথের দিশা।
আমার মা শুধু একজন মানুষ নন, তিনি যেন আমার অস্তিত্বের মূল স্তম্ভ। ছোট্ট একটি ঘরে হাজারটা স্বপ্নের খোলসে মা তার নিজের চাওয়াগুলো গুছিয়ে রেখে আমার স্বপ্নগুলোকে রং করে দিয়েছেন। কখনো নিজে নতুন শাড়ি না কিনে আমার পড়ার খরচ জুগিয়েছেন। আমি জানি, মা কতবার না খেয়ে থেকেছেন, অথচ মুখে একটিবারও বলেননি। বলতেন, “আমি খেয়ে নিয়েছি, তুই খা।”
আমার সবচেয়ে বড় ব্যথার কথা বলি। একদিন পড়াশোনার জন্য শহরে চলে যেতে হয় আমাকে। মা কেঁদেছিলেন, আমি দেখিনি, শুধু শুনেছিলাম। ফোনের ওপারে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলছিলেন, “ভালো থাকিস, মা। নিজেকে খেয়াল রাখিস।”
সেই কণ্ঠে ছিল অগাধ ভালোবাসা, একাকীত্বের ব্যথা, আর নিরব ত্যাগের শব্দ। সেইদিন বুঝেছিলাম, ভালোবাসা শুধু কাছে থাকার নয়, দূরে থেকেও অনুভব করার নাম।
আজ আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখছি, কিন্তু প্রতিটি সাফল্যের পেছনে যে মানুষটার অদৃশ্য ছায়া কাজ করছে, তিনি আমার মা। মায়ের সেই ক্লান্ত দু’চোখ, কুঁচকে যাওয়া হাত আর ধবধবে হাসি— সবই আমার জীবনের প্রেরণা।
আমার মা শুধুই মা নন, তিনি আমার প্রথম বন্ধু, প্রথম শিক্ষক, প্রথম আশ্রয়। আমি তার কাছে ঋণী; শুধু জন্মের জন্য নয়, বেঁচে থাকার মানে শেখানোর জন্যও। মা, তোমাকে ভালোবাসি— এ শুধু একটি বাক্য নয়, এ আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সত্য। তোমার আদর, তোমার সংগ্রাম আর তোমার ভালোবাসায় আমি গড়ে উঠেছি, আর তাতেই আমি গর্বিত, আমি ধন্য। তুমি ছাড়া আমি আর আমি নই, মা।
লেখক: শিক্ষার্থী, তৃতীয় বর্ষ, মার্কেটিং বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর
ঢাকা/মেহেদী