ঢাকা     বুধবার   ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ২ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ইবিতে অন্যের ভরসায় চলছে তদন্ত প্রক্রিয়া 

ইবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২৫, ২৪ মে ২০২৫  
ইবিতে অন্যের ভরসায় চলছে তদন্ত প্রক্রিয়া 

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) সাম্প্রতিক সময়ে গঠিত একাধিক তদন্ত কমিটি নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ ও সন্দেহ দানা বেধেছে।

অভিযোগ উঠেছে, এসব কমিটি নিজেরা কোনো অনুসন্ধান না চালিয়ে কেবল গণবিজ্ঞপ্তি ও দপ্তরগুলোতে চিঠি ইস্যুর মাধ্যমে তথ্য আহ্বান করছে। কেউ তথ্য না দিলে তারা কোনো তৎপরতা দেখাচ্ছে না। ফলে অনেকেই একে পরগাছার মতো এক নির্ভরশীল তদন্ত প্রক্রিয়া বলেই অভিহিত করছেন শিক্ষার্থী।

আরো পড়ুন:

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিগত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অনুসন্ধানে এবং ২৪ জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানবিরোধী ভূমিকা চিহ্নিতকরণে দুইটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধান কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎকার না করে কেবল অফিসিয়াল পত্রালাপ এবং অতীতের নথি ঘেঁটেই প্রতিবেদন প্রস্তুতের অভিযোগ উঠেছে।

গত ১৬ মার্চ গঠিত হয় নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির তদন্ত কমিটি। আহ্বায়ক করা হয় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ফারুকুজ্জামান খানকে। এর সদস্যরা হলেন অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক রশিদুজ্জামান, অধ্যাপক আব্দুল বারী এবং সদস্য সচিব মাছুদুল হক তালুকদার। কমিটিকে ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল।

একই বছরের ১৫ মার্চ গঠিত হয় ২৪ জুলাইয়ের আন্দোলনবিরোধী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভূমিকা চিহ্নিত করার কমিটি। আহ্বায়ক করা হয় আল-হাদিস বিভাগের অধ্যাপক আকতার হোসেনকে। এর সদস্যরা হলেন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক আব্দুল গফুর গাজী, অধ্যাপক মিন্নাতুল করিম এবং সদস্য সচিব মিজানুর রহমান মজুমদার। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা ৬০ কার্যদিবস করা হয়।

তবে দুই কমিটির কেউই এখনো মাঠ পর্যায়ে বাস্তব অনুসন্ধানে নামেননি। তারা গণবিজ্ঞপ্তি ও চিঠির মাধ্যমে তথ্য আহ্বান করলেও আশানুরূপ সাড়া পাননি বলে জানিয়েছেন।

অতীতে অনেক কমিটি যেভাবে কেবল প্রাপ্ত তথ্য যাচাই না করেই প্রতিবেদন দাখিল করেছে, এবারও সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকতে পারে বলে ধারণা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি, তদন্ত প্রক্রিয়া যদি সত্যিই কার্যকর ও বিশ্বাসযোগ্য করতে হয়, তাহলে কেবল দাপ্তরিক চিঠিপত্র নয়, প্রয়োজন অনুসন্ধানী দৃষ্টি, সরেজমিনে তৎপরতা এবং প্রাপ্ত তথ্যের নিরপেক্ষ মূল্যায়ন।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আকতার হোসেন বলেন, “গণবিজ্ঞপ্তির পর তথ্য না পাওয়ায় আবার বিজ্ঞপ্তি দেব। পাশাপাশি সাংবাদিক, সংগঠনসহ বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার পরিকল্পনা আছে।”

অন্যদিকে অধ্যাপক ফারুকুজ্জামান বলেন, “৬৮টি জায়গায় চিঠি দিয়েছি, কিন্তু সাড়া পাইনি। ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগও আসেনি। এখনো আমরা পর্যালোচনায় নামিনি। কারণ সময় দীর্ঘ এবং সদস্যদের ব্যস্ততা রয়েছে। কাজের জন্য আলাদা কক্ষ চাইলে তাও সময়মতো পাইনি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, নামমাত্র তদন্ত নয়, প্রকৃত অনুসন্ধান হোক। তদন্ত মানেই শুধু চিঠি পাঠিয়ে বসে থাকা নয়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন, সাক্ষাৎকার গ্রহণ, নথিপত্র যাচাই ও নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ জরুরি। তা না হলে তদন্ত প্রশ্নবিদ্ধ ও প্রহসনে পরিণত হবে।

তারা আরো জানান, ইবিতে বারবার এমন কমিটি হয়েছে, যারা কাজের নামে ফাইলের হাত বদল করেছে। সত্য উদঘাটনের বদলে অভিযোগ ঝুলিয়ে রেখেছে।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “তদন্ত কাজে কমিটিকে প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রদানে ইতোমধ্যে রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেওয়া আছে। তদন্তের জন্য আলাদা করে কোনো কক্ষ বা অফিসের ব্যবস্থা করা জরুরি না। তবে প্রয়োজন হলে তথ্য পর্যালোচনার জন্য প্রশাসন ভবনে কক্ষ দেওয়া সম্ভব না হলেও বিকল্প উপায় দেখব।”

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়