ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা আমার মা

পূজা ভদ্র || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৯, ১১ মে ২০২৫   আপডেট: ১২:৩৩, ১১ মে ২০২৫
বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা আমার মা

আমার মা আমার কাছে পৃথিবীর সবথেকে শ্রেষ্ঠ মানুষ। পৃথিবীতে এই একজন মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি সবসময়ই সাহস, আত্মবিশ্বাস খুঁজে পাই। ছোটবেলা থেকেই যেকোনো কিছুতেই আমি যখন হতাশ হয়ে যাই, তখন আমার মা আমাকে সবসময় সাহস যোগায়।

আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। মাকে সবসময়ই দেখেছি সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে চিন্তা করতে দেখেছি, কিন্তু নিজেকে নিয়ে চিন্তা তার বরাবরই নেই।

আরো পড়ুন:

২০১৭ সালে যখন বাবার ক্যান্সার ধরা পড়ে, তখন থেকে বুঝতে পেরেছি, আমার মা আমাদের জন্য ঠিক কতটা স্ট্রাগল করে। এত খারাপ সময়েও আমার মা কিভাবে যে সংসারটা আগলিয়ে রেখেছিলেন, তা আমি দেখেছি।

বাবা ২০২২ মারা যায়, এর মাঝের পাঁচটি বছর আমি এই মানুষটাকে একটা রাতও ঠিকভাবে ঘুমোতে দেখিনি । আমাদের ছোট ছোট বিষয়গুলোও কখনো মায়ের চোখ এড়াতে পারেনি। ছোটবেলা থেকে মা আমাকে আগলিয়ে রেখেছে। তাই বলে যে, মা খুব বিলাসবহুল জীবনযাপন করতে শিখিয়েছেন, এমন না। আমার মা সবসময়ই বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে শিখিয়েছেন। যেমনটা আমার মা মানিয়ে নেন।

আমার মাকে কখনো খুব বেশি দামী শাড়ী-গহনা পরতে দেখিনি। আমার পড়াশোনার খরচ চালাতে হবে এটা ভেবে তিনি টাকা জমিয়ে রাখতেন। ইচ্ছে ছিল ডাক্তারি পড়ার, কিন্তু মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ হয়নি। অনেক মানুষের মুখে শুনেছি, ‘মেয়েকে এত পড়িয়ে কি হবে, বিয়ে দিয়ে দাও।’ কিন্তু আমার মা এই কথাগুলোর আঁচ কখনোই আমার গায়ে লাগতে দেননি।

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার সময়ে যখন পড়ার টেবিলে বসে পড়তাম- ভয় হত, কান্না করতাম। মা সবসময়ই বলতেন তুই পারবি, আমার বিশ্বাস। মা সবসময়ই আত্মবিশ্বাস রাখতে বলতেন। বাড়ি থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলাম, আত্মীয় স্বজন সবাই বলেছিলেন, ‘মেয়ে মানুষ এতদূরে পড়াশোনা করতে যেতে হবে না।’ আমি শুধু আমার মাকে পাশে পেয়েছিলাম। মা বলেছিলেন, ‘আমার মেয়েকে আমি এতদূরেই পড়তে পাঠাব।’

বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসে ফেরার সময় বুঝতে পারি, মায়ের খুব কষ্ট হয়। কিন্তু আমাকে মা কখনো বুঝতে দেন না, আমার সামনে কান্না করে না। আমার চোখে আমার মা সবসময়ই শক্তিশালী; মায়েরা বোধহয় এমনই হয়। জীবনের সব খারাপ পরিস্থিতিতে কাউকে পাশে না পেলেও মাকে সবসময়ই আমি পাশে পেয়েছি। গর্ব করে এতটুকু বলতে পারি, আমার ভালো বা খারাপ সময় পার করে আসা, জীবনের সব বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়া- সবকিছু মায়ের থেকে শেখা।

মাঝে মাঝে আমার বন্ধুরা বলে, ‘তুই এতটা স্ট্রং কি করে থাকতে পারিস?’ আমি সত্যিই স্ট্রং, কারণ আমার পেছনে আমার মা আছে। তিনি আমাকে সবসময় সাহস যোগান। মাকে কখনো মুখ ফুটে বলা হয়নি কতটা ভালোবাসি মাকে। সত্যিই আমার মাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।

(লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়