মেয়েকে ঢাবিতে পড়ানোর স্বপ্ন পাহাড়ি মায়ের
চবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

মেয়েকে পরীক্ষার হলে পাঠিয়ে অপেক্ষা করছেন মিয়ইচিং মারমা
মিয়ইচিং মারমা, চল্লিশোর্ধ এক পাহাড়ি নারী। থাকেন রাঙামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলা সদর ইউনিয়নের তাইতংপাড়ায়। প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দা হলেও থেমে নেই তার স্বপ্ন। শত প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে মেয়েকে পড়াতে চান দেশ সেরা বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি)।
শনিবার (১৭ মে) ঢাবির ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা বিকাল ৩টা থেকে শুরু হয়ে সোয়া ৪টা পর্যন্ত চলে।
মেয়েকে পরীক্ষার হলে পাঠিয়ে চবির বুদ্ধিজীবী চত্বরের একপাশে অপেক্ষা করছিলেন মা মিয়ইচিং মারমা। এ সময় রাইজিংবিডি ডটকমকে তার স্বপ্নের কথা জানান।
মিয়ইচিং মারমার মেয়ের নাম ঞোসিনওয়াং মারমা। তিনি ঢাকার একটি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পাস করেছেন। এসএসসি দিয়েছিলেন নিজ উপজেলা থেকেই। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ইতোমধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইউনিটে তার মেধাক্রম ৩২৫তম।
আর চবিতে মেধাক্রম দূরে হওয়ায় বিভাগ পাওয়ার সম্ভাবনাও কম। সর্বশেষ ঢাবির ‘সি’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি। এ পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি পড়বেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে; এমন স্বপ্নই মা মিয়ইচিং মারমার।
দুই বোন আর মা-বাবা মিলে ঞোসিনওয়াংয়ের পরিবার। বাবা মংপ্রুচিং মারমা পাহাড়ে জুমচাষ করেন। এতে মোটামুটি চলছে তাদের পরিবার। তবে সমতলের মানুষদের চেয়ে তাদের অবস্থা অনেকটা ভিন্ন। সুবিধাবঞ্চিত পাহাড়ি জনপদে কঠোর পরিশ্রম করেই চলছে তাদের জীবনযাত্রা। তবে মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করানো আর উন্নত জীবনের স্বপ্ন বাবা-মার।
মিয়ইচিং মারমা বলেন, “মেয়েকে পরীক্ষার হলে পাঠিয়ে এখানে অপেক্ষা করছি। সকাল ৯টায় আমার ভাইসহ তিনজন চবিতে এসেছি। বিকেলে আবার বাড়িতে চলে যাব। মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে- এমনটা আমাদের চাওয়া। জানি না পরে কি হয়!”
পাহাড়ে থেকেও এমন স্বপ্নের পেছনের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আসলে মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করা, ভালো মানুষ হওয়া এবং দেশের সেবা করার জন্য আমার এমন স্বপ্ন। আমার মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে- সেটা তো বড় আনন্দের বিষয়।”
তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে মেয়েকে বিসিএস ক্যাডার বানানোর স্বপ্ন। বিসিএস দিয়ে সরকারি কোনো কর্মকর্তা হয়ে দেশের সেবা করবে সে। জানি না, আমার ইচ্ছা পূরণ হবে কি-না; তবে এমনটাই প্রত্যাশা করি। আমাদের জন্য প্রার্থনা করবেন।”
ঢাকা/মিজান/মেহেদী