ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

মুখ দিয়ে লিখেই স্নাতকোত্তর সম্পন্ন চবি শিক্ষার্থীর

এম. মিজানুর রহমান, চবি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০৭, ১৫ মে ২০২৫   আপডেট: ২২:২১, ১৫ মে ২০২৫
মুখ দিয়ে লিখেই স্নাতকোত্তর সম্পন্ন চবি শিক্ষার্থীর

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অদম্য শিক্ষার্থী বাহার উদ্দিন রায়হান

নেই দুটি হাত, মুখ দিয়ে লিখেই প্রথম শ্রেণীতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অদম্য শিক্ষার্থী বাহার উদ্দিন রায়হান।

বুধবার (১৪ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠিত পঞ্চম সমাবর্তনে গ্র্যাজুয়েশনের সনদ গ্রহণ করেছেন তিনি। সমাবর্তনের গাউন-টুপি পরে উচ্ছ্বসিত রায়হান। তার দুর্দান্ত ইচ্ছাশক্তিতে মুগ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 

আরো পড়ুন:

বাহার উদ্দিন রায়হান বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। তিনি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের মৃত বশির উদ্দিনের একমাত্র সন্তান। গত বছরে বিয়ের পিঁড়িতেও বসেছেন তিনি। মা এবং স্ত্রী মিলেই এখন তার পরিবার। বর্তমানে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি প্রজেক্টে কর্মরত তিনি।

২০০৪ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে থাকাবস্থায় ট্রান্সফরমারের বৈদ্যুতিক তারের স্পর্শে ঝলসে যায় রায়হানের দুই হাত। পাঁচদিনের মাথায় তার এক হাত এবং আরেক হাতের কনুই পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়। তবে তিনি থেমে যাননি।

দুর্ঘটনার পর মুখ দিয়ে লেখা আয়ত্ত করেন। আত্মবিশ্বাসী রায়হান ২০০৮ সাল থেকে নতুন করে শুরু করেন পড়াশোনা। হাত হারিয়ে দমে না যাওয়া সেই অদম্য মানুষটি চবি থেকে প্রথম শ্রেণীতে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। বিষয়টি সবার মধ্যে উচ্ছ্বাস বয়ে এনেছে। রায়হান যেন হয়ে উঠছেন সবার অনুপ্রেরণার বাতিঘর।

২০২৩ সালের ১৫ মে অদম্য ইচ্ছাশক্তি দেখে রায়হানকে চাকরি দেয় আইসিটি মন্ত্রণালয়। আইসিটি বিভাগের এনহ্যান্সিং ডিজিটাল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইকোনমি (ইডিজিই) প্রকল্পের সমন্বয়ক পদে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে মাত্র সাত মাসের মাথায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গড়িমসিতে চাকরি হারান তিনি।


 
রাইজিংবিডি ডটকমকে রায়হান বলেন, “ছোটবেলায় আকস্মিক দুর্ঘটনায় আমি ভেঙে পড়িনি। দ্রুতই মুখ দিয়ে লেখার অভ্যাস আয়ত্ত করে নেই। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কঠিন সংগ্রামময় সময় পার করেছি। পরীক্ষায় বেশিরভাগ সময় মুখ দিয়ে লিখেছি, কখনো কখনো শ্রুতিলেখকের সাহায্য নিয়েছি।”

তিনি বলেন, “যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে মনোবল চাঙ্গা রাখতে হবে, ভেঙে পড়া যাবে না। আমার মতো মানুষ যদি মনোবল অটুট রাখতে পারে, তবে অন্যরা কেন পারবে না? নিজের জীবনকে সাজানোর জন্য সবাইকে মনোবল ধরে রাখতে হবে।”

সরকারের কাছে কোনো আবেদন করেছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কোনো আবেদন নেই। এখন মোটামুটি ভালোই চলছি। সামনে একটা এনজিওতে যাওয়ার ইচ্ছা করছি। আমি নিজ যোগ্যতায় আমার অবস্থান নিশ্চিত করতে চাই।”

ঢাকা/মেহেদী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়