ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

চাকরির বিধি সংশোধন: ডিএসই-সিএসইতে নিয়োগ-ছাঁটাই বন্ধ

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৪, ১১ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১১:২৬, ১১ জুলাই ২০২১
চাকরির বিধি সংশোধন: ডিএসই-সিএসইতে নিয়োগ-ছাঁটাই বন্ধ

ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই-সিএসই) সার্ভিস রেগুলেশন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ইতিমধ্যে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের সার্ভিস রেগুলেশন (চাকরি বিধি) সংশোধনের জন্য বিএসইসির গঠিত কমিটি নতুন প্রস্তাব দিয়েছে। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, ডিএসই ও সিএসইর সার্ভিস রেগুলেশন একই রকম করতে চায় কমিশন। তাই সার্ভিস রেগুলেশন চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত বিএসইসির অনুমতি ছাড়া ডিএসই ও সিএসইর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ, ছাঁটাই এবং পদোন্নতি না দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, প্রস্তাবিত সার্ভিস রেগুলেশনে নিয়োগ, ছাঁটাই ও পদোন্নতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কী কী পরিবর্তন আনা প্রয়োজন সে বিষয়ে ডিএসই ও সিএসইর কাছে জানতে চেয়েছে বিএসইসি। পাশাপাশি ডিএসই ও সিএসইকে কমিটি গঠন করার নির্দেশও দিয়েছে বিএসইসি। আর গঠিত কমিটিকে এক মাসের মধ্যে সার্ভিস রেগুলেশন সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিএসইসিতে দাখিল করতে বলা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

গত ৮ জুলাই এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ডিএসই ও সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠিয়েছে বিএসইসি।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ১৭ জুন বিএসইসিতে চিঠি পাঠিয়েছিল ডিএসই ও সিএসই। উভয় প্রতিষ্ঠানের প্রেরিত চিঠিতে সার্ভিস রেগুলেশন সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় বাড়ানোর আবেদন জানানো হয়। ডিএসই ও সিএসইর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক দিক বিবেচনা করে কমিশন প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আরও ৩০ কার্যদিবস সময় বাড়িয়েছে। বর্ধিত এ সময়ের মধ্যে ডিএসই ও সিএসইকে সার্ভিস রেগুলেশন প্রণয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিএসইসিতে দাখিল করতে হবে। 

এছাড়া, চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বিদ্যমান চাকুরি প্রবিধানমালার অধীনে স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়োগ, ছাঁটাই ও পদোন্নতি সম্পর্কিত কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত বিএসইসির অনুমতি ছাড়া না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।

এর আগে গত ১৫ জুন বিএসইসির পাঠানো চিঠিতে ডিএসই ও সিএসইর সার্ভিস রেগুলেশন সংশোধনের বিষয়ে জানায় বিএসইসি। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ৬(৩) ধারা অনুযায়ী একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়। গঠিত কমিটিকে বিএসইসির প্রস্তাবিত সার্ভিস রেগুলেশনে কোনো সংশোধনের প্রয়োজন কি-না সে বিষয়ে প্রতিদেন দাখিল করতে বলা হয়। বিশেষ করে বিদ্যমান সার্ভিস রেগুলেশনের সঙ্গে প্রস্তাবিত সার্ভিস রেগুলেশনে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়োগ, ছাঁটাই ও পদোন্নতি সম্পর্কিত বিষয়গুলো অধিক যাচাই-বাছাই করে দেখতে বলা হয়।

এর আগে ২০১৮ সালের ডিএসই ও সিএসইর সার্ভিস রেগুলেশন প্রণয়নের জন্য এক্সচেঞ্জস ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন অ্যাক্ট, ২০১৩ এবং এক্সচেঞ্জস ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিম অনুযায়ী একটি কমিটি গঠন করে বিএসইসি। আর ডিএসই ও সিএসইর সার্ভিস রেগুলেশনের নিয়োগ, ছাঁটাই ও পদোন্নতির বিষয়ে পরিবর্তন আনার জন্য প্রস্তাব দেয় বিএসইসির ওই গঠিত কমিটি। এরই ধরাবাহিকতায় ডিএসই ও সিএসইর সার্ভিস রেগুলেশন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ডিএসই ও সিএসই সূত্রে জানা গেছে, ব্যবস্থাপনা পর্যায়ের কর্মীদের সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনার জন্য গত বছরের জুন মাসে ডিএসই একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রতিবেদনে, ডিএসইতে প্রয়োজনের তুলনায় ৭০-৮০ জন বেশি কর্মী রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংখ্যা অনেক বেশি বলে প্রতিবেদনের উঠে আসে। এছাড়া এক্সচেঞ্জের ‘সি’ লেভেলের কর্মকর্তাদের (শীর্ষ কর্মকর্তাদের) অত্যধিক বেতন-ভাতার বিষয়টিও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ডিএসইর পর্ষদ ব্যয় নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২ জুন ১০ জন অধিক কর্মীকে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে ছাঁটাই করেছে ডিএসই। ফলে ছাঁটাই আতঙ্কে দিন পার করছে ডিএসইর কর্মীরা।

এদিকে, সিএসইতে এখন পর্যন্ত ছাঁটাই প্রক্রিয়া শুরু না হলেও কর্মীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি ছাঁটাই না করে বিনা করণে কর্মীদের অন্যত্র স্থানান্তর করছে। যাতে বাধ্য হয়ে কর্মীরা পদত্যাগ করেন। বিভিন্ন গ্রুপিংয়ের কারণে কাজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. আব্দুল মতিন পাটোয়ারী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ডিএসইর সার্ভিস রেগুলেশন প্রণয়নের বিষয়ে কাজ কাজ চলছে। এ জন্য ডিএসই একটি ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। গঠিত কমিটি সংশোধিত সার্ভিস রেগুলেশন কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন সেসব বিষয় নিয়ে কাজ করছে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বিএসইসি আমাদেরকে এক মাস সময় দিয়েছে।’

এদিক, সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন-উর-রশিদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি মোবাইল ফোন ধরেননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএসইর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বিএসইসির সার্ভিস রেগুলেশনের বিষয়ে চিঠি এসেছে। তবে বিষয়টি সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সরাসরি দেখভালো করছেন। চিঠিতে সার্ভিস রেগুলেশন চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত বিএসইসির অনুমতি ছাড়া নিয়োগ, ছাঁটাই ও পদোন্নতি দিতে বারণ করা হয়েছে।’

ঢাকা/এনটি/ইভা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়