ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ফুলের রাজ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

তানিম তানভীর, ইবি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪৯, ২৫ মে ২০২৫  
ফুলের রাজ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

গ্রীষ্মের খরতাপে প্রকৃতি যখন ক্লান্ত-শ্রান্ত, তখন কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) হয়ে উঠেছে বিচিত্র রঙের আলোকমালায় মোড়া এক প্রান্তর। এপ্রিল থেকে মে মাস জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি পথ, মোড়, ভবন আর চত্বরে ফুটে থাকে কৃষ্ণচূড়া, কনকচূড়া, জারুল, সোনালুসহ বৈচিত্রময় বাহারী ফুল।

কৃষ্ণচূড়ার আগুনরাঙা শাখা, কনকচূড়ার সোনালি মায়া, জারুলের বেগুনি বর্ণচ্ছটা আর সোনালুর ঝুলন্ত কণ্ঠরথ- সব মিলিয়ে এক অনবদ্য শোভা বর্ণিল করে তোলে প্রতিটি প্রভাত। ক্যাম্পাস জুড়ে ছড়িয়ে দেয় এক অনির্বচনীয় প্রশান্তি।

আরো পড়ুন:

শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যাচ্ছেন, লাইব্রেরিতে পড়ছেন, হাঁটছেন বা বসে গল্প করছেন- এই বিচিত্র ফুলগুলো তাদের সঙ্গ দেয় নীরবে। বিষণ্ন দুপুরে, ক্লান্ত বিকেল বা একাকী সন্ধ্যা-রাতে এই ফুলগুলো হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের প্রেরণার উৎস, দর্শনার্থীদের বিস্ময় আর প্রকৃতির সঙ্গে তৈরি হয় এক গভীর আত্মিক বন্ধন।

রুক্ষ-শুষ্ক মৌসুমে রক্তিম ফুল কৃষ্ণচূড়া যেন জুলাই শহীদদের রক্তের প্রতিচ্ছবি। অদম্য সাহসের প্রতিধ্বনি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রশাসন ভবন, টিএসসিসির মূল ফটক, স্মৃতিসৌধ, রবীন্দ্র-নজরুল ও মীর মোশাররফ হোসেন ভবন, আবাসিক হলসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে। কৃষ্ণচূড়ার নরম ছায়া, ডালে দুলতে থাকা লাল তুলতুলে পাপড়ি আর হালকা বাতাস যেন গ্রীষ্মের ক্লান্তিতে এনে দেয় এক প্রশান্তি।

ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী ফখরুল ইসলাম বলেন, “কৃষ্ণচূড়া আমাদের ক্যাম্পাসের অন্যতম চিহ্ন। রঙে যেমন উজ্জ্বল, তেমনি প্রাণে উদ্দীপ্ত। এই ফুল শুধু প্রকৃতিকে নয়, আমাদের মনকেও রাঙিয়ে তোলে। শীতল পরশে আমাদের ক্লান্তি দূর করে নবউদ্যমে জাগিয়ে তোলে এই রক্তরাঙা ফুল।”

প্রকৃতিকে নয়নাভিরাম রূপে সাজিয়ে তুলতে সোনালু ফুলের জুড়ি নেই। পরিবেশ ও প্রকৃতির শোভা বর্ধনে সোনালু দারুণ এক নিসর্গ মায়া এনে দিয়েছে। দীর্ঘ মঞ্জুরিতে ঝুলে থাকা পাঁচ পাঁপড়ি বিশিষ্ট সোনালু ফুলের থোকা অনেকটা অলংকারের মতো। সোনালু ফুলের অলংকারে ক্যাম্পাসের ডায়না চত্বরে নিয়মিতই অলংকৃত হচ্ছেন শিক্ষার্থীসহ দর্শনার্থীরা। স্নিগ্ধ রঙ, সুশৃঙ্খল সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে নারী শিক্ষার্থীরা ফুলটি কানে ঝুলিয়ে রাখতে বেশ পছন্দ করেন। মাঝে মাঝে প্রেমিকরা ঠিক কবির ভাষায় প্রস্তাব দেয়- ‘ওগো মেয়ে ফুলেশ্বরী, ফুল নেবে কি ফুল?/হাতে দিও হলুদ গাঁদা, কানে গুঁজো সোনালু-দুল।’

