ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

এলডিসি থেকে উত্তরণ: শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা অব্যাহত রাখতে হবে

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১৯, ২০ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ২১:০৪, ২০ ডিসেম্বর ২০২০
এলডিসি থেকে উত্তরণ: শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা অব্যাহত রাখতে হবে

প্রতীকী ছবি

অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও সরকারের প্রতিনিধিরা বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণ বাংলাদেশের জন্য সম্মানজনক। তবে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে রপ্তানি বাণিজ্যে। পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা আর থাকবে না। এ কারণে রপ্তানি আয় বর্তমানের চেয়ে অন্তত ১৪ শতাংশ কমে যেতে পারে। তাই এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা অব্যাহত রাখার ওপর জোর দিতে হবে। প্রধান রপ্তানি বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং অন্যান্য দেশ ও সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি চালিয়ে যেতে হবে।

রোববার (২০ ডিসেম্বর) ‘এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন তারা।

শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা অব্যাহত রাখতে আঞ্চলিক জোট, বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আলোচকরা। বিভিন্ন দেশ ও জোটের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) কিংবা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করার কথাও বলেছেন তারা। এছাড়া, বিভিন্ন জোটে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ খুঁজতে হবে। এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপ্যাসিফিক পার্টনারশিপ( টিপিপি) এবং চীনের নেতৃত্বাধীন রিজিওনাল কমপ্রিহেনসিভ ইকোনোমিক পার্টনারশিপের (আরসিইপি) উদাহরণ দিয়েছেন তারা।

অর্থনীতি বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), গবেষণা সংস্থা  রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপেমন্ট (র‌্যাপিড) ও এশিয়া ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এ ওয়েবিনারের আয়োজন করেছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ও বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন র‌্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. এম  এ রাজ্জাক। ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভীর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশে এশিয়া ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি কাজী ফয়সল বিন সিরাজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ। ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশেদুল ইসলাম।

অর্থনীতিতে কোভিড-১৯ এর প্রভাব নিয়ে ইআরএফের সিরিজ আলোচনার অংশ হিসেবে এ ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়। এটি ছিল সংগঠনটির তৃতীয় আয়োজন। এতে ইআরএফের সদস্যরাও অংশ নেন।

প্রসঙ্গত, আগামী ২২ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট কমিটি (সিডিপি) এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করবে। ধারণা করা হচ্ছে, এলডিসি থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের পক্ষে সুপারিশ পাওয়া যাবে। এই সুপারিশের পর ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিশ্ববাণিজ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা অব্যাহত থাকবে। ২৮ জাতির জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) আরও চার বছর অর্থাৎ ২০২৭ সাল পর্যন্ত এ সুবিধা থাকবে। এর পর এ সুবিধা আর থাকবে না। তখন রপ্তানি অন্তত ১০ শতাংশ কমবে। বর্তমানের তুলনায় রপ্তানি কমবে ৭০০ কোটি ডলারের মতো। অন্যন্য সুবিধাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রেও কিছুটা অসুবিধায় পড়বে বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আছে সরকারের। দীর্ঘদিন এলডিসির মধ্যে পড়ে থাকা দেশের জন্য সম্মানের বিষয় নয়। এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে বাণিজ্য বিঘ্নিত হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতপক্ষে কী হবে, সেটা ২০২৪ সালেই বোঝা যাবে।’

তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখতে ইইউর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া সুযোগ আছে। ব্রেক্সিট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাজ্যের সঙ্গেও এ আলোচনা করা যাবে। একই সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও বাণিজ্য বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। কারণ, আমদানি-রপ্তানিতে সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ের সুযোগ আছে প্রতিবেশীদেরে সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে।’

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, ‘এলডিসি নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তবে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে।’ ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করার জন্য বিডার বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি।

বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘এলডিসি উত্তরণের পর আরও কয়েক বছর শুল্কমুক্ত রপ্তানিসুবিধা পাওয়ার বিষয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে। ইইউ-তে জিএসপি প্লাস সুবিধা নিয়ে আলোচনা চলছে। এলডিসিভুক্ত দেশগুলো নিয়ে সম্মিলিতভাবেও চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। ভুটানের সঙ্গে পিটিএ হয়েছে। নেপালের সঙ্গে হবে আগামী মাসে। এরকম ১১টি দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে।

মূল প্রবন্ধে ড. এমএ  রাজ্জাক বলেন, ‘মোট রপ্তানির ৭৫ শতাংশ এখন শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় আছে। এলডিসি থেকে উত্তরণে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা হারানোর পাশাপাশি পণ্যে প্রণোদনা দেওয়া যাবে না। শুল্ক বাড়বে গড়ে ১৪ শতাংশ। সবচেয়ে বড় বাজার ইইউতে বাড়বে ৯ শতাংশ, কানাডায় ১৭, চীনে ১৬ দশমিক ২ ও জাপানে ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। ফলে রপ্তানি কমে যেতে পারে ৭০০ কোটি ডলারের মতো।’

সবচেয়ে বড় রপ্তানিবাজার ইইউ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভিয়েতনামের সঙ্গে ইইউর এফটিএ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশটির শুল্ক কমছে ইইউতে। ২০২৭ সাল নাগাদ ভিয়েতনামের পণ্য যাবে বিনা শুল্কে। যেখানে বাংলাদেশের পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে। তখন কঠিন অবস্থায় পড়বে বাংলাদেশ।’ শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা আরও তিন বছর প্রলম্বিত করার আলোচনা শুরুর পরমার্শ দেন তিনি। আগামী ২০২৩ সালে ইইউ-তে জিএসপি পর্যালোচনা হবে। সেই আলোচনায় ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হতে হবে বাংলাদেশকে। এলডিসি থেকে উত্তরণের অভিঘাত মোকাবিলায় আরও কয়েকটি সুপারিশ করেন তিনি।

ড. রাজ্জাক রপ্তানির স্বার্থে আমদানি নীতি সংস্কার, জিডিপি অনুপাতে কর বাড়ানোসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেন।

ঢাকা/হাসনাত/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়