ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

গবির বাস মেরামতে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে গড়িমসি

গবি সংবাদদাতা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২৭, ৭ আগস্ট ২০২৫  
গবির বাস মেরামতে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে গড়িমসি

ফাইল ফটো

ঢাকার সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) একটি বাস মেরামতের ব্যয় সংক্রান্ত অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তবে তদন্ত কমিটি গঠনের পর ২ মাস পার হলেও প্রতিবেদন জমা দেওয়া নিয়ে গড়িমসির অভিযোগ তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।

অভিযোগপত্র অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ভূমি) মো. মোজাহিদ খান এবং উপ-সহকারী প্রকৌশলী এইচএম তাইফ-উর আকবর এই ঘটনায় জড়িত। তবে অভিযুক্ত এ দুই কর্মকর্তা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

আরো পড়ুন:

ঘটনার সূত্রপাত ২০২৪ সালের অক্টোবরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টোর কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান বাস মেরামতের বিল যাচাই করতে গিয়ে পণ্যের দামে অসঙ্গতি দেখতে পান। পরবর্তীতে তিনি নিজ উদ্যোগে স্থানীয় দোকান থেকে নতুন কোটেশন সংগ্রহ করে বিলের সঙ্গে অমিল পান। সবমিলিয়ে তিনি প্রায় ৪০ হাজার টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পান।

২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর মতিউর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। তবে অভিযোগ জমা দেওয়ার দীর্ঘ ৬ মাস পর গত ৫ মে অভিযুক্ত মোজাহিদ খান তার অফিসে গিয়ে তাকে গালাগালি ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

ভুক্তভোগী মতিউর রহমান বলেন, “দামের গড়মিল দেখে আমি অভিযোগ করি। এরপর মোজাহিদ ভাই আমার অফিসে এসে আমাকে গালাগালি করেন, মারতে আসেন। আমি নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে তার হাত চেপে ধরি।”

তদন্ত কমিটির মাধ্যমে সঠিক বিচারের আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “তদন্ত চলছে। আমি চাই সঠিক সিদ্ধান্ত আসুক। যদি অন্যায় হয়, তাহলে আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে অভিযোগ জানাব।”

এ ঘটনার পর গত ৮ মে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির সভাপতি করা হয় উপ-রেজিস্ট্রার আবু মুহাম্মাদ মুকাম্মেলকে। কমিটির সদস্য সচিব অর্থ বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. আহসানউল্লাহ এবং সদস্য বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবু রায়হানকে করা হয়।

কমিটিকে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ থাকলেও এখনো তা জমা পড়েনি। ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে ২ মাসেরও বেশি সময়। এতে তদন্তের স্বচ্ছতা ও অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে মোজাহিদ খান রাইজিংবিডিকে বলেন, “বাসের মেরামতের প্রাথমিক বাজেটের বাইরে অতিরিক্ত যন্ত্রাংশের প্রয়োজন পড়ে। উপাচার্য স্যারের নির্দেশে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করিয়েছি। হিসাব দেখেছেন অন্য একজন। মতিউর ভাইয়ের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেটা ছিল ভুল বোঝাবুঝি। পরে আমি তার কাছে ক্ষমাও চেয়েছি।”

তিনি দাবি করেন, “আমি ২৬ বছর ধরে এখানে কাজ করছি। এর আগে আমার বিরুদ্ধে কখনো এমন অভিযোগ ওঠেনি।”

অন্যদিকে, উপ-সহকারী প্রকৌশলী এইচ এম তাইফ-উর আকবর বলেন, “বাজারে গিয়ে পণ্যের দাম যাচাই করে কম দামের ফ্যান কিনেছি। সব কাগজপত্র প্রস্তুত আছে। মারধরের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি শুধু দুজনকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলাম।”

তদন্ত কমিটির সভাপতি আবু মুহাম্মাদ মুকাম্মেল বলেন, “বাজেট, এস্টিমেট ও ক্রয়ের অডিট চলছে। স্টোর কমিটির সঙ্গেও বসার পরিকল্পনা রয়েছে। ঈদের আগেই প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু সম্ভব হয়নি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, “আমরা উভয় পক্ষের বক্তব্য পেয়েছি। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/সানজিদা/মেহেদী

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়