আইন বিভাগের ছাত্রী তাসমিয়া বলেন, “সোনালু গাছের নিচে দাঁড়ালে মনে হয় যেন রূপকথার কোনো দরবারে দাঁড়িয়ে আছি।”

বেগুনি ও হালকা নীল রঙের জারুল ফুলগুলো যেন গ্রীষ্মের মাঝে এক শীতল বার্তা নিয়ে আসে। বেগুনি রঙের ফুল দেখে কিছুটা কোমলতা অনুভব করা যায়। এই ফুলে নেই কৃষ্ণচূড়ার উগ্রতা, নেই কনকচূড়ার দীপ্তি, তবু সে মন কাড়ে নিজের সৌম্য গাম্ভীর্যে। গাছগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ, লাইব্রেরি চত্বর, আবাসিক হলসহ জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে আছে শান্ত ও সমহিমায়।

আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহিম বলেন, “হঠাৎ বৃষ্টিতে জারুল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগে। ফুলগুলো ভিজে গিয়ে অন্যরকম এক দৃশ্য সৃষ্টি করে। সেই দৃশ্য ক্যামেরায় নয়, মনে ধরে রাখি।”

সোনালি দিনের আহ্বানে কৃষ্ণচূড়ার সঙ্গে যেন গোপন প্রতিযোগিতা চলে কনকচূড়ার। দূর থেকে দেখলে হলুদ মনে হলেও কনকচূড়া ফুলের রঙ উজ্জ্বল কমলা আর সোনালীর মিশেল। হলুদাভ কমলা রঙের এই ফুলটি গ্রীষ্মের সূর্যের মতোই দীপ্ত, পাতা গাঢ় সবুজ, ফলের রঙ তামাটে।

সবমিলিয়ে ফুল ফুটলে এই গাছের সারিকে প্রাকৃতিক ক্যানভাস মনে হয়। যে ক্যানভাসে সবুজ, হলুদ আর তামাটে রঙের আধিক্য বেশি। গাঢ় সবুজ নিবিড় সন্নিবেশিত পাতার ওপর যখন হলুদ রঙের প্রলেপের মতো ফুলগুলোর প্রচুর প্রস্ফুটন ঘটে। তখন মনে হয় রোদ ঝলমলে গ্রীষ্মের দিনে রুক্ষ-তপ্ত শহরের বুকে কেউ শান্তির পরশ বুলিয়ে দিয়েছে।

ইংরেজি বিভাগের জাহিদ হাসান বলেন, “কনকচূড়ার দিকে তাকালে মনে হয় প্রকৃতি যেন নিজেই রঙ তুলিতে আকাশের নিচে ছবি এঁকে গেছে। এই ফুলগুলো গ্রীষ্মকেও সহনীয় করে তোলে। এর উজ্জল রঙে বিষণ্ন মনও প্রফুল্ল হয়ে ওঠে।”

উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭৫ একর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। যেখানে প্রতিটি ঋতুতে বাহারি ফুলের সমারোহ ক্যাম্পাসকে করে তোলে নয়নাভিরাম। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাদের শিক্ষার্থীসহ বাইরের দর্শনার্থীদেরও আকৃষ্ট করে, যা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।”

তিনি বলেন, “আমাদের ক্যাম্পাসকে আরো প্রাণবন্ত, সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও শিক্ষাবান্ধব গড়ে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং ভবিষ্যতে আরো কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। এই সৌন্দর্য রক্ষা ও উন্নয়নের জন্য সবার সহযোগিতা কাম্য।”

ঢাকা/মেহেদী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়