‘জামায়াতের রাজনীতি শুরু হয় জিয়াউর রহমানের নীতির কারণে’
ঢাবি প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে ডাকুস আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন। ছবি: রাইজিংবিডি
“শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, আর জামায়াতের রাজনীতিও শুরু হয়েছিল জিয়াউর রহমানের নীতির কারণে,” এমনটিই মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন।
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী অডিটোরিয়ামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) আয়োজনে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের তাৎপর্য স্মরণে ‘জনতার নয়া রাজনীতির আকাঙ্ক্ষা: বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ শিরোনামে আলোচনা সভায় এ কথা বলেন মাহাদী আমিন।
তিনি বলেন, “শহীদ জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, বাগ্স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গার্মেন্টস শিল্পের প্রতিষ্ঠা, বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি, বেসরকারিকরণ, বিদেশি বিনিয়োগ আনা- সবই হয়েছিল তার হাত ধরে।”
সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের দেশে ইসলামি মূল্যবোধকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করে মাহাদী আমিন বলেন, “ধর্মভিত্তিক রাজনীতি না করলেও বিএনপি কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের দেশে ইসলামের আলোকে ইসলাম ধর্মের খেদমতে সবসময় নিবেদিত প্রাণ ছিল। পররাষ্ট্রনীতির অংশ হিসেবে আমরা নতজানু পররাষ্ট্রনীতি থেকে বেরিয়ে ভারতীয় আধিপত্যবাদকে ভেঙে পশ্চিমা দেশগুলোর মতো ভাষা ব্যবহার শুরু করেছিলাম “
তিনি বলেন, “৭ই নভেম্বর সিপাহী-জনতা এক হয়ে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ এক হয়ে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেছিলেন একটা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে, এমন একটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করব যেখানে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব থাকবে, গণতন্ত্র থাকবে, রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকবে।”
মাহাদী আমিন বলেন, “আমাদের আদর্শই যদি হয় সবার আগে বাংলাদেশের স্বার্থ, সার্বভৌমত্ব- তাহলে আমরা সবাই এক। আমরা আগামীর বাংলাদেশে বাংলাদেশপন্থি রাজনীতি করতে চাই, যে রাজনীতি জিয়াউর রহমান করেছিলেন, যে রাজনীতি বেগম খালেদা জিয়া করেছিলেন, যে রাজনীতি তারেক রহমান করছেন।”
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল হক জুবায়ের বলেন, “জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নেই ৭ নভেম্বর এসেছিল। শেখ মুজিব স্বাধীনতার পরে সবচেয়ে ঘৃণিত মানুষে পরিণত হয়েছিলেন। যার ফলে ৭৫ এসেছিল, ৭৭ এসেছিল।”
“শেখ মুজিব ঘৃণার পাত্রে পরিণত হলেন আর যিনি ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন তিনি রাজনীতিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন। তিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান জনগণের আকাঙ্ক্ষা বুঝতে পেরেছিলেন,” মন্তব্য করেন জুবায়ের।
বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর বলেন, “অনেকেই বলে যে জেনারেল জিয়া ক্ষমতা দখল করেছিলেন। কিন্তু না, জনগণ তাকে সিংহাসনে বসিয়েছিলেন।”
“মুক্তিযুদ্ধে যারা আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়েছিল তারা কেউই যুদ্ধে ফ্রন্ট লাইনে ছিল না। তারা সব সময় আমোদ-প্রমোদে ব্যস্ত ছিল,” বলেন ফজলে এলাহী।
তিনি বলেন, “আমাদের ওপর একটি মিথ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, আমরা একটি ছোট রাষ্ট্র। কিন্তু আমরা জনগণের দিক থেকে অষ্টম বৃহত্তম রাষ্ট্র। পাকিস্তানের অর্থনীতি এত ছোট কিন্তু তারা সামরিকভাবে কত শক্তিশালী। কিন্তু আমাদেরকে শক্তিশালী হতে দেয়নি।”
আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, “বাংলাদেশে যদি শীর্ষ দুটি অভ্যুত্থানকে ধরা হয়, তাহলে তা হচ্ছে ৭ নভেম্বর ও চব্বিশের আন্দোলন। আমাদের শত শত বছরের আজাদির যে লড়াই, তা এই দুই আন্দোলনে খুঁজে পাওয়া সম্ভব।”
“ইতিহাসের পরম্পরা বারবার প্রমাণ করেছে যে, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দলের সংজ্ঞায় পড়ে না। তারা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। আওয়ামী লীগের জন্ম আজন্ম পাপ এবং আমাদের নিরাপত্তার হুমকি। কারণ সে ২৩শে জুন পলাশি দিবসে দলটি জন্ম নিয়েছে,” অভিযোগ তোলেন তিনি।
ব্যারিস্টার ফুয়াদের অভিযোগ, “শেখ মুজিব ১৩-১৪ বছর ধরে যে জেল খেটেছেন, আজাদির লড়াই করেছেন, তারপর তিনি স্বাধীন বাংলাদেশকে ভারতের নিকট বিক্রি করে দিয়েছেন পরতে পরতে। আর এটাই তার জীবনের ট্রাজেডি। তিনি জিন্নাহ কিংবা গান্ধী হতে পারতেন কিন্তু তিনি মীর জাফর হয়ে গেছেন।”
ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, “গত ৫৪ বছর ৭ই নভেম্বর যেভাবে পাঠ হয়েছে, তাতে কিছু ভুল রয়েছে, সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। ৭ই নভেম্বর শুধু সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নয়, বরং নাগরিকরা যে রাষ্ট্রের মালিকানা পাচ্ছে না, তা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই সিপাহী-জনতা এক হয়ে বিপ্লব করেছিল।”
সভাপতির বক্তব্যে ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, “আজকের বাংলাদেশ জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশ। জিয়াউর রহমানকে যারা দানব আকারে হাজির করেছিল, সেই কালচারাল ফ্যাসিস্টরা আজ বিএনপির বড় বন্ধু সাজার চেষ্টা করছে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ থেকে ফ্যাসিবাদের শিকড় সমূলে উৎপাটন করতে হবে। বিএনপি-জামায়াতসহ সকল দল মিলে ঐক্য গঠন করতে হবে, না হলে ৫৪ বছর পর যে সুযোগ এসেছে, তা হাতছাড়া হয়ে যাবে।”
ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক জুমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি আব্দুল মান্নান ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার জসিম উদ্দিন হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক শেখ তানভীর বারী হামিম।
ঢাকা/সৌরভ/রাসেল