ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

বাজেট বাস্তবায়নের হার কম, সুদ খাতের ব্যয় বাড়ছে

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৭, ১৯ এপ্রিল ২০২১  
বাজেট বাস্তবায়নের হার কম, সুদ খাতের ব্যয় বাড়ছে

করোনার কারণে বাজেট বাস্তবায়নের অগ্রগতি কম। কিন্তু অর্থবছরের বাজেটে সুদ খাতের ব্যয় বাড়ছে।  চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজস্ব বাজেটে সুদ খাতে যেখানে ১৮.১ শতাংশ অর্থ ব্যয় করার কথা সেখানে ৬ মাসে সুদ খাতে ব্যয় মোট বাজেট ব্যয়ের ২৮ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ব্যয় বহুল খাত থেকে বাজেট ঘাটতির অর্থসংস্থানের কারণে বাজেটের ওপর সুদের চাপ বাড়ছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুসায়ী, বাজেটের সামগ্রিক বাস্তবায়ন পরিস্থিতির অবনতির প্রভাব রাজস্ব বাজেটেও পড়েছে।  রাজস্ব খাতে সারা বছর যে বাজেট বরাদ্দ ছিল তার ৩০.১ শতাংশ খরচ হয়েছে। কিছু কিছু খাতে গড় ব্যয়ের চেয়ে অনেক কম খরচ হলেও সুদ খাতে সর্বোচ্চ ব্যয় হয়েছে বছরের প্রথমার্ধে।  সুদ খাতে এ সময়ের জন্য বরাদ্দের সর্বোচ্চ ৪৬.৩ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। এরপর রয়েছে শিক্ষা খাত ৪২.৩ শতাংশ, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ৩৫.৪ শতাংশ, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেরা ৩৫ শতাংশ, সংস্কৃতি বিনোদন ও ধর্ম ৩২.৪ শতাংশ, প্রতিরক্ষা খাত ৩১.৫ শতাংশ, স্বাস্থ্যে ৩০.৮ শতাংশ ও এলজিআরডি ২৭.২ শতাংশ। অন্য খাতগুলোতে বাস্তবায়নের অবস্থা বেশ খারাপ।

চলতি অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের সময় এর ব্যয় বরাদ্দ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে হয়েছিল। তবে নীতি-নির্ধারকরা আশা প্রকাশ করেছিলেন যে, করোনার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে অর্থনীতি দ্রুত গতি লাভ করবে। বাস্তবে সেটি আর হয়নি। এমনকি করোনার কারণে স্বাস্থ্য খাতের ব্যয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব লাভ করার কথা থাকলেও বাস্তবে এ খাতে বছরের মূল বাজেটে ৪.৭ শতাংশ বরাদ্দের বিপরীতে ৫ শতাংশ ব্যয় হয়।  আর ৬ মাসে যে গড় পরিচালন ব্যয় হয় তার সমপর্যায়ে আটকে থাকে স্বাস্থ্য খাতের ব্যয়। অথচ সুদ খাতের ব্যয় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

জানা গেছে, চলতি বছরের মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয়ের লক্ষ্য ছিল ১৮.১ শতাংশ।  ৬ মাসে ব্যয় হয়েছে ২৮.২ শতাংশ।  অর্থবছর শেষে তা আরো বেড়ে যেতে পারে।  আগের বছরও সুদ খাতের ব্যয় ২২ শতাংশ ছাড়িয়েছিল।  অথচ বছর পাঁচেক আগে রাজস্ব বাজেটের ১১-১২ শতাংশ সুদ খাতে ব্যয় হতো। জনপ্রশাসন খাতেও বরাদ্দের চেয়ে অর্থবছরের প্রথমার্ধে ব্যয় বেড়েছে। মূল বাজেটে যেখানে সাড়ে ১২ শতাংশ বরাদ্দ ছিল সেখানে ছয় মাসের মোট রাজস্ব ব্যয়ের ১৮ শতাংশ ব্যয় হয়েছে এই খাতে।  করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও এ খাতে ব্যয় বেড়েছে।  বছরের মূল বাজেটের সাড়ে ১২ শতাংশ রাজস্ব বরাদ্দের বিপরীতে ছয় মাসে ১৮ শতাংশ ব্যয় হয়েছে।  প্রতিরক্ষা খাতে মূল বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৮.২ শতাংশ।  ছয় মাসে ব্যয় হয়েছে ১০ শতাংশ।  জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তায় ৬.৮ শতাংশ বরাদ্দ থাকলেও ব্যয় হয়েছে ৮ শতাংশ।

বাজেট বাস্তবায়ন পরিস্থিতি রাজস্ব বাজেটের চেয়েও উন্নয়ন বাজেটের অধিকতর হতাশাজনক। যেখানে ছয় মাসের মূল বরাদ্দের ৩০ শতাংশ পরিচালন ব্যয় হয়েছে।  সেখানে উন্নয়ন বরাদ্দ ব্যয় হয়েছে ১৬.১৯ শতাংশ। এ অবস্থা চললে বছর শেষে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের অবস্থা আগের বছরের চেয়েও খারাপ হবে। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে উন্নয়ন বরাদ্দ ৯ হাজার কোটি টাকা কমানোর পরও বরাদ্দের মাত্র ৭৯.৫ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়।  এবার সংশোধিত বাজেটে বড় রকমের সঙ্কোচন করা না হলে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশের বেশি উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়ন হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হাসনাত/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