ঢাকা     সোমবার   ২৩ জুন ২০২৫ ||  আষাঢ় ৯ ১৪৩২

মায়ের মতো যত্ন কেউ করে না 

খ্যাইসাঅং মারমা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৭, ১১ মে ২০২৫   আপডেট: ১৩:১৪, ১১ মে ২০২৫
মায়ের মতো যত্ন কেউ করে না 

মা নামক শব্দটি কিভাবে লিখে প্রকাশ করব, আমি ভাষা খুঁজে পাই না। মাকে নিয়ে যায়ই লিখতে যাই না কেন, বারবার মনে হচ্ছে কোথাও কমতি হয়েছে। মায়ের মত মমতাময়ী, স্নেহপরায়ণ, ধৈর্যশীলা এই পৃথিবীতে আর কেউ আছে কিনা আমি জানি না।

মা নামক শব্দটি শুনলে বুকের ভেতরে কেমন জানি অনুভূত হয়। নিজের শখের কানের দুল বন্ধক রেখে যে মানুষটা আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন করার জন্য টাকা দিয়েছিলেন, তিনি হলেন আমার মা। এ রকম হাজার হাজার উদাহরণ দেওয়া যাবে।

এই মা নামক মানুষটির ঋণ কখনো শোধ করতে পারবো কিনা জানি না। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কাছে আমি এইটুকু চাই যে, আমি যেন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পর সারাজীবন মায়ের পাশে থেকে মায়ের মুখে সুন্দর হাসিটা ফোটাতে পারি।

আরো পড়ুন:

মা কেবল জন্মদাত্রী নন, তিনিই আমাদের পৃথিবী। তার শাসনের মাঝে ছিল সীমাহীন ভালোবাসা, তার বারণের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল সুরক্ষা। আজ তিনি আমার পাশে নেই, অথচ চারপাশের পৃথিবী ঠিকই চলছে, মানুষজন ঠিকই হাসছে, কথাবার্তা বলছে। কিন্তু আমার কাছে সবকিছুই ফাঁকা ফাঁকা লাগে। আগে যে মুখগুলো ছিল চেনা, সেগুলো আজ কেমন যেন অচেনা মনে হয়।

মা পাশে ছিলেন বলেই অভিযোগ ছিল, অভিমান ছিল, আবদার ছিল; আজ কিছুই নেই। যেন আমি দিশেহারা এক যাত্রী, যার গন্তব্য জানা নেই। আগে মায়ের স্নেহমাখা চোখের দৃষ্টিতে যেভাবে নিজেকে নিরাপদ মনে হত, আজ চারপাশের ভিড়েও আমি নিঃসঙ্গ।

মা, তুমি ছাড়া আমি সত্যিই অসহায় হয়ে গেছি। তোমার ছায়াটুকু আজ যদি ফিরে পেতাম, তোমার সেই স্নেহমাখা কণ্ঠে একবার যদি শুনতে পারতাম- ‘কিছু খেয়েছিস?’ তাহলে হয়তো এই বিশাল শূন্যতার মধ্যে একটু হলেও আশ্রয় খুঁজে পেতাম।

মা ছাড়া কেউ কোনোদিনও বলেনি- কী খাবি? কী রান্না করবো? মায়েরা যে বলেন, আমি ম'ইরা গেলে কেউ চার আনার দামও দেবে না, এইটা মনে হয় সত্যিই। অনেক ভেবে দেখলাম, সারা দুনিয়ায় রাগ দেখানোর জায়গাও ওই একটাই; মা।

টাকা লাগবে, মাকে ফোন; জুতা ছিড়ে গেছে, মাকে ফোন; মন খারাপ, মাকে ফোন; মেজাজ খারাপ; মাকে ফোন; চশমা হারিয়ে গেছে, মাকে ফোন- ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমার মাঝে মাঝে মনে হয় উপরওয়ালা তো স্বরূপে দুনিয়ায় বিরাজ করে না, তাই আমার জগতে তার হয়ে আমার মাকে পাঠিয়েছেন। যখনই মায়ের মুখের দিকে তাকাই, বুঝতে পারি মানুষটা অনেক বেশিকিছু আশা করে। কিন্তু আমি এখনো তোমায় কিছুই দিতে পারিনি, মা।

একসময় বিপদের সময় পাশে মা ছিল। যতই ঝড়, দুঃখ আসুক, মায়ের একটু কথা যেন ওষুধের মতো কাজ করত। কিন্তু এখন সেই আশ্রয় নেই, নেই সেই সান্ত্বনার কোল, কষ্টগুলো জমে থাকে বুকের ভেতর, বলতে গেলেই ফিরে আসে শূন্যতা।

মা পাশে ছিল বলে দুঃখও যেন হালকা মনে হত, এখন দুঃখটা শুধু নিজের; বোঝার কেউ নেই। সময়ের সঙ্গে সবকিছু বদলায়, মানুষ বড় হয়। কিন্তু মায়ের অভাবটা কোনোদিনও পূরণ হয় না।

অন্তরালে কিছু কথা গোমড়ে মরে! মা, তোমায় খুব মনে পড়ে। আমি যদি সারাজীবন এ রকম ছোটই থাকতে পারতাম, যতটা ছোট থাকলে সবসময় মায়ের কাছে থাকা যায়। মা হলো পৃথিবীতে বাঁচার অক্সিজেন, মা ছাড়া আমাদের পৃথিবীটা অচল।

হয়তো ওই জ্বলে থাকা তারা আমার মা। চেয়ে দেখো এখন- কত বড় হয়ে গেছি আমি, অনেক বড়, অট্টালিকার বাসিন্দা। কিন্তু সেই ছোট্ট ঘরের সেই মুহূর্তগুলো সবচেয়ে বেশি মিস করি, মা। কতদিন তোমার স্পর্শ পাই না। আমার আয়ু থেকে কিছু আয়ু যোগ হোক মায়ের সঙ্গে, তবুও তুমি বেঁচে থাক যুগ যুগ ধরে। তোমার সঙ্গে কি আরেকবার ছোটবেলায় যাওয়া যাবে? বড় হয়ে বুঝলাম তোমার মতো যত্ন কেউ করে না।

(লেখক: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়)

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়