লকডাউনেও জমজমাট গুলিস্তান
মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম
কথায় আছে, রাজধানীর গুলিস্তান কখনো ঘুমোয় না। যখন পুরো ঢাকা ঘুমিয়ে পড়ে তখনো জেগে থাকে গুলিস্তান। রিকশার টুংটাং বেলের আওয়াজ, যানবাহনের অব্যাহত হর্ণ, মানুষের কোলাহল ২৪ ঘন্টাই সচল রাখে গুলিস্তানকে।
দেখা গেলো, করোনায় যখন দেশ লকডাউনে তখনো গুলিস্তানে উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে কেনাকাটা-খাওয়াদাওয়া।
শনিবার (১০ এপ্রিল) ছিল লকডাউনের ৬ষ্ঠ দিন। দেখা গেল, সন্ধ্যার পর পুরো ঢাকায় নিস্তব্ধতা নেমে এলেও জেগে আছে গুলিস্তান। এ যেন উৎসবের এক ছোট্ট শহর। কি নেই? না থাকাটাই যেন আশ্চর্যের। হাতের নাগালে সবকিছু। হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে হকার চিৎকারে কান পাতা দায়। ফুটপাত ছেড়েও পুরো সড়কটাই যেন তাদের দখলে।
কেউ বিক্রি করছেন পরিহিত কাপড়, কেউবা নতুন-পুরাতন টাকার পসরা, কেউ তরমুজ কেটে ডালার ওপর সাজিয়ে রেখেছেন। সারি সারি ঝুড়ি নিয়ে আপেল, কমলা, খেজুর, নাশপাতি বিক্রি করছেন অনেকে। আবার দেখা মেলে শত শত ভিক্ষুকেরও। গায়ে গায়ে একজন আরেকজনের সঙ্গে। এ যেন মিলন মেলা। স্বাভাবিকভাবে হাঁটার সুযোগটুকুও নাই। রিকশা, অটোরিকশা আর ঘোড়ার গাড়ির জটলায় যেন থমকে আছে সময়।
ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ৮ টা। গুলিস্তান মাজারের আশেপাশে মিট মিট করে জ্বলছে কিছু মোমবাতি। আর মাজার ঘিরে ভক্তদের আনাগোনাও বেশ। খোলা আকাশের নীচে হরেক রকম পসরা দেখে কারো কারো মন্তব্য, গুলিস্তানে করোনার স্বাস্থ্যবিধির ছিটেফোঁটাও নেই।
নারী-পুরুষ, কিশোর-যুবক সবাই ব্যস্ত। কেউ কিনছেন আবার কেউবা বিক্রি করছেন। অনেকে এসেছেন দল বেঁধে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের সংখ্যাই বেশি।
ঘুরে দেখা গেছে, জিনিসপত্রের দাম তুলনামূলকভাবে কিছুটা সহনীয়। যেমন- এক কেজি আপেল অন্য স্থানে ১২০ টাকা। গুলিস্তানে সেই আপেল ৮০/৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সামনে রমজান, তাই খেজুর এসেছে ব্যাপক। অন্যদিকে গরমের হালকা পোশাকের কাটতি বেশ। স্যান্ডেল এবং জুতা বিক্রিও জমজমাট। সবমিলিয়ে করোনাকে পেছনে ফেলে যেন উৎসবে মেতেছে গুলিস্তান।
সন্ধ্যার পরও দোকান বন্ধ না করার বিষয়ে জানতে চাইলে একজন দোকানি বলেন, যতক্ষণ সম্ভব দোকান খোলা রাখার চেষ্টা করি। ৮টা-সাড়ে ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আর কাস্টমারদের ভিড় বেশি থাকায় দোকান বন্ধ করতে লেট হয়ে যায়।
জামাল হোসেন নামে এক ক্রেতা বললেন, অন্যান্য জায়গার তুলনায় গুলিস্তানে সবকিছুর দাম একটু কম। তাই এখানে কেনাকাটা করতে এসেছি।
করোনার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, গরীব মানুষের করোনা হয় না।
ঢাকা/মামুন/টিপু
আরো পড়ুন