ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ছাত্রী হলের সান্ধ্য আইন নিয়ে প্রচারিত সংবাদ ভিত্তিহীন: চবি প্রক্টর

চবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৩২, ২ আগস্ট ২০২৫   আপডেট: ২১:৩২, ২ আগস্ট ২০২৫
ছাত্রী হলের সান্ধ্য আইন নিয়ে প্রচারিত সংবাদ ভিত্তিহীন: চবি প্রক্টর

ফাইল ফটো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্রী হলে সান্ধ্য আইন জারি এবং রাত ১০টার মধ্যে হলে প্রবেশ না করলে সিট বাতিলের হুমকি দেওয়া নিয়ে প্রচারিত সংবাদকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয়েছে। 

শনিবার (২ আগস্ট) রাইজিংবিডি ডটকমকে দেওয়া এক বক্তব্যে চবির সহকারী প্রক্টর নাজমুল হোসাইন এ দাবি করেন।

আরো পড়ুন:

গত বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু আবাসিক ছাত্রী অভিযোগ করেন, রাত ১০টার পর হলের বাইরে অবস্থান করলে তাদের সিট বাতিলের হুমকি দিয়েছেন সহকারী প্রক্টর নাজমুল হোসাইন।

এ ঘটনাকে ‘সান্ধ্য আইন’ আখ্যা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

গণমাধ্যম প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ওই ছাত্রীদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেডিস ঝুপড়ি, মেয়েদের হলের সামনে প্রক্টরের গাড়ি এসে মাইকিং এবং টহল দিয়ে গেছে। এ সময় সহকারী প্রক্টর নাজমুল হোসাইন বলেছেন, রাত ১০টা ১টা মিনিটের পর কেউ হলে ঢুকলে তার সিট বাতিল করে দেবে। একটা স্বাধীন দেশে কেনো শুধু নারীদের জন্য এমন নিয়ম? এটা স্পষ্টভাবে নারীবিদ্বেষী। আমরা আগেও দেখেছি, এই প্রশাসন এমন আচরণে জড়িত। এবারো যদি তারা স্বৈরাচারী আচরণ চালিয়ে যায়, আমরা কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলব।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আমি লেডিস ঝুপড়ি থেকে বিপ্লবী উদ্যানের সামনে দিয়ে হলে যাচ্ছিলাম। তখন প্রক্টরিয়াল টিম গাড়ি থেকে নেমে উচ্চস্বরে বলে, ‘সব মেয়েরা যেন রাত ১০টার মধ্যে হলে ফেরে। ১০টা ১ মিনিটেও কেউ বাইরে থাকলে তার সিট ক্যান্সেল করে দেওয়া হবে।’ এরপর তারা বিপ্লবী উদ্যানে বসা মেয়েদেরও উঠিয়ে দেন।”

প্রকাশিত এসব সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে সহকারী প্রক্টর নাজমুল হোসাইন বলেন, “প্রথমেই যে স্থানের কথা বলা হয়েছে, সেটা সঠিক না। প্রক্টরিয়াল বডির নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে ওইদিনও আমরা রাত সাড়ে ৯টার দিকে বের হয়ে ফরহাদ হল, কলা ঝুপড়ি এবং শহিদ মিনারে যাই। এরপর বোটানিক্যাল গার্ডেন ও বায়োলজিকাল ফ্যাকাল্টির দিকে যাই রাত ১০টা ১০ মিনিটের দিকে। কিন্তু প্রতিবেদনে বক্তব্য অনুযায়ী, তাদের সঙ্গে ১০টার আগে কথা বলি; যা সময়ের হিসাবে মিথ্যা।”

তিনি বলেন, “বোটানিক্যাল গার্ডেন ও বায়োলজিকাল ফ্যাকাল্টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং ঝুকিপূর্ণ জায়গাগুলোর মাঝে অন্যতম। মূলত সেখানে কিছু শিক্ষার্থীকে দেখে পরামর্শের সুরে আবাসিক হলে বা আলোযুক্ত স্থানে যেতে বলেছি। তাদের সিট বাতিল করার এমন কোনো কথা বলা বা হুমকি দেওয়া হয়নি। তাদের সিট বাতিলের দায়িত্ব আমার নয়।”

তিনি আরো বলেন, “সান্ধ্য আইন বলে যেটা প্রচার করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে এর কোনো ভিত্তিই নেই। লেডিস ঝুপড়ি এলাকায় গভীর রাত পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা থাকে। আমরা মেয়েদের হলগুলোতে সাধারণত টহল দেই না এবং সেদিনও হলের সামনে টহল দেওয়া হয়নি। আর মাইকিং করার যে কথাটা বলা হয়েছে, সেটা সম্পুর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা।”

“আমরা নির্দিষ্ট কিছু অন্ধকারাচ্ছন্ন এলাকা যেখানে মাঝেমধ্যেই গাঁজার আসর বসে, আমরা ওইসব এলাকা থেকেই মূলত কিছু শিক্ষার্থীকে দ্রুত হলে ফিরে যাওয়ার কথা বলেছি। এ ঘটনায় গণমাধ্যমে যেটা প্রচার করা হয়েছে, সেটা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। গণমাধ্যমের কাছে আমরা পেশাদারিত্ব প্রত্যাশা করি, মিথ্যা সংবাদ নয়,” যুক্ত করেন সহকারী প্রক্টর।

নাজমুল হোসাইন বলেন, “প্রয়োজন না থাকলে শিক্ষার্থীদের তাদের হলে রাত ১০টার মধ্যে (যা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত হলের ভিতর প্রবেশের সর্বোচ্চ সময়) প্রবেশের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ১০টার মধ্যে ছাত্রীদের হলে প্রবেশের এই সাধারণ নির্দেশনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সব সময়েই প্রচলিত ছিল। কারো ফিরতে দেরি হলে প্রবেশের সময় হলগেটের খাতায় একটা স্বাক্ষর করতে হয়; যা সাধারণ একটি বিষয়। এদিকে বন্ধ ক্যাম্পাস হওয়ায় সতর্কতার স্বার্থেই তাদের বিষয়টি বলা হয়েছিল।”

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর এমএইচ আরিফ বলেন, “এ ব্যাপারে আগে থেকেই নির্দেশনা ছিল কিছু নির্দিষ্ট অনিরাপদ এলাকার জন্য। যেখানে গাঁজা বা মাদক সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের অভিযোগ আছে। শহীদ মিনার, লাইব্রেরি বা জিরো পয়েন্টে শিক্ষার্থীরা থাকলে কোনো সমস্যা নেই।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে সর্বদা প্রস্তুত। রাত ১০টার পর হলে ফেরার ব্যাপারে মূলত নিরাপত্তাজনিত দিক বিবেচনা করেই সহকারী প্রক্টর সাধারণভাবে পরামর্শ দিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কঠিন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট কোনো সান্ধ্য আইনও নেই।”

ঢাকা/মিজান/মেহেদী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়